মহামারীর প্রাদুর্ভাব কেন ঘটে?
মহামারী কেন প্রাদর্ভাব ঘটে? - সংগৃহীত
১. আজাব বা শাস্তিহিসেবে - আল্লাহ বলেন, কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে পাবে (সূরা নিসা-১৭৪)। এটি আল্লাহর চিরাচরিত বিধান। তিনি সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।
এ সম্পর্কে একটি হাদিস এ রকমÑ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, কোনো সমাজে যখন ব্যাপক অশ্লীলতা প্রকাশ পাবে তখন তাদের মধ্যে প্লেগ মহামারী ও এমন এমন সব নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে যাদের পূর্বপুরুষদের যুগে তা কখনো ছিল না। (ইবনে মাজাহ)
অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রতিফলস্বরূপ আমরা বিগত কয়েক শতাব্দীতে অসংখ্য নতুন নতুন রোগের উদ্ভব হতে দেখেছি যার পূর্বে কোনো অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং রাসূল সা: যে কারণ বর্ণনা করেছেন তা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিনিয়ত এমন অসংখ্য রোগ আজাব হিসেবে দেখা দিবে।
আরেকটি হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, যখন আমানতের মালকে লুটের মাল মনে করবে, জাকাত আদায় করাকে জরিমানা মনে করবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে আর মায়ের অবাধ্যতা করবে, তার বন্ধুকে কাছে আনবে আর তার বাবাকে দূরে সরিয়ে রাখবে, মসজিদে হট্টগোল করবে, দুষ্কৃতিকারী ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দিবে, মানুষ মানুষকে তার অনিষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেতে সম্মান করবে, গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্র প্রকাশ পাবে, মদ্য ও নেশাদ্রব্য পানে অভ্যস্ত হবে, উম্মতের পরবর্তী যুগের লোকেরা পূর্ববর্তী উম্মতের অভিসম্পাত করবেÑ তখন তোমরা লালবায়ু, ভূমিকম্প, জমিন ধসে যাওয়া, ছবি বিকৃত হয়ে যাওয়া, শিলাবর্ষণ ও অন্যান্য নিদর্শনগুলো অনবরত আসার অপেক্ষা করতে থাকবে যেমন মালার এক প্রান্ত থেকে কেটে দেয়া হলে দানাগুলো অনবরত পড়তে থাকে। (তিরমিজি)
উপরি উক্ত হাদিসের প্রতিটি অংশের সত্যতা আজ আমরা পত্রিকা খুললে দেখতে পারি। মাতাপিতার অবাধ্যতার থেকে শুরু করে জাকাতকে ঘৃণা করা, মসজিদে বিবাদ করা, অশ্লীলতার ব্যাপক প্রকাশ ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিরামহীন ব্যবহার দেখতে পাই। কখনো তো মনে হয়, এ করোনাভাইরাস অনেক দেরিতে দেখা দিয়েছে, কারণ হাদিসের প্রতিটি বাণী অনেক পূর্বেই প্রকাশিত হয়েছে।
এখন আমাদের মনে একটি প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের মাঝে অনেক দ্বীনদার মুসলিম থাকা সত্ত্বেও আমরা ধ্বংস হবো? এর উত্তর আরেকটি হাদিসে আছে, যেখানে রাসূল সা: বলেছেন, যদি চরিত্রহীনতা বেড়ে যায় তবে এমনটি হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
২. পরীক্ষা হিসেবে - পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, জান ও মালের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে, তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের (সূরা বাকারা-১৫৫)।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে মুমিনের জন্য প্রতিটি মুসিবত পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং এই মহামারীতে মুমিন হয়তো তার আপনজনকে হারাবে অথবা সে নিজে অসুস্থ হয়ে মারা যাবে অথবা আর্থিকভাবে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এগুলোর প্রতিটি তার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ এই পরীক্ষায় দেখবেন তার কোনো বান্দা বেশি বেশি দান করে, কোনো বান্দা তার আপনজনের মৃত্যুতে সবর করে, আর কোনো বান্দা তাকে বেশি বেশি স্মরণ করে।
ইবনুল কাইউম রহ: বলেন, যদি বালা-মুসিবত না থাকত, কিয়ামতের দিন আমরা সবাই ফকির মিসকিন হয়ে উঠতাম।
৩. রহমত হিসেবে - রাসূল সা: বলেন, মুমিনের ব্যাপারে আল্লাহর যত ফায়সালা, সব তার কল্যাণে নিবেদিত। সে যখন সুখে জীবনযাপন করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, এটি তার জন্য কল্যাণকর। সে যখন মুসিবতে পড়ে সবর অবলম্বন করে এটিও তার জন্য কল্যাণকর। তবে এটি কেবল মুমিনের জন্যই। (মুসনাদে আহমদ)
সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, মহামারীর ব্যাপারটিও মুমিনের জন্য কল্যাণকর। কারণ এ রকম দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সে যদি তার রবের ওপর সবর করে, তবে সে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হবে যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং সর্বদা তাদের সাথে থাকেন। যেমন কুরআনে আছে, নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন (সূরা আনফাল - ৪৬)। অন্যত্র আছে, আল্লাহ সবরকারীদের ভালোবাসেন (সূরা আল ইমরান - ১৪৬)
বস্তুত যখন সমাজের আনাচে-কানাচে প্রতিটি স্তরে স্তরে পাপাচারের বন্যা বয়ে যাবে তখন এ ধরনের মহামারী অবশ্যম্ভাবী। দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ-আপদ, দুঃখকষ্ট, আজাব থেকে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হয় আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরকে বিরত রাখা।
sakib384@gmail.com