নেপোলিয়নের সামরিক জীবন
নেপোলিয়ন - সংগৃহীত
ফরাসি বীর নেপোলিয়ন ফরাসি মূল ভূখণ্ডের আর্টিলারি অফিসার হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন প্রথম ফরাসি প্রজাতন্ত্রের সময়ে। তিনি সাফল্যের সাথে অভিযান চালান ফ্রান্স-বিরোধী প্রথম ও দ্বিতীয় কোয়ালিশনের বিরুদ্ধে। প্রথম কোয়ালিশনের যুদ্ধ চলে ১৭৯২-১৭৯৭ সময়ে। এ যুদ্ধসময়ে ইউরোপীয় দেশগুলো ব্যাপকভাবে উদ্যোগী হয় ফরাসি বিপ্লব সংযত করতে। ১৭৯২ সালের ২০ এপ্রিলে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর প্রুশিয়া অস্ট্রিয়ার পক্ষে যোগ দেয়। এ সময় অস্ট্রিয়ার জোটে ছিল রোম সাম্রাজ্য, প্রুশিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স রয়েলিস্টস, স্পেন, পর্তুগাল, সার্দিনিয়া, নেপলস ও সিসিলি, অন্যান্য ইতালীয় রাজ্য, ওসমানীয় সাম্রাজ্য ও ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্র। আর ফরাসি প্রজাতন্ত্রের জোটে ছিল ফ্র্যাঞ্চ স্যাটেলাইট স্টেটস ও পোলিশ সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় কোয়ালিশনের যুদ্ধ চলে ১৭৯৮-১৮০২ সময়ে।
এ সময়ে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার নেতৃত্বে ইউরোপীয় রাজন্যবর্গ দ্বিতীয়বার উদ্যোগ নেন বিপ্লবী ফ্রান্সকে সংযত কিংবা অপসারণ করতে। এরা ফ্রান্সের পূর্ববর্তী সামরিক বিজয়কে ম্লান করে দিতে নয়া কোয়ালিশন গঠন করে। এ সময়ে এক জোটে ছিল অস্ট্রিয়া, গ্রেট ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স রয়েলিস্টস,পর্তুগাল, দুই সিসিলি ও ওসমানীয় সাম্রাজ্য। প্রতিপক্ষ জোটে ছিল ফরাসি প্রজাতন্ত্র, স্পেন, পোলিশ সেনাবাহিনী, ডেনমার্ক-নরওয়ে ফ্র্যাঞ্চ কায়েন্ট রিপাবলিক, বাটাভিয়ান প্রজাতন্ত্র, হেলভেটিক প্রজাতন্ত্র, সিসালপাইন প্রজাতন্ত্র, রোমান প্রজাতন্ত্র ও পার্থেনোপিয়ান প্রজাতন্ত্র।
সে যা-ই হোক, ১৭৯৯ সালে তিনি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রান্সের ফার্স্ট কনসাল হিসেবে। এর পাঁচ বছর পর ১৮০৪ সালে ফ্রান্সের সিনেট তাকে সম্রাট ঘোষণা করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে নেপোলিয়নের সময় ফরাসি সাম্রাজ্য বেশ কিছু দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। নেপোলিয়নকে কয়েকটি যুদ্ধ করতে হয় ইউরোপের বড় বড় শক্তির সাথে। এগুলো ইতিহাসে নেপোলিয়নের যুদ্ধ নামে পরিচিত। একনাগাড়ে কয়েকটি যুদ্ধে জয়ের পর ফ্রান্স ইউরোপে প্রভাবশালী অবস্থানে উঠে আসে। এ সময় নেপোলিয়ন ব্যাপক জোট গড়ে তুলে বন্ধুবান্ধব আর পরিবারের সদস্যদের নিয়োজিত করেন ইউরোপর দেশগুলোকে কায়েন্ট স্টেট হিসেবে শাসন করার জন্য। নেপোলিয়নের এই বিজয় অভিযান আজকের দিনেও গোটা দুনিয়ার মিলিটারি অ্যাকাডেমিগুলোতে পাঠের বিষয় করে তোলা হয়েছে।
১৮১২ সালে রাশিয়ার ফ্রান্সে অনুপ্রবেশের ঘটনা ইতিহাসে চিহ্নিত নেপোলিয়নের ভাগ্যের মোড় ঘুরে যাওয়ার ঘটনা হিসেবে। রাশিয়ার এ অভিযানে তার গ্রেট আর্মি বা গ্র্যান্ড আর্মি ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়, যার পুনর্গঠন তার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। ১৮১৩ সালে ষষ্ঠ কোয়ালিশন লিপজিগে তার বাহিনীকে পরাজিত করে। পরের বছর এই কোয়ালিশন ফ্রান্সে ঢুকে পড়ে এবং নেপোলিয়নকে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য করে। সেই সাথে তাকে নির্বাসন দেয়া হয় ইতালির ভূমধ্যসাগর তীরের এলবা দ্বীপে।
এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এলবা দ্বীপ থেকে পালিয়ে গিয়ে আবার তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসেন। কিন্তু ১৮১৫ সালের জুনে ওয়াটারলোর যুদ্ধে পরাজিত হন। ব্রিটিশরা সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠিয়ে তাকে আটকে রাখে। সেখানে তিনি জীবনের শেষ ছয়টি বছর কাটিয়ে মারা যান। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মতে, তিনি পাকস্থলীর ক্যান্সারে মারা যান। তবে সুইডেনের দাঁতের চিকিৎসক ও বিষ বিশেষজ্ঞ স্টেন ফরশুফভুদ ও অন্যান্য বিজ্ঞানী বরাবর বলে আসছেন, নেপোলিয়নকে আর্সেনিক বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়।