যুক্তরাষ্ট্র থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে?
করোনাভাইরাস - সংগৃহীত
কোভিড-১৯-এর সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসন্ধান একটি মহাকাব্য গড়ে দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানগুলোর কল্যাণে (তাদের চীনা ভাইরাস, ওহান ভাইরাস ইত্যাদির মতো রাজনৈতিক ও কৌশলগত বিষয়গুলো) বেইজিং এখন এই কাহিনীর একবারে মূলে কী আছে তা বের করতে আগের চেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে।
এর ভালো বিষয়টি হলো, আসল কাহিনী এখন আরো দ্রুত বের হয়ে আসবে।
গত সপ্তাহান্তে একটি অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে মস্কোতে নিযুক্ত চীনা দূত ঝাঙ হানহুই বলেছেন যে কোভিড-১৯-এর পুরো কাহিনী মাত্র প্রকাশ হতে শুরু করেছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য বিপুল বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
রাষ্ট্রদুত ঝাঙ বেইজিংয়ের অগোচরেই কাজটি করেছেন, এমন মনে করার কারণ নেই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, চীনা দূত চমকপ্রদ তথ্যটি প্রকাশ করার জন্য রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে বাছাই করে নিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূতের মতে –
• চীনের শীর্ষস্থানীয় ৫টি বৈজ্ঞানিক সংস্থা কোভিড-১৯-এর ৯৩টি জিনোম নমুনা সংগ্রহ করেছে। এগুলো চারটি মহামহাদেশের ১২টি দেশের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে পাওয়া গেছে।
• গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এর প্রাচীনতম ‘পূর্বপূরুষ’ হলো এমভি১ নামে পরিচিত একটি ভাইরাস। পরে এটি হ্যালোটাইপ এইচ১৩ ও এইচ৩৮-এ পরিণত হয়।
• এইচ১৩ ও এইচ৩৮-এ পরে দ্বিতীয় প্রজন্মের হ্যালোটাইপ এইচ৩-এ পরিণত হয় এবং এটি আবার পরে বিবর্তিত হয়ে হয় এইচ১ (কোভিড-১৯)।
• সাদামাটাভাবে বলা চলে কোভিড-১৯-এর পিতা হলো এইচ৩, এর দাদা হলো এইচ১৩ ও এইচ৩৮, দাদার দাদা হলো এমভি১।
• আর ওহানের সিফুড মার্কেটে যে ভাইরাসটি পাওয়া গেছে, সেটি এইচ১ (কোভিড-১৯)। এর ‘বাবা’ এইচ৩-কেও পাওয়া গেছে ওহানে, তবে সিফুড মার্কেটে নয়।
• আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোভিড-১৯-এর ‘দাদা’ এইচ৩ কিন্তু ওহানে পাওয়া যায়নি।
চীনা দূত বলেন, এতে বোঝা যাচ্ছে যে এইচ১-এর নমুনা কোনো সংক্রমিত ব্যক্তি ওই সিফুডের মার্কেটে নিয়ে এসেছিল এবং সেখান থেকেই মহামারিটি ছড়িয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে জিন সিকুয়েন্স কখনো মিথ্যা বলে না।
ফলে বলা যেতেই পরে, কোভিড-১৯ কিভাবে বিস্তৃত হলো, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি এবং তা যেকোনো দিকে নিয়ে যেতে পারে। কোভিড-১৯ পাওয়া গেছে ওহানে, এর শেকড় এখনো পাওয়া যায়নি।
ফলে অনেক কিছুই বের হয়ে আসছে। রাষ্ট্রদূত ঝাঙ বলেন-
১. জাপানের এক বিবাহিত দম্পতি ২৮ জানুয়ারি ও ৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে হাওয়াইতে (এখানেই ইউএস প্যাসিফিক ঘাঁটি অবস্থিত) কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন। তারা চীন সফর করেননি বা কোনো চীনা ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেননি। উল্লেখ্য, স্বামীটির লক্ষণ দেখা গিয়েছিল ৩ ফেব্রুয়ারি।
২. মিডিয়ার খবরে বলা হয়, কোভিড-১৯ উত্তর ইতালির লম্বারদিতে প্রথম দেখা গিয়েছিল ১ জানুয়ারি।
৩. ইতালির বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ গুইসেপে রেমুজির মতে, কোভিড-১৯ মহামারি ইতালিতে ছড়িয়ে পড়ছিল চীনেরও আগে।
৪. বিখ্যাত আমেরিকান ভাইরাসবিদ রবার্ট রেডফিল্ড (বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গণস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও ফেডারেল এজেন্সি সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক) অনুমান করছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক ফ্লু মৃত্যুর আসল কারণ কোভিড-১৯। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র এই পরীক্ষা করেনি। উল্লেখ্য, গত শীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮০ হাজার লোক ফ্লু ও এর জটিলতায় মারা গিয়েছিল।
৫. আরো আশ্চার্যের ব্যাপার হলো, ইতালি প্রথম কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে চেয়েছিল তথাকথিত ফ্লুতে আক্রান্ত এক মার্কিনির ময়নাতদন্তের মাধ্যমে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তখন সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করে।
রাষ্ট্রদূত ঝাঙ বলেন, সমসাময়িক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বেশ দক্ষ। তারা অবশ্যই কোভিড-১৯-এর উৎস নিশ্চিতভাবেই খুঁজে বের করতে পারবে। হয়তো একটু সময় লাগবে।
মজার ব্যাপার হলো, তাসের সাথে রাষ্ট্রদূত ঝাঙের সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভাইরাসটির জন্য চীনকে দায়ী করার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।
স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে, চীনা কূটনীতিবিদ কোভিড-১৯-এর পূর্বপুরুষদের শনাক্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তা বৈজ্ঞানিকভাবেই করা হয়েছে। আর যদি দেখা যায় যে কোভিড-১৯-এর বাবা, দাদা আর দাদার দাদার জন্ম হয়েছিল আসলে যুক্তরাষ্ট্রে, তখন কিন্তু ট্রাম্প বেশ বেকায়দায় পড়ে যাবেন।
ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন