এবার ভারতের বিরুদ্ধে অসন্তোষ মুসলিম দেশগুলোতে
নরেন্দ্র মোদি - সংগৃহীত
ভারতে যে ভাবে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে মুসলিমদের দায়ী করে লাগাতার ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, তাতে ইতিমধ্যেই সাম্প্রদায়িক প্ররোচনামূলক নানা ধরনের ঘটনা সামনে আসছে। ‘রিপাবলিক টিভি’, ‘জি নিউজ’, ‘এবিপি নিউজ’ (হিন্দি-ইংরেজি-মারাঠা), ‘টাইমস্ নাউ’, ‘ইন্ডিয়া টিভি’ প্রভৃতি যেভাবে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তাতে প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘দেশকে এক জেনোসাইডের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে’। ইতিমধ্যেই আহমদাবাদে হিন্দু ও মুসলিম রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কোনো কোনো হাসপাতাল সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাচ্ছে, করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট যদি হাতে না থাকে তবে যেন মুসলিমরা এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আসে। অপপ্রচারের ফলে লিঞ্চিং ও সম্প্রদায়ভিত্তিক বয়কটের ঘটনাও ঘটছে।
এই ইসলাম ফোবিয়া ও মুসলিমদের লক্ষ্য করে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে এবার সরব হয়েছেন বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর জোট সংগঠন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ‘দ্য অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন’ (ওআইসি)। ওআইসি ভারতকে বলেছে, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য নয়াদিল্লির জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ভারতে ইসলাম ফোবিয়া সৃষ্টি করায় যে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ওআইসি-র স্বাধীন ও স্থায়ী যে মানবাধিকার সংস্থা রয়েছে, এক ট্যুইটের মাধ্যমে তারা বলেছে, ভারতের গণমাধ্যম মুসলিমদের নেতিবাচক ভাবে চিত্রিত করছে এবং তাদেরকে বৈষম্যের মুখে ফেলা হচ্ছে।
এর আগে একটি ট্যুইটে ওআইসি-র মানবাধিকার কমিশন ভারতের মুসলিমদের কালিমালিপ্ত করার জন্য লাগাতার ইসলাম বিদ্বেষী যে ক্যাম্পেইন চলছে, তার তীব্র নিন্দে করেছে। ভারত এর আগে ওআইসি-র সংস্থাগুলির এই ধরনের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেছে।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ) সংস্থাটিও ভারতীয় গণমাধ্যমের এই ধরনের বিদ্বেষ প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব এই সংস্থার প্রতি অভিযোগ এনেছেন, তারাই নাকি কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকে সাম্প্রদায়িক রঙে চিহ্নিত করছে। ইউএসসিআইআরএফ বলেছে, যদি হিন্দু ও মুসলিম রোগীদের হাসপাতালের ওয়ার্ডে আলাদাভাবে রাখা হয়, তাহলে তা মুসলিমদের কালিমা লিপ্ত করার যে অভিযান চলছে তাকে আরও শক্তিশালী করবে। এদিকে করোনা ভাইরাসকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে প্রচার অভিযান চলছে, তা নিয়ে আরব বিশ্বে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে আরব আমিরাত এবং কুয়েতে বিশেষ ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই অসন্তোষ প্রশমন করার লক্ষে আরব আমিরাতে ভারতের রাষ্ট্রদূত বিবৃতিমূলক এক ট্যুইট করেছেন এবং বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিন দুয়েক আগে এক ট্যুইটে বলেছেন, কোভিড-১৯ জাত-ধর্ম-বর্ণ মতাদর্শ কিংবা সীমান্ত দেখে আক্রমণ করে না।
কাজেই আমাদেরকে ঐক্য এবং ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি জোর দিতে হবে। এই লড়াইয়ে আমরা সঙ্গে আছি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া জানার পর প্রধানমন্ত্রী মোদির এই ট্যুইটটি এসেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আরব বিশ্বে সরকার ও জনগণের মধ্যে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর খবর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আর সেই জন্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশ দফতর ট্যুইট করে তাদের খানিকটা আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন।
উল্লেখ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত প্রভৃতি উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি প্রবাসী ভারতীয় বিভিন্ন কাজ ও ব্যবসায়ে নিযুক্ত রয়েছে। আরব উপসাগরীয় দেশগুলো কোনো আয়কর না কেটেই ভারতীয়দের নিজ দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণের সুযোগ দেয়। অনেক সচেতন প্রবাসী ভারতীয় চিন্তায় রয়েছেন, যদি উপসাগরীয় মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খারাপ হয় তাহলে ভারতীয়দের জায়গায় ফিলিপাইন্স, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মিসর প্রভৃতি দেশের প্রবাসী শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ভারতীয়দের জায়গা দখল করে নিতে পারে।
সূত্র : কলম