পাকিস্তান যেভাবে মোকাবিলা করছে করোনাভাইরাস

নিজস্ব প্রতিবেদক | Apr 20, 2020 11:42 am
পাকিস্তান যেভাবে মোকাবিলা করছে করোনাভাইরাস

পাকিস্তান যেভাবে মোকাবিলা করছে করোনাভাইরাস - সংগৃহীত

 

করোনাভাইরাস নিয়ে যেখানে উন্নত দেশগুলোই চাপে রয়েছে সেখানে তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো একই কাতারে থাকা পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে তার অবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে। এই ভাইরাস মোকাবেলা ও সংক্রমণের বিস্তার রোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক ও আর্থিক সম্পদ যোগান দেয়ার সামর্থ্য দেশটির সীমিত। ভাইরাসটির বিস্তার শুধু স্বাস্থ্যগত সমস্যাই তৈরি করেনি অর্থনৈতিক সঙ্কটও সৃষ্টি করেছে।

এখন প্রশ্ন হলো দেশের বর্তমান সরকার আসন্ন এই সঙ্কট কিভাবে মোকাবেলা করবে?

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। ২০২০ সালের বাকি সময়ের জন্য এটা হতে পারে ঋণাত্মক ১.৩ শতাংশ।

এতে আরো বলা হয়, এই মুহূর্তে সরকারের চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড-১৯ মহামারীর বিস্তার রোধ করা। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ক্ষতি নিম্ন পর্যায়ে রাখা ও হতদরিদ্রদের রক্ষা করতে হবে। মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারকে টেকসই বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।

তবে সবচেয়ে সঙ্কটপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়া ঠেকানো। একই সঙ্গে, লক্ষ্য হাসিলের পথটি সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের মতে উদ্ধারের মন্ত্র আছে ‘কাঠামোগত সংস্কারে।’ এর মানে হলো আরো বেসরকারিকরণ।

পাকিস্তানের জন্য বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণ নতুন কিছু নয়। তবে এবারের সঙ্কট প্রমাণ করেছে ব্যাপকভাবে বেসরকারিকরণ করা প্রতিষ্ঠান ও পরিষেবাধারী দেশগুলোর চেয়ে চীনের মতো শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও সামর্থ্য থাকলে এ ধরনের সঙ্কট ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায়।

বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রেও সঙ্কটে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সামর্থ্য বাড়িয়েছে। পাকিস্তানের মতো দেশেরও উচিত হবে এখান থেকে শিক্ষা নেয়া এবং তাকে এমন এক সংস্কার প্র্রক্রিয়া শুরু করতে হবে যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য বৃদ্ধি পায় এবং বেসরকারিকরণের জন্য দুর্বল হয়ে না পড়ে।

আরো অনেক কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সামর্থ্য জোরদার করা জরুরি, যেগুলো বর্তমান সঙ্কটের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে অন্তত পাকিস্তানের জন্য প্রধান বিষয়টি হলো, উপসাগরীয়/আরব দেশগুলোতে পাকিস্তানিদের কর্মসুযোগ দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসা।

হাজারে হাজারে অন্যত্র চলে গেছে, আরো হাজারে হাজারে স্বাগতিক দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। রেমিট্যান্স হলো পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস। এসব দেশে পাকিস্তানিদের কাজের সুযোগ কমে যাওয়া মানে কম বৈদেশিক মুদ্রা আয়।

আরো বিষয় হলো কাজ হারিয়ে লোকজন দেশে চলে আসছে। এতে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। এতে সবাইকে কর্মসংস্থান করার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির উপর মনযোগ বাড়াতে হবে।

অন্য কথায়, সামনে যে করুণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ অপেক্ষ করছে তা মোকাবেলার জন্য ‘ইতিহাসের পরিসমাপ্তি’ ও সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর থেকে উদারিকরণ করা মুক্ত বাজার অর্থনীতির যে রীতি চলে আসছে, তা পর্যাপ্ত হবে না – অথবা, এমনকি সহায়কও হবে না।

আর এ কারণেই সম্ভবত পশ্চিমা বিশ্বের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমগুলো সংস্কারের আহ্বান জানাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আগের অবস্থা একেবারেই অনুপযুক্ত।

মুক্তবাজার অর্থনীতির চ্যাম্পিয়ন দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস সম্প্রতি এক সম্পাদকীয়তে লিখে: ‘গত চার দশক চলে আসা নীতি নির্দেশ পাল্টে দিয়ে আমূল সংস্কারের বিষয়টি টেবিলে হাজির করতে হবে। অর্থনীতিতে সরকারের আরো সক্রিয় ভূমিকা মেনে নিতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে সরকারি পরিষেবা হলো বিনিয়োগ, এটা দায় নয়। শ্রম বাজার যেন কম অনিশ্চিত হয় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আবারো এজেন্ডায় ফিরিয়ে আনতে হবে পুন:বিতরণ; প্রবীণ ও ধনীদের বিশেষ সুবিধা প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলিক আয় ও সম্পদের উপর করের মতো নীতিগুলো এই কিছুদিন আগ পর্যন্ত খামখেয়ালী মনে হয়েছে, সেগুলো মেশাতে হবে।’

আসল কথা হলো, পাকিস্তানে পর্যন্ত ইমরান খান সরকার এমন কিছু উল্লেখযোগ্য নীতি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যেগুলো দেখিয়ে দেয় যে সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং সমাজের সবচেয়ে নাজুক অংশ তথা দিন মজুর ও শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য এগুলো খুবই প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে, এসব শ্রেণীর হাতে সরাসরি নগদ অর্থ পৌছে দিতে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফের নীতি বুঝিয়ে দিচ্ছে কোন কাজটি আরো বড় আকারে করা উচিত। প্রয়োজনটি হলো অর্থনীতি পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ভূমিকাটি চাঙ্গা করে তোলা। কথিত ‘কাঠামোগত সংস্কার’ ও বেসরকারিকরণের পেছনে ছোটা নয়। এগুলো ঐতিহাসিকভাবেই পাকিস্তানের ক্ষেত্রে অনেকবার ব্যর্থ হয়েছে।

এমনকি বৈশ্বিকভাবেও, সত্যি কথা হলো কোভিড-১৯ মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর মুক্তবাজার অর্থনীতিগুলো দ্রুত ‘মন্দা’র দিকে চলে যায়। এতে বুঝা যায় যে এই শক্তির যথেষ্ঠ শক-এবজরবিং সামর্থ্য নেই। এটা এমনকি সবচেয়ে নাজুক জনগণকেও রক্ষা করতে পারে না।

তাই পাকিস্তানের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উচিত হবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রচারিত ‘কাঠামোগত সংস্কারে’র বিষয়টি নিয়ে আবারো চিন্তা করা।

এর সঙ্গে অবশ্যই স্বাস্থ্যের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর ব্যাপারে নিজস্ব মূল্যায়ন থাকতে হবে, যেখানে দ্রুত অবনতিশীল পরিবেশের কারণে অব্যাহত চাপের মধ্যে থাকা বিশ্বে এ ধরনের সঙ্কট মোকাবেলার সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পদ যোগান দিতে হবে।
সূত্র : এসএএম

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us