করোনার জন্য কি ভারতীয় অর্থনীতি মার খাচ্ছে?
করোনার জন্য কি ভারতীয় অর্থনীতি মার খাচ্ছে? - সংগৃহীত
করোনাভাইরাসজনিত রোগের জেরে ভারতের অর্থনীতি গত কয়েক মাস ধরে বেহাল অবস্থায় পড়েছে। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় ভারতের অর্থনীতি কি বেশি মার খেয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর নানা দিক থেকে দেয়া যায়। কেউ জিডিপি বৃদ্ধির হার দিয়ে দেখতে পারেন। আবার সেরকম পরিসংখ্যানের অভাবে গাড়ি বিক্রির মত পরিসংখ্যান দিয়েও বিষয়টি দেখা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে টাকার বিনিময় হার ভারতের অর্থনীতির প্রতিযোগিতাক্ষমতা বোঝাতে পারবে।
মুদ্রা বিনিময় হার কী?
দুটি মুদ্রার মধ্যে কোনটির চাহিদা বেশি তা দিয়ে এই হার নির্ধারিত হয়। এই দাবি, দুই দেশের পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে। মার্কিন ডলার যদি টাকার চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়, তাহলে যার কাছে টাকা রয়েছে, তাঁর কাছে ডলারের চাহিদা, যাঁরা কাছে ডলার রয়েছে তার কাছে টাকার যে চাহিদা – তুলনায় বেশি হবে।
সাধারণ ভাবে শক্তিশালী অর্থনীতির কাছে শক্তিশালী মুদ্রা থাকে। যেমন আমেরিকার অর্থনীতি তুলনামূলক ভাবে বেশি শক্তিশালী কারণ এক ডলারের মূল্য ৭৬ রুপি। গত কয়েক মাস ধরে ডলারের তুলনায় রুপির দাম কমছে।
কিন্তু আমেরিকাই একমাত্র দেশ নয় পৃথিবীতে, ভারত অন্য দেশের সঙ্গেও বাণিজ্য করে থাকে। ভারতীয় অর্থনীতির প্রতিযোগিতা বাজার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যসঙ্গীদের সঙ্গে টাকার ব্যবহার দেখে নেওয়া উচিত।
কী পদ্ধতিতে দেখা হবে?
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক টাকার ন্যূনতম কার্যকর বিনিময় হার (NEER) পরিমাপ করে ৩৬টি বাণিজ্য সহযোগী দেশের মুদ্রার সাপেক্ষে। এই সূচকে যে সব দেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা বেশি, সে দেশের মুদ্রাকে বেশি গুরুত্ব দেযা হয়ে থাকে। এই সূচকে হ্রাসের অর্থ টাকার অবমূল্যায়ন।
এই চার্ট অনুসারে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে রুপির মান সবচেয়ে কম এখন। ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ক্রমশ রুপির দাম কমছে- যা থেকে বোঝা যাচ্ছে ভারতের অর্থনীতি প্রতিযোগিতায় পিছোচ্ছে।
যথার্থ বদলটা ধরার আরেকটা হিসেব আছে। তাকে বলে প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (REER)। এটা NEER -এর চেয়ে সামান্য উন্নত কারণ এতে বিভিন্ন অর্থনীতির দেশিয় মুদ্রাস্ফীতির হিসেবও কষা হয়।
মুদ্রাস্ফীতি কীভাবে বিনিময় হারে প্রভাব ফেলে?
দুটি মুদ্রার মধ্যে বিনিময় হার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থেকে সুদের হার ইত্যাদি অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। এগুলির অন্যতম হল মুদ্রাস্ফীতি।
ধরা যাক প্রথম বছরে এক ডলারের বিনিময় হার ঠিক এক টাকা। তার মানে ১০০ টাকা দিয়ে আমেরিকায় ১০০ ডলারে যা কেনা যায়, তাই কেনা যাবে। কিন্তু ধরা যাক ভারতে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ২০ শতাংশ ও আমেরিকায় ০। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বছরে আমেরিকায় ১০০ ডলারে যা পাওয়া যাবে, একজন ভারতীয়কে সে জিনিস কিনতে খরচ করতে হবে ১২০ টাকা, টাকার বিনিময় হার ১.২০ কমবে।
REER-এর সাপেক্ষেও রুপির মান মার্চ থেকে কমেছে এবং ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে নিচে নেমেছে। NEER এবং REER-এর মধ্যে যেটুকু তফাৎ তার কারণ ভারতের আভ্যন্তরীণ খুচরো মুদ্রাস্ফীতি অন্য ৩৬টি দেশের তুলনায় কম। দেশীয় বাজারে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে শুরু করলে সে ফারাক কমতে দেখা গেছে।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস