করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর গল্প
করোনায় আক্রান্ত এক রোগীর গল্প - প্রতীকী ছবি
'আমি তো ভালোই ছিলাম। আমাদের এলাকার অনেকেই করোনা টেস্ট করাতে নমুনা দিচ্ছে। খামখেয়ালি করে আমিও দিলাম। আমি ঢাকার যাত্রাবাড়িতে থাকি। সেখান থেকে বেশ কিছু দিন আগে লাখাইর মহরমপুরের গ্রামের বাড়িতে এসেছি। তখনো যাত্রাবাড়িতে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি। কেউ আমাকে বলেনি করোনা টেস্ট করাতে হবে। নিজ থেকেই হাসপাতালে গেলাম, নমুনা দিলাম। আমার সাথে অনেকেই দিয়েছে। নমুনা দেয়ার আগে পরে আমি সবার সাথে মিশেছি, চলেছি।'
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন একজন করোনাভাইরাস রোগী, তার বর্ণনা দিতে এমন কথাই লিখেছেন তিনি।
দুই দিন পর হঠাৎ বলাবলি হতে লাগলো আমি নাকি করোনা পজিটিভ। এ কান সে কান হয়ে সবাই জেনে গেল। পুলিশ গিয়ে জানিয়ে এলো, আমি যাতে কারো সাথে না মিশি। এর ঘণ্টাখানেক পর একটি এ্যাম্বুলেন্স যেয়ে আমাকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হলো। হাসপাতালের গেটে আমাকে এক পাতা প্যারাসিটামল ও এক পাতা নাপা দেয়া হলো।
একটি রুমে থাকতে দেয়া হলো, সেটি খুবই নোংরা, ময়লার স্তুপ বলা যায়। কোনো খাট নেই, ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। গরম পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, সাবান নেই, স্যানিটাইজার বলতে কিছু নেই। হাঁস-মুরগিকে যেভাবে খাবার দেয় ঠিক সেভাবে একটি জায়গায় আমার খাবার রেখে দেয়া হলো। কোনো ডাক্তার, নার্স বা ব্রাদারের দেখা মেলেনি। কোনো ওষুধ দেয়া হয়নি। কোনো কিছু জিজ্ঞাসাও করা হয়নি। কাউকে যে কিছু বলব, এমন কাউকে আমি পাইনি।
করোনা রোগী আরো জানান, আমি পুরোপুরি সুস্থ, আমার কোনো করোনা লক্ষণ নেই। তিন মাস আগে তার একমাত্র শিশু সন্তান মারা যাওয়ায় এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
তিনি বলেন, লাখাই হাসপাতালের যে ডাক্তার নার্স করোনা পজিটিভ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তারা আমাকে চিকিৎসা করেননি। আমার আগেই তাদের নমুনা দেয়া হয়েছিল। এমন এক পরিস্থিতিতে তিনি বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা করাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে সেই আগ্রহের কথাও কাউকে তিনি জানাতে পারছেন না। একই অবস্থা তার সাথে থাকা আজমিরীগঞ্জের এক করোনা রোগীরও।
আজমিরীগঞ্জ থেকে নিয়ে আসা করোনা রোগী জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। এখন শ্বাসকষ্টই আছে। আর কোনো উপসর্গ নেই তার শরীরে। দুই করোনা রোগীর পাশের একটি রুমে রাখা হয়েছে আরো কয়েকজন করোনা রোগীকে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দ সাধারণ রোগীর চেয়ে বেশি। সাধারণ রোগীর জন্য যেখানে ১২৫ টাকা করে খাবার বরাদ্দ থাকে সেখানে করোনা রোগীর জন্য বরাদ্ধ ৩২৫ টাকা। সাবান স্যানিটাইজারের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ আছে কি না এই মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে হাসপাতালগুলো এসব ম্যানেজ করে থাকে। চিকিৎসা বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে হবিগঞ্জে আরো দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের একজন লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স, অপর জন ঢাকা থেকে আসা আজমিরীগঞ্জের নারী পোশাককর্মী।
এনিয়ে হবিগঞ্জে ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১২ জনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপর একজন আক্রান্ত চিকিৎসক লাখাই উপজেলায় তার বাসভবনে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরো একজন চিকিৎসক, দুজন নার্স করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় আগামী শনিবার পর্যস্ত হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের অন্য স্টাফদেরকে হোম কোয়ারাইন্টেনে রাখা হয়েছে। সকালের দিকে ওই করোনা রোগীর সাথে কথা বলেও বিকালে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।