আল্লাহ মানুষকে কখন ক্ষমা করেন
আল্লাহ মানুষকে কখন ক্ষমা করেন - সংগৃহীত
আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহভাজন করেছিলাম। স্মরণ করো, যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল, আমি তাকে পাকড়াও করব না। শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডাক দিলো : ‘তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি।’ তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি (সূরা আম্বিয়া ৮৭-৮৮)।
এখানে মাছওয়ালা বলতে হযরত ইউনুস আ:-কে বলা হয়েছে। তিনি মাছ ধরতেন বা বিক্রি করতেন, এমনটি নয়। তাঁর জনপদ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহর হুকুমে একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলেছিল। এ কারণেই তাঁকে মাছওয়ালা বলে সম্বোধন করা হয়েছে।
তাঁর জনপদের লোকেরা তাঁকে ক্রমাগত অমান্য করতে থাকলে একপর্যায়ে তিনি রাগান্বিত হয়ে জনপদ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর হুকুম আসার আগেই তাঁর চলে যাওয়াটা আল্লাহ পছন্দ করেননি। নবীদের সামান্য ত্রুটিও আল্লাহ মেনে নেননি। ফলে আল্লাহ তাৎক্ষণিক তাঁকে ধরে ফেলেছেন।
একে তো পানির অন্ধকার, তদুপরি মাছের পেটের অন্ধকার, এমতাবস্থায় হজরত ইউনুস আ: তাঁর ত্রুটি উপলব্ধি করে আল্লাহকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি’ (লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জ্বলেমিন)।
বান্দাহ যখন আল্লাহর কাছে তার ত্রুটি স্বীকার করে ফিরে এলেন, তখনই আল্লাহ বান্দাহর ত্রুটি ক্ষমা করে তাকে দুঃখ ও দুশ্চিন্তা মুক্ত করলেন। আল্লাহ তাঁকে সব ধরনের পেরেশানি থেকে উদ্ধার করলেন।
শুধু তাঁর নবীকেই মুক্ত করা নয়, ‘আর এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি’- এ কথার মধ্য দিয়ে আল্লাহ মু’মিনদেরকেও আশ্বস্ত করছেন। বিপদাপদ মু’মিনদের জন্য পরীক্ষা এবং অমান্যকারীদের জন্য শাস্তি। কোনো জনপদে আল্লাহর পক্ষ থেকে গজব এলে তা থেকে বাঁচার জন্য বস্তুগত উপায়-উপকরণ ব্যবহারের সাথে সাথে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণের শিক্ষা এখানে প্রদান করা হয়েছে।
আমরা প্রতিনিয়ত আল্লাহর নাফরমানি করছি। নাফরমানি থেকে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ। তকদিরে যেটি রয়েছে সেটি হবেই, ক্ষমা চাওয়ার মধ্যে রয়েছে গুনাহ থেকে মুক্তি ও আখিরাতে নাজাত। শুধু মুখে দোয়া ইউনুস পাঠ করা নয়, বরং সব নাফরমানি থেকে ফিরে এসে আল্লাহর কাছে কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব.), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ