আসামে তাবলিগের লোকদের করোনার চিকিৎসা দেয়া হবে না!
আসামে তাবলিগের লোকদের করোনার চিকিৎসা দেয়া হবে না! - সংগৃহীত
আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্য কমল কুমার গুপ্ত রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এক চিঠি লিখে বলেছেন যে মার্চের মাঝামাঝি সময় এ রাজ্য থেকে যারা দিল্লির তাবলিগ জামাতের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, তারা ‘জিহাদি’ (অর্থাৎ সন্ত্রাসী), আর এ কারণে তাদের কোভিড-১৯ সংক্রমণের চিকিৎসা করা উচিত নয়।
আসাম ও ভারতের মিডিয়ার একটি অংশ, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ অবাধে ও ক্রমবর্ধমান হারে দায়মুক্তি নিয়েই কোভিড-১৯ মহামারিকে সাম্প্রদায়িক বিষ হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এবং এর ফলে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বাড়ছে।
ভারতের কেন্দ্র ও আসাম রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি এই প্রবণতাকে উৎসাহিত করছে।
আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আসামে করোনাভাইরাসের ত্রাণকাজে ৬০ হাজার রুপি দান করতে চেয়ে যে চিঠি লিখেছেন তাতে কমল কুমার গুপ্তসহ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের ডজনখানেক লোকের নাম রয়েছে।
চিঠিতে গুপ্ত লিখেছেন যে তাবলিগি জামাতের সমাবেশে যোগ দেয়া মুসলিমদের প্রতি সহায়তা নাও দেয়া যেতে পারে।
তবে চিঠিটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি তার জন্য অস্বস্তিদায়ক হলে তিনি চিঠিটির সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান। আসামে বিদেশী সন্দেহে নাগরিকত্ব হারানো লাখ লাখ লোকের জন্য মানবাধিকারকর্মী, গবেষক, আইনজীবী কাজ করছেন। নাগরিকত্ব হারানো লাখ লাখ লোকের কাছে গুপ্তের চিঠি ভয়াবহ বলে মনে হচ্ছে।
আসামের আইন বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা বলছেন, বদ্ধমূল ধারণা পোষণকারী লোকদেরকে নাগরিকত্ব নির্ধারণের জন্য গঠিত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সদস্য করা ঠিক নয়।
আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) ১৯ লাখের বেশি লোকের নাম নাগরিকত্ব থেকে বাদ পড়েছে। তাদের নাগরিকত্ব ফয়সালার জন্য গঠিত হয়েছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল।
প্রখ্যাত আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী আমান ওয়াদুদ বলেন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল হওয়া উচিত নিরপেক্ষ। এখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে পার্থক্য থাকা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা সংবিধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার নাগরিকত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, চিঠিটি প্রত্যাহারেই গোঁড়ামি দূর হয়ে যায় না। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি তার সহজাত বদ্ধমূল ধারণা এতে প্রকট হয়েছে। তিনি বলেন, গুপ্তের মধ্যে থাকা বদ্ধমূল ধারণা মামলার রায়ে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। তাকে নাগরিকত্ব মামলায় সম্পৃক্ত রাখা উচিত হবে না।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তদাররিকে দীর্ঘ প্রয়াসের ফলে ২০১৮ সালের আগস্টে আসাম সরকার এনআরসি নামের ওই তালিকা প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে থাকা রাজ্যটির ৩১.১ মিলিয়ন লোকের নাম স্থান পায়। আর বাদ পড়ে ১.৯ মিলিয়ন লোক।
সমালোচকেরা বলছেন, মুসলিমদেরকে কোণঠাসা করা কিংবা বাছাই করার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আসামের ক্যাম্পগুলোতে রাখা লোকদের দুর্দশা নিয়ে গবেষণাকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্বেষ উস্কে দিতে মিডিয়া, রাজনীবিদ ও লোকজন একযোগে কাজ করছে। গুপ্তের বিবৃতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
তিনি বলেন, এসব লোক কোন পদের? তারা ন্যায়বিচার আর সংবিধান সমুন্নত রাখবেন বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু গুপ্তের মতো পক্ষপাতদুষ্ট লোক কিভাবে ট্রাইব্যুনালে নিরপেক্ষ থাকবেন?
আজাদ সাউথ এশিয়ান মনিটরকে বলেন, আসামে অনেক লোককে স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে বিদেশী ঘোষণা করা হচ্ছে, তারা গুপ্তের মতো লোকদের দয়ার ওপর ভরসা করছে। ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই বিশ্বাসযোগ্যতা খুইয়েছে।
তিনি বলেন, গুপ্তের মতো লোকদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট সুয়োমোটো আনতে বলে আশা করা হচ্ছে।
অল আসাম মুসলিম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রধান আজিজুর রহমান বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তার এ ধরনের মানসিকতা থাকা উচিত নয়। এটি একটি মারাত্মক প্রকাশ্য অবমাননা এবং আমরা এর নিন্দা করি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সরকার এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, তিনি একজন বিচারিক কর্মকর্তা। আমরা এ ধরনের লোকদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারি না। এসব লোককে তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত।
মানবাধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছে, যেসব লোককে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করবে, তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে, তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে রাখা হবে। বর্তমানে আসামের ছয়টি ডিটেনশন কেন্দ্রে এক হাজারের বেশি লোক রয়েছে।
সূত্র : এসএএম