যে দুই প্রকার লোক রাসুলের (সা.) শাফা’আত পাবে না
যে দুই প্রকার লোক রাসুলের (সা.) শাফা’আত পাবে না - সংগৃহীত
রাসূল সা: বলেন : ‘আমার উম্মতের মধ্যে দুই প্রকার লোক আমার শাফা’আত বা সুপারিশ পাবে না :
১. অত্যাচারী বাদশাহ (শাসনকর্তা) এবং ধর্ম-কর্মে অহেতুক বিচ্ছেদ ঘটিয়ে সীমালঙ্ঘনকারী বেদ্আতী।’ তিনি বলেন : ‘পাঁচ প্রকার লোকের প্রতি আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট। তিনি ইচ্ছা করলে ইহকালে তাদের শাস্তি শুরু করে পরকালে দোজখের অনন্ত শাস্তি তাদের জন্য নির্ধারিত রাখবেন।
এরা হলো : ১. সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বা শাসক, যে স্বীয় অধীনস্থ লোকদের কাছ থেকে পাওনা পুরোপুরি আদায় করে নেয়, কিন্তু তাদের প্রতি সুবিচার করে না এবং অত্যাচার বন্ধ করে না। ২. সম্প্রদায়ের সর্দার যাকে জনগণ অনুসরণ করে; অথচ সে নিজের অনুসরণকারীদের মধ্যে সবল ও দুর্বলকে এক নজরে না দেখে সবলদের পক্ষাবলম্বন করে থাকে। ৩. যে ব্যক্তি মজুরির অঙ্গীকারে শ্রমিক নিযুক্ত করে; অথচ শ্রমিকের কর্ম সমাপনের পরও তার প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ করে না, ৪. যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রী-পুত্র পরিবারকে আল্লাহ্র বিধান মতো চলার হুকুম করে না, ধর্মের বিধান শিক্ষা দেয় না এবং তাদের আহার কোথা থেকে আসবে, সে চিন্তা করে না এবং ৫. যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ‘দেন মোহরের’ ব্যাপারে তার প্রতি অন্যায় আচরণ করে।’ প্রজাপালক শাসনকর্তাদের কেউ যদি বিচারে কোনো বান্দাকে অধিক কিংবা কম শাস্তি দেয়, তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
শাসনকর্তা সৎ কিংবা অসৎই হোক তার প্রশংসা করা অনুচিত। রাসূল সা: বলেছেন : ‘পুলছিরাত পার হওয়ার ওপর নির্ভর করে শাসনকর্তা বিচার মীমাংসায় জুলুম করেছিল, কিংবা ঘুষ নিয়ে অন্যায় করেছিল অথবা একপক্ষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিল এবং অপর পক্ষের কথা শোনেনি। যারা পুলছিরাত পার হতে পারবে না, দোজখই হবে তাদের বাসস্থান।’ শাসনকর্তার উচিত নিজ ভরণ-পোষণের জন্য রাজকোষাগার থেকে বেতন-ভাতা না নিয়ে নিজে রোজগার করা। শাসনকর্তাদের হিসাব-নিকাশের ব্যাপারে আল্লাহ্ কঠোর হবেন। যে প্রজাপালক ন্যায়বিচার করে, সে নিঃশঙ্কচিত্তে ঘুমাতে পারে। যে অত্যাচার করে সে সর্বদা উদ্বিগ্ন ও সন্ত্রস্ত থাকে।
শাসনকর্তাদের উচিত সবসময় যথার্থ আলেমদের সংসর্গে থেকে একান্ত আগ্রহ ও মনোযোগের সাথে তাদের উপদেশ গ্রহণ করা। সতর্কতার সাথে সংসারাসক্ত ব্যক্তিদের সংসর্গ এড়িয়ে চলা। সংসারাসক্ত ব্যক্তিরা শাসনকর্তাকে সর্বদা প্রতারিত করবে, প্রশংসা করবে, তার মন জুগিয়ে চলবে যেন চালাকি করে তাদের পার্থিব ভোগ-বিলাসের উপকরণ থেকে উচ্ছিষ্ট লাভ করতে পারে। আর সেসব আলেমই ধর্মপরায়ণ যারা রাজা-বাদশাহ বা শাসকের কাছে কিছুই প্রত্যাশা করেন না এবং তাদের ভুলত্র“টি দেখলে তাদের তিরস্কার করতে ভয় পান না। শাসক নিজে ভালো থাকলে তার কর্মচারীরা ও মন্ত্রীরা ভালো হতে বাধ্য। শাসক মন্দ হলে তার কর্মচারীরা ভালো থাকলেও ক্রমে মন্দ হয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন : ‘যারা মন্দ কাজ করেছে, তারা কি ধারণা করে যে, আমি তাদের ঈমানদার এবং নেক্কার লোকদের সমান মর্যাদা প্রদান করব? তাদের জীবন ও মরণ উভয়ই সমান। তারা যা করছে তা জঘন্য’ (সূরা জাছিয়াহ্ : আয়াত ২১)।
শাসকরা তাদের বয়ঃকনিষ্ঠ মুসলমানদের প্রতি পিতার মতো স্নেহপূর্ণ এবং সমবয়স্কদের প্রতি ভ্রাতার ন্যায় আচরণ করতে হবে। প্রত্যেক অপরাধীকে তার অপরাধের পরিমাণ এবং ক্ষমতানুসারে শাস্তি দিতে হবে। ক্রোধের বশীভূত হয়ে কাউকে অতিরিক্ত দণ্ড না দেয়ার জন্য সাবধান করা হয়েছে। বিজ্ঞ লোকের উচিত কোনো বিচারক বা শাসককে দেখামাত্র উপদেশ দেয়া এবং সত্য গোপন না করা। যে আলেম তোষণনীতি অবলম্বন করে রাজা-বাদশাহ বা শাসনকর্তার অহঙ্কার বাড়িয়ে দেন এবং তাদের সামনে সত্য গোপন করেন, সেই শাসনকর্তাদের দিয়ে পৃথিবীতে যেসব অত্যাচার ও অবিচার হবে, সে ব্যক্তিও সে অত্যাচার অবিচারের ভাগী হবেন।