ভারতে জেরুসালেমমুখী সুপ্রাচীন মসজিদ
ভারতে জেরুসালেমমুখী সুপ্রাচীন মসজিদ - সংগৃহীত
ভারতীয় উপমহাদেশের সব থেকে প্রাচীন মসজিদ কোনটি। এ প্রশ্নের জবাবে বেশির ভাগ ঐতিহাসিকই বলে থাকেন, ‘কেবলার চেরামান জুমা মসজিদ’ই উপমহাদেশের সব থেকে পুরাতন মসজিদ। এটি ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। কেরালার স্থানীয় রাজা চেরামান পেরুমল সেই প্রথম যুগেই আরব ব্যবসায়ীদের হাতে অনুমতিক্রমেই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।
তবে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর তথ্য আবিষ্কৃত হয়েছে। আর তা হলো ভারতের গুজবটি-উপকূলের ভাবনগরের ঘোঘা জনপদে একটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে যার রুখ বা কিবলা হচ্ছে জেরুসালেমের দিকে। উল্লেখ্য, জেরুসালেমের মসজিদুল আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা।
অর্থাৎ প্রথমে রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর নেতৃত্বে মুসলমানেরা জেরুসালেমের মসজিদুল আকসার দিকেই মুখ করে নামাজ পড়তেন। মদিনায় হিজরতের পর হিজরি ২ সালে কিবলা পরিবর্তন সম্পর্কে কুরআন শরীফের এক আয়াত নাজিল হওয়ার পর রাসূল সা: তাঁর সাহাবাদের নিয়ে মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা শরিফের দিকে মুখ করে নামাজ পড়া শুরু করেন।
সেই থেকে সারা বিশ্বের মুসলমানরাই কাবা শরিফকে কিবলা জেনে সেদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করে থাকেন। ভাবনগরের জেরুসালেমের দিকে মুখ করা মসজিদটির অস্তিত্ব প্রমাণ করছে ২ হিজরির আগেই হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অনুগামীরা ব্যবসায় উপলক্ষে আরব থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ভাবনগর উপকূলে জাহাজে করে এসেছিলেন এবং তারাই এই প্রাচীন মসজিদটি নির্মাণ করেন। অর্থাৎ তখনো জেরুসালেমের দিকেই মুসলিমদের কিবলা ছিল এবং তা তখনো মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়নি।
বছর কয়েক আগে গুজরাটের ভাবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক অধ্যাপক মেহবুব দেশাই জেরুসালেমের দিক মুখ করা এই মসজিদটির কথা প্রথম তুলে ধরেন। ভাবনগর জেলার ঘোঘা জনপদে আজো টিকে রয়েছে এই প্রাচীন মসজিদ।
যদিও এই মসজিদে শত শত বছর ধরে নামাজ পড়া হয় না। ঘোঘায় আরো কয়েকটি পুরাতন ও নতুন মসজিদ রয়েছে যার সবগুলোরই রুখ হচ্ছে পবিত্র মক্কা শরিফের দিকে।
জেরুসালেমের দিকে কিবলাসম্পন্ন এই মসজিদটি সম্পর্কে মাস তিনেক আগে আমাকে প্রথম জানিয়েছিলেন ‘সাহিত্যের ইয়ারবুক’-এর সম্পাদক এবং প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক জাহিরুল হাসান। তারপরই আমি আমার গুজরাটের বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে মসজিদটি সম্পর্কে খবর নেয়া শুরু করি। ইন্টারনেটেও পাওয়া যায় কিছু তথ্য।
অধ্যাপক মেহবুব দেশাইয়ের অভিমত হলো, সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকেই ভাবনগরের এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। তার গবেষণা মতে, মসজিদটি ১৩০০ বছরের বেশি পুরনো।
এই প্রাচীন মসজিদটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘বারওয়াদা মসজিদ’ বা ‘জুনি মসজিদ’ বলে পরিচিত। অধ্যাপক দেশাইয়ের মতে, এই মসজিদে যে আরবি ক্যালিওগ্রাফি রয়েছে তা ভারতের প্রাচীনতম।
মসজিদটিতে নামাজ না হলেও বারওয়াদা জামাত মসজিদটি সুদীর্ঘকাল ধরে তত্ত্বাবধান করে আসছেন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ মসজিদটির যে প্রত্নতাত্ত্বিক রক্ষণাবেক্ষণ হওয়ার কথা তা মোটেই হচ্ছে না। ফলে এই মসজিদটি বিলুপ্তির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা পৃথিবীতে আর কোথাও এখনো জেরুসালেমের দিকে মুখ করা মসজিদ আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। উল্লেখ্য, জেরুসালেম ভাবনগর থেকে উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত, আর মক্কা শরিফ অবস্থিত পশ্চিম দিকে। সমুদ্রগামী আরবরা ছিলেন দক্ষ নাবিক। তাদের দিক ভুল করার কথা নয় বলেই পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন।
ফলে এই মসজিদটিই যে ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ সে দাবির পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।