ট্রাম্পের ওষুধ ব্যবসা

গৌতম দাস | Apr 18, 2020 10:10 pm
ট্রাম্প

ট্রাম্প - সংগৃহীত

 

খারাপ সময়ে অনেক কিছু ধরে রাখা যায় না; অন্তত খুবই কঠিন হয়ে যায়। পরিচিত চিরচেনা দুনিয়াটাও সে সময়ে হঠাৎ করে খুবই অপরিচিত মনে হতে থাকে। কারণ কোনো কিছুই আর আগের অর্ডার বা পরিচিত নিয়মশৃঙ্খলের মধ্যে নেই, থাকে না দেখতে পাই। আমরাও অধৈর্য হয়ে উঠতে থাকি। কারণ বেঁচে থাকাটাই কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠতে থাকে।

এ সময় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় মানুষের মূল্যবোধ। তা ধরে রাখতে হিমশিম খাওয়া মানুষের মধ্যে বিপর্যয়ও দেখা দিতে পারে। মানে মানুষ কী করে আর কী করে না; করবে না, করতে পারে না। এ পর্যন্ত তৈরি হওয়া ও সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর হতে থাকা এ নিয়ে নতুন বিকশিত ভাবনা- যাকে আমরা মানুষের মূল্যবোধ বলি, তা ধরে রাখা খুবই কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তাই করোনাকাল মানুষের মূল্যবোধ রক্ষা বা ধরে রাখার পরীক্ষায় চরম এক কাল হয়েও উঠতে পারে।

গত চার শ’ বছরের দুনিয়ার অর্থনৈতিক ইতিহাসকে যদি আলোচনায় আনি তবে একে তিনটা বড় কালপর্বে ভাগ করতে পারি। প্রথমটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত যেটাকে ‘কলোনি ইকোনমি’ বা কলোনি-শাসনের ইতিহাস বলতে পারি। এ ক্ষেত্রে অনেকে ক্যাপিটালিজম শব্দ ব্যবহার করে। আমরা ইউরোপের নেতৃত্বে ‘কলোনি ক্যাপিটালিজমের যুগ’ বলতে পারি। এরই দ্বিতীয় পর্যায় বা রূপটা হলো আমেরিকার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গত শতকের মোটা দাগে শেষ পর্যন্ত গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের যুগ। আর তৃতীয় রূপটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে চলতি শতকের শুরু থেকে (প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ২০০৯ সাল থেকে) চীনের নেতৃত্বে এবং ক্রমেই যা আমেরিকার বদলে চীনের প্রভাব দখল বা জায়গা নেয়া হয়ে বেড়েই চলছে।

দ্বিতীয় পর্যায়টায় ভালো অথবা মন্দ বহু দিকই আছে, যার সবকিছু আমেরিকার নেতৃত্বে ঘটেছে। ভালো-মন্দ দুটো মিলিয়েই সেখানে একটা গ্লোবাল অর্থনৈতিক নিয়মশৃঙ্খলা প্রথম হয়েছে। কিন্তু তৈরি হওয়া সেই নেতৃত্ব ও অর্ডার এই প্রথম মানে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে আমেরিকা নিজেই গ্লোবাল নেতাগিরি ও দায় এক প্রেসিডেন্ট স্বেচ্ছায় ত্যাগ করছে। এতে পুরনো গ্লোবালিস্ট নেতা আমেরিকা হয়ে যাচ্ছে ন্যাশনালিস্ট, মানে এক জাতিবাদী আমেরিকা। গত এক শ’ বছরে আমেরিকার এই রূপ দুনিয়া আগে দেখেনি।

যেকোনো সমাজে যার অর্থসম্পদ বেশি সমাজের দাতব্য কাজের উদ্যোগগুলোতে এর ব্যয়ভারের বড় অংশ তাকেই বইতে দেখা যায়। এটা বাস্তব এবং তিনি সামর্থ্যবান বলে এটা গ্লোবাল সমাজসহ সবখানেই সবচেয়ে স্বাভাবিক। তাই গ্লোবাল নেতা তো বটেই, এ ছাড়া আমেরিকা বড় জনসংখ্যা মানে বড় অর্থনীতির দেশ বলেও জাতিসঙ্ঘ ধরনের বহুরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো চালানোর ব্যয়ভারগুলোর বড় অংশের আমেরিকা থেকে জোগান এসেছে, গত ৭০ বছর ধরে। প্রথম এসব ব্যয়ভার আর বইবে না বলে এমন হুমকি দেয়া শুরু হয়েছিল জুনিয়র বুশের আমল থেকে। আর এবার করোনাকালে জাতিসঙ্ঘের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পুরো চাঁদাদানই বন্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন ট্রাম্প। তাও আবার খুবই ঠুনকো ও অপ্রতিষ্ঠিত কিছু অভিযোগ এবং বিশেষত দুনিয়া যখন করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা ও লড়াইয়ে প্রায় স্থবির। খোদ নিউ ইয়র্ক যখন প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া করোনা মৃত্যুর শহর। অথচ এ ফ্যাক্টগুলোর কোনোটাই ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে না। অর্থাৎ করোনা-উত্তরকালেও যে সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারতেন, সেই সিদ্ধান্ত তিনি এখন কোন বিবেচনায় নিলেন- এর সদুত্তর নেই। অর্থাৎ এই প্রথম আমেরিকা শুধু গ্লোবাল নেতৃত্ব থেকে নিজেকে খারিজ হয়ে যাচ্ছে না বরং খোদ রাষ্ট্রটা নিজের জন্যও মূল্যবোধে খামতি বা সঙ্কট তৈরি করছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us