পাকিস্তানের রহস্যজনক ডুবোজাহাজ এক্স-ক্রাফট : উদ্বেগে প্রতিপক্ষ
শিল্পীর চোখে পাকিস্তানের রহস্যজনক ডুবোজাহাজ এক্স-ক্রাফট - সংগৃহীত
পাকিস্তান একের পর এক অস্ত্র তৈরী করে যাচ্ছে। এসব অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষরা চিন্তিত হয়ে আছে। এসব অস্ত্রের শক্তি কতটুকু, ঠিক কী জন্য এগুলো তৈরী করা হচ্ছে, তা নিয়ে বেশ উদ্বেগে আছে প্রতিপক্ষরা। পাকিস্তানের এ ধরনের আরেকটি অস্ত্র হলো সাবমেরিন।
পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমান্ডো স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (নেভি) বা এসএসজির (এন) কাছে রয়েছে রহস্যজনক ডুবোজাহাজ এক্স-ক্রাফট। এ ডুবোজাহাজ সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয় নি। এর উদ্দেশ্য, তৎপরতা এবং কি ধরণের অভিযানে নামবে সে সম্পর্কে কোনও তথ্যও আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
এক্স-ক্রাফট লম্বায় মাত্র ৫৫ ফুট এবং প্রস্থে ৭ বা ৮ ফুট। অর্থাৎ এটি আকৃতিতে প্রচলিত ডুবোজাহাজের ভগ্নাংশ মাত্র। ডুবোজাহাজ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বই পুস্তকে এক্স-ক্রাফট সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এমনকি এইচ আই সুটনের ডুবোজাহাজ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য বই ওয়ার্ল্ড সাবমেরিনস কভার্ট শোরস রিকগনিশন গাইডেও এ নিয়ে তথ্য নেই বলে সম্প্রতি ফোর্বেসে লেখা এক নিবন্ধে স্বীকার করেন তিনি।
পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচির একটি বিশেষ নৌ ঘাঁটি পিএনএস ইকবালে এ ডুবোজাহাজ মোতায়েন আছে বলে দাবি করেন এইচ আই সুটন। পাক নৌবাহিনীর এ বিশেষ ঘাঁটির কথা প্রতিরক্ষা জগতের সবাই জানেন। কিন্তু সেখানে এ বিশেষ ডুবোজাহাজ প্রায় সবার চোখের সামনেই লুকিয়ে রেখে পাক নৌবাহিনী বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
ক্ষুদে এ ডুবোজাহাজকে পাক নৌবাহিনীতে এক্স-ক্রাফট হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ শব্দটি এসেছে ইতালির ডুবোজাহাজের নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কসমসের কাছ থেকে। সাধারণ ভাবে কসমস বলা হলেও এ প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত নাম ইংরেজি অক্ষরে Cos.Mo.S হিসেবে লেখা হয়।
ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনী দ্বিতীয় মহাসমরের সময়ে ক্ষুদে ডুবোজাহাজকে এক্স-ক্রাফট হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর ক্ষুদে ডুবোজাহাজের জন্য এ শব্দটিই শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করেছে কসমস। এক্স-ক্রাফটের মতো ক্ষুদে ডুবোজাহাজকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে ড্রাই কমব্যাট সাবমারসিবল বা ডিসিএস বলা হয়। মার্কিন নৌকমান্ডো বাহিনী সিল ব্যবহার করে এটি। পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমান্ডো স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (নেভি) বা এসএসজি(এন)কে সে দেশে সিল বলা হয়। মার্কিন সিলের সঙ্গে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে থাকেন এসএসজি(এন) সদস্যরা। এসএসজি(নেভি)'র সদর দফতর করাচির পিএনএস ইকবালে অবস্থিত।
পাক নৌবাহিনী তিনটি এমজি-১১০ এক্স-ক্রাফট ব্যবহার করে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালে এ সব ডুবোজাহাজ পাকিস্তান নিজেই তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হয়। এগুলো পুরানো হয়ে গেছে এবং পাক নৌবাহিনী এগুলো বদলে ফেলার কথা ভাবছে। ইতালির কসমস এগুলোর নকশা করেছিল কিন্তু সে প্রতিষ্ঠান দুই দশক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ক্ষুদে ডুবোজাহাজের নকশা করছে ড্রাস নামের খ্যাতনামা আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু ড্রাসের নকশার সঙ্গে পাক ক্ষুদে ডুবোজাহাজের মিল নেই। ড্রাসের নকশা করা সবচেয়ে ক্ষুদ্র ডুবোজাহাজ হলো ডিজি-৮৫ কিন্তু পাকিস্তানের এক্স-ক্রাফট এরচেয়ে একটু লম্বা। ২০১৬ সালে প্রথম পাকিস্তানে এ ডুবোজাহাজ দেখা গেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা উৎপাদন বিভাগ বা এওডিপি’র ২০১৫-১৬ সালের ইয়ারবুক বা বর্ষবইতে বলা হয়, পাকিস্তান ২০১৬-১০১৭ সালে নিজ নকশায় একটি ক্ষুদে ডুবোজাহাজ নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এটাই সে ডুবোজাহাজ কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। এ ছাড়া, তুর্কি এসটিএম’ও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষুদে ডুবোজাহাজ তৈরি করছে বলে খবর এরপর প্রকাশিত হয়েছে।
বাণিজ্যিক উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে এক্স-ক্রাফটকে পানিতে নামার দৃশ্য খুবই কম দেখা গেছে। ২০১৬ সালে এটির পানিতে নামার একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া গেছে। তবে পাক নৌ ঘাটিতে একে ঢেকে রাখা হয়েছে তাঁবু দিয়ে। মাঝে মাঝে তা সরানো হয়। এতে বোঝা যায় এক্স-ক্রাফটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিয়মিতই চলছে। পাক নৌবাহিনী অনর্থক কোনও ব্যয়ভার বহন করবে না। সমর বিশ্লেষকরা মনে করেন, এক্স-ক্রাফটকে বাতিল মনে করার কোনও কারণ নেই। তবে এটি কি ধরণের অভিযানে ব্যবহার হবে তা জানতে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও পথও খোলা নেই।
সূত্র : পার্স টুডে