এবার ট্রাম্পের টার্গেট মুসলিমেরা!
ট্রাম্প - সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুমিছিল। আর তাতেই খানিকটা দিশেহারার মতো আচরণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কখনো তার আমলে হওয়া মহামারির জন্য দায়ী করছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। কখনো আক্রমণ শানাচ্ছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে আবার কখনো হুমকি দিচ্ছেন চীনকে। এবার তার নিশানায় মার্কিন মুলুকের মুসলিমরা এবং সেদেশের উদারনৈতিক সমাজ।
সামনেই রমজান মাস। ট্রাম্পের ধারণা, রমজান শুরু হলে আমেরিকান মুসলিমরা আর লকডাউন বা সামাজিক দূরত্ব কোনোটাই মানবেন না। এবং স্থানীয় প্রশাসনগুলোও তাদের মদত দেবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট মুখে একথা প্রকাশ্যে না বললেও, তার ইঙ্গিত তেমনই। ট্রাম্প বলছেন, “আমাদের দেশে চার্চে যে পরিমাণ কড়াকড়ি করা হয়, মসজিদে তেমন হয় না। আমি আশা করব এবার মুসলিম এবং অন্যদের একইরকম গুরুত্ব দেয়া হবে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন, “আমি এমন একজন, যে ধর্মে বিশ্বাস করে। সে যে ধর্মই হোক না কেন। কিন্তু আমাদের নেতারা আলাদা আলাদা ধর্মকে আলাদা রকম গুরুত্ব দেয়। আমার মনে হয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাসকে এখানে অন্যভাবে দেখা হয়। খ্রিস্টানদের সাথে অন্যায় করা হয়।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করছেন, সদ্য ইস্টারে আমেরিকায় যেভাবে বিধিনিষেধ পালন করা হয়েছে, সেটা রমজানের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। তিনি বলছেন, “আমার মনে হয় আলাদা আচরণ করা হবে। আমাদের দেখতে হবে কী হচ্ছে। আমি এই দেশে অনেক বিভেদমুলক আচরণ দেখেছি।”
সম্প্রতি এক মার্কিন সেনেটার একটি টুইট করেন। যাতে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, আমেরিকায় যেভাবে ইস্টারে বাধা দেওয়া হল, মুসলিমদের সঙ্গেও তেমন আচরণ করা হবে কিনা? ট্রাম্প সেই টুইটটিকেও রিটুইট করেন। তারপরই শুরু হয় বিতর্ক। মার্কিন মুলুকের বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলছে তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, সমর্থন ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছেন বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের মানুষ। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এসব অঙ্গরাজ্যে জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মিশিগান, ওহাইয়ো, কেন্টাকি, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও উতাহ অঙ্গরাজ্যে করোনার প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কায় লকডাউনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন মানুষ। এই বিক্ষোভকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বলেন, অল্প কয়েকজন মানুষ বিক্ষোভ করছেন এবং এটি তাদের অধিকার। মানুষ ঘরে থাকতে চাইছে না। জীবিকা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। হুইটমার আরো বলেন, দুঃখের বিষয় হলো, তারা যত বাইরে বের হবেন, ভাইরাসের তত বিস্তার হবে এবং আমাদের এই লকডাউন আরো দীর্ঘমেয়াদের জন্য বহাল রাখতে হবে। বুধবার মিশিগানের রাজধানীতে গাড়িতে বসে বিক্ষোভ করেন লোকজন। আয়োজকরা এই বিক্ষোভের নাম দিয়েছেন অপারেশন গ্রিডলক। বিক্ষোভে কয়েক মাইল দীর্ঘ ছিল গাড়ির সারি। টম নামের বিক্ষোভকারী বলেন, আমি জানি ভাইরাস কত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছি যেখানে শাটডাউন বেশি হয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য বিক্ষোভকারীদের সবাই গাড়িতে অবস্থান করেননি। অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে গেছেন। মিশিগান নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে এই বিক্ষোভকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে আখ্যায়িত করেছে। বৃহস্পতিবার মিনেসোটার গভর্নরের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভকারীদের এক মুখপাত্র জানান, অর্থনৈতিক ক্ষতি ও হতাশাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা লকডাউন প্রত্যাহার চান।
কেন্টাকির রাজধানী ফ্রাঙ্কফুর্টে বিক্ষোভকারীরা বুধবার বিক্ষোভ করেন। শুরুতে বিক্ষোভকারীরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চললেও একপর্যায়ে তা ভেঙে পড়ে। উতাহ অঙ্গরাজ্যের ওয়াশিংটন কাউন্টিতে বিক্ষোভকারীরা ঘরে থাকার নির্দেশকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছেন। নর্থ ক্যারোলাইনাতে মঙ্গলবার বিক্ষোভ হয়। ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর রয় কুপারের নির্বাহী আদেশের বিরোধিতায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামেন।