ভারতের দিকে ধেয়ে আসছে লাখ লাখ পঙ্গপাল
লাখ লাখ পঙ্গপাল - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে ভারত যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন নতুন উৎপাত হিসেবে হাজির হচ্ছে পঙ্গপাল। মহামারী করোনার জেরে হাহাকার দেখা দিয়েছে সারা বিশ্বে। লাগাতার লকডাউনের জেরে বেহাল অর্থনাতির প্রভাব জনজীবনে ব্যাপকভাবে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বহু গবেষক। তারই মধ্যে এবার পঙ্গপালের দল হানা দিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতির এই আশঙ্কাজনক অবস্থায় যদি দানাশস্য পঙ্গপালে খেয়ে যায়, তাহলে দেখা দিতে পারে মহাসঙ্কট।একটি সর্বভারতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী, প্রতিবেদন অনুযায়ী গ্রীস্মেই খাদ্য লুটতে ভারতে হানা দেবে মরুদস্যুরা।
ভারত মহাসাগর পার করে ভারতের কৃষিজমিতে সরাসরি আঘাত হানতে পারে এই পঙ্গপালের দল। আদপে পঙ্গপাল শব্দটি হিংস্র না হলেও দল বেঁধে এরা যে নিমেষে সাবাড় করতে পারে কয়েক হাজার একর কৃষিজমি, তার প্রমাণ আগেই রয়েছে আফ্রিকা ও ইয়েমেনে। রাস্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা আগেই জানিয়েছে, এশিয়ার জন্যও এরা বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। মরুদস্যুর এই দল একেবারে রণকৌশল সাজিয়েই হামলা হানতে চলেছে ভারতে। হর্ন অব আফ্রিকা থেকে যে একদল পঙ্গপাল ভারতে আসছিল, রাস্তায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরো একদল। একদল কুয়েত, কাতার, পাকিস্তান পেরিয়ে ভারতে ঢুকবে পাঞ্জাব হয়ে। অপর দল ভারত মহাসাগর টপকে ভারতে এলো বলে!
পঙ্গপালের এই হামলার জেরে ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়তে পারে। তাই নতুন করে উদ্ভুত এই সমস্যাকে একেবারেই হালকাভাবে নিচ্ছে না ভারত সরকার। পঙ্গপালরা মূলত বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী চলাফেরা করে। একজায়গায় খাবার সম্পূর্ণ শেষ করে পরবর্তী জায়গায় খাবারের খোঁজে যায়। তাই ভারতের পর পরবর্তী আক্রমণস্থল হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ। মূলত দলবদ্ধভাবেই আক্রমণে নামে এই পঙ্গপালরা। এক ঝাঁকে কয়েক লাখ পতঙ্গ থাকতে পারে। দল বেঁধেই খাবারের খোঁজে মাঠে নামে তারা। নিজের শরীরের সমান ওজনের খাবার নিমেষে খেয়ে ফেলতে পারে এক একটি পঙ্গপাল।
জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, এক বর্গকিলোমিটার অঞ্চল পঙ্গপালের দখলে গেলে ৩৫ হাজার মানুষের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে তারা। একটি বড় পঙ্গপাল দিনে ১২০ মাইলের খাবার খেয়ে ফেলতে পারে!
পঙ্গপাল হলো Acrididae পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতি যাদের জীবন চক্রে দল বা ঝাঁক বাধার পর্যায় থাকে। এই পতঙ্গগুলো সাধারণত একাই থাকে কিন্তু বিশেষ অবস্থায় তারা একত্রে জড়ো হয়। তখন তাদের আচরণ ও অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে সঙ্গলিপ্সু হয়ে পড়ে। পঙ্গপাল এবং ঘাস ফড়িংয়ের মধ্যে কোন পার্থক্যগত শ্রেণীভাগ নেই। বিশেষ অবস্থায় তাদের প্রজাতিরা একত্র হওয়ার যে প্রবণতা দেখায় সেটাই মূল পার্থক্য।
একা থাকা অবস্থায় এই ঘাস ফড়িংগুলো অনপকারী, তারা সংখ্যায় থাকে কম এবং কৃষির জন্য বিরাট কোন আর্থিক ক্ষতি করে না। তবে অনাবৃষ্টির পর দ্রুত ফসলের বর্ধন হলে এদের মস্তিষ্কে থাকা serotonin তাদের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তনের সূত্রপাত করে। ফলে তারা প্রচুর পরিমানে ও দ্রুত জন্মদান শুরু করে। তখন তারা একত্রে থাকে, যখন তাদের সংখ্যা বেশি হয় তারা যাযাবর হয়ে পড়ে। এতে থাকে পাখাবিহীন ছোট পঙ্গপাল যেটা পরে পাখা জন্মে দলে যোগ দেয়। এই পাখাবিহীন এবং পাখনাসহ পঙ্গপালের দল একসাথে চলাচল করে এবং দ্রুত ফসলের মাঠের ক্ষতি করে। পূর্নবয়স্ক পঙ্গপাল শক্তিশালী উড্ডুক্কু তারা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে আর পথে যেখানেই থামে সেখান থেকে ফসল খেয়ে শক্তি অর্জন করে।
পঙ্গপালের এই মরক তৈরি করার ইতিহাস বহু পুরনো। পুরনো মিশরীয়রা তাদের কবরে এদের একেছিল। ইলিয়ড, বাইবেল এবং কোরান ইত্যাদি গ্রন্থে এর উল্লেখ আছে। পঙ্গপালের দল ফসল ধ্বংস করে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছে যার ফলে মানুষ প্রচরণশীল হয়েছে। আরো সাম্প্রতিক সময়ে, কৃষিক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তনের ফলে যেখানে এই দল উৎপন্ন হতে পারে তা বের করে শুরুতেই নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা যায়। পুরনো নিয়মের মধ্যে রয়েছে বাতাসে বা মাটিতে কীটনাশক ব্যবহার। কিন্তু অন্য ব্যবস্থা যেমন জীববিজ্ঞান ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করে ভাল ফল পাওয়া গেছে।
দল বানানোর প্রবণতা বিংশ শতাব্দিতে কমে গেছে কিন্তু আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও পঙ্গপাল অনুকূল অবস্থায় যে কোন সময় দল গড়তে পারে যার ফলে দুর্ভিক্ষের সম্ভবনা রয়েছে। পঙ্গপাল বড় প্রাণী এবং সহজেই গবেষণা বা জীব বিদ্যায় পরীক্ষা করার কাজে শ্রেণীকক্ষে ব্যবহৃত হতে পারে। এদের খাওয়াও যায়; ইতিহাসে তাই দেখা যায়। কিছু কিছু দেশে এদের খাদ্য হিসেবে অত্যন্ত উপাদেয় বিবেচনা করা হয়। ইংরেজি "locust" বা পঙ্গপাল শব্দটি এসেছে Vulgar Latin শব্দ locusta (লোকাস্টা) থেকে, যার অর্থ লবস্টার (lobster) বা লোকাস্ট ।