জিদানকে পরিকল্পিতভাবে ক্ষিপ্ত করা হয়েছিল!
জিদানকে পরিকল্পিতভাবে ক্ষিপ্ত করা হয়েছিল! - সংগৃহীত
পেশার তাগিদে তিনি এখন চীনে। খুব কাছ থেকে দেখেছেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। কয়েক দিনের মধ্যে কীভাবে আক্রান্তদের সংখ্যা গুণোত্তর পদ্ধতিতে বেড়েছে, তার অন্যতম সাক্ষী তিনি। গুয়াংঝাউ এভারগ্র্যান্ডের কোচ ফাবিও কানাভারোর দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ইতালির মৃত্যুমিছিল।
প্রতিদিনই তিনি খোঁজখবর রাখছেন নেপলসে থাকা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের। কোভিড-১৯’এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের পরামর্শ, ‘ধৈর্য হারাবেন না। করোনা অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তাই এই ভাইরাসকে গুরুত্ব দিতেই হবে। কিন্তু জেতার মানসিকতা ধরে রাখতে হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মুহূর্তে আমাদের গাইড করছেন। ওদের পরামর্শ মেনে এগতে হবে সবাইকে। দলগত সংহতিতে চিড় ধরতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনি সচেতন থাকলে লাভ অনেকের।
পাশাপাশি, মুহূর্তের অসচেতনতা ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। চীন এবং ইতালি, এই দু’টি দেশ করোনার প্রভাবে বিপর্যস্ত। তা সত্ত্বেও বলছি, শেষ হাসি হাসব আমরাই। ২০০৬ বিশ্বকাপের দু’টি ম্যাচের কথা মনে পড়ছে। সেমি-ফাইনালে আমরা জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিলাম। ডর্টমুন্ডের মাঠে ওরা তখন অপরাজেয়। আয়োজক দেশের বিরুদ্ধে সেমি-ফাইনাল কতটা কঠিন হতে পারে তা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে দিইনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে গোল না পেলেও জানতাম, ফাইনাল অপেক্ষা করছে ইতালির জন্য। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছি। সাইড বেঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে কোচ মার্সেলো লিপ্পির পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়ের শেষ পর্বে গ্রসো ও দেল পিয়েরোর গোলে জার্মানিকে হারিয়ে আমরা ফাইনালে উঠি। আর প্রতিযোগিতার শেষ ম্যাচের ফল তো আপনাদের প্রত্যেকের জানা। বার্লিনের ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে জিদানের গোলে আমরা পিছিয়ে পড়ি।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সমতায় ফেরায় মাতেরাজ্জি। এই দু’জনই যে ফাইনালের দুই সেরা চরিত্র হবে তা তখন কেউই বুঝতে পারেনি। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে মাতেরাজ্জির ফাঁদে পা দিয়ে জিদান ঢুঁসো মেরে লাল কার্ড দেখেন। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ধৈর্য ধরে রাখতে পারেনি জিজুর মতো কিংবদন্তিও। এরপরেই মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে ফ্রান্স।
টাইব্রেকারে জিতে বিশ্বসেরা হয় ইতালি। এই দু’টি উদাহরণ আপনাদের নিশ্চয়ই উজ্জীবিত করবে। আমি চিকিৎসক নই। ফুটবলই আমার ধ্যানজ্ঞান। তাই এই দুঃসময়ে মাঠের অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম। সবশেষে বলি, ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। করোনা ভাইরাসকে ভয় পাবেন না। আতঙ্কিত হলেই বিপদ বাড়বে।’
শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে করোনা : যুদ্ধ জিতে মালদিনির বক্তব্য
মিলান, ২১ এপ্রিল: করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মজবুত রক্ষণ পুরোপুরি ভেদ করতে ব্যর্থ এই বিপজ্জনক ভাইরাসও। বছরের পর বছর ইতালি ও এসি মিলানের রক্ষণকে আগলেছেন পাওলো মালদিনি। এবার তিনি হারালেন কোভিড-১৯’কে। এই যুদ্ধজয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ইতালির সুদর্শন ডিফেন্ডারটি বলেছেন, ‘প্রথম দিকে করোনার কোনও উপসর্গ ছিল না। কিন্তু দুর্বলতা ক্রমশ আমায় গ্রাস করছিল। মেডিক্যাল টেস্টের পর বুঝতে পারি, কঠিন লড়াই এবার লড়তে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলাই ছিল তার প্রথম ধাপ। অনুরাগীদের শুভেচ্ছাবার্তাও আমার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতো।
সবার সহযোগিতায় নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করি। স্মৃতিতে ভিড় করে কত স্মরণীয় ম্যাচের অভিজ্ঞতা। যা আমায় সাহস জুগিয়েছিল। সেরকমই একটি ম্যাচের কথা বলব। ১৯৯৪ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। আমাদের সামনে দুরন্ত ফর্মে থাকা বার্সেলোনা। কোচ জোহান ক্রুয়েফ। টোটাল ফুটবলে তখন বিশ্ব মাতাচ্ছে কাতালন ক্লাবটি। তারকাসমৃদ্ধ দল ওদের। রোমারিও, স্তোইচকভ, পেপ গুয়ার্দিওলা, রোনাল্ড কোম্যান—কাকে ছেড়ে কার কথা বলব। এথেন্সের ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে আয়োজিত ফাইনালে নামার আগে আমাদের কোচ ফাবিও কাপেলোর পরামর্শ ছিল, রোমারিও ও স্তোইচকভ—দু’জনকে মার্ক করার দায়িত্ব তোমার ও পানুচ্চির। সহযোগিতায় থাকবে দোনাদোনি ও দেশাইলি। পিছন থেকে গোটা দলকে গাইড করবে তুমি। ভয় পাবে না। বার্সেলোনার আক্রমণভাগ শক্তিশালী হলেও আমাদের রক্ষণও বিশ্বসেরা, এটা মাথায় রাখবে। টানেল থেকে মাঠে বেরনোর মুহূর্তে কোচ কাপেলোর কথা মনে মনে বারবার আওড়াচ্ছিলাম। ফলে বেড়েছিল আত্মবিশ্বাস, না হারার জেদ। সবাই জানেন, সেই ফাইনালে আমরা অর্থাৎ এসি মিলান ৪-০ গোলে জিতেছিলাম।’
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হারের স্বাদও চাখতে হয়েছিল মালদিনিকে। ২০০৫ সালে ইস্তাম্বুলে লিভারপুলের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে তিন গোলে এগিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হয়নি এসি মিলানের। বিরতির পরে স্টিভন জেরারের নেতৃত্বে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল রাফা বেনিতেজের ‘রেড আর্মি’। সেই ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে এনে মালদিনির মন্তব্য, ‘শেষ বাঁশি
পর্যন্ত লড়তে হয়। হাফ-টাইমে এগিয়ে থাকলে আপনাকে জয়ী বলা সম্ভব নয়। এই শিক্ষাই পেয়েছিলাম ওই ম্যাচ
থেকে। তাই বলছি, বিশ্বকে সম্পূর্ণ করোনা মুক্ত করার জন্য লড়াই জারি রাখুন।’
সূত্র : বর্তমান