করোনায় আক্রান্ত এক আমেরিকান তরুণের কাহিনী

কাজী আলতাফ হোসেন এমডি | Apr 16, 2020 06:29 am
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি - সংগৃহীত

 

আমার আরেক রোগীর কথা বলি। তিনি যুবক ও ক্রমান্বয়ে সেরে উঠছেন। তিনি ভর্তি হয়েছিলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট নিয়ে। মারাত্মক রকমের নিউমোনিয়া নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তার কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে। রোগটির বিরুদ্ধে তার শ্বাসযন্ত্র (লান্স) বুঝি বিজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে আসার পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে তার। এখন আর অক্সিজেন দিয়ে রাখা হচ্ছে না তাকে। নিজে নিজেই শ্বাস নিতে পারছেন। হয়তো তাকে রিলিজ দেয়ার সময় হয়ে উঠছে। তাকে রিলিজ দেয়া হলো এবং ডিনারের পর তিনি বাড়ি যাবেন। দিনের শেষ দিকে নার্স এসে আমাকে জানালেন, ওই যুবকটি চলে যেতে চান না। কেন চান না সেটা নার্সকে তিনি বলেননি, আমাকে জানাতে চান। কোভিড-১৯ রোগীর সাথে দূরত্ব বজায় রাখার কারণে আমি কথা বলার জন্য তার রুমে ফোন দিলাম। তিনি যা বললেন, তা অতি সাধারণ ঘটনা হলেও আমি শুনে অবাক হলাম। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাস করেন তিনি। সেখানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করে চলা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তিনি সে বিষয়টিই জানালেন আমাকে।

যুবকটি বললেন, স্ত্রী ও তার ছোট্ট এক শিশুকে নিয়ে থাকেন তিনি। এক বেডরুমের অ্যাপার্টেমেন্ট বাসা। তখন আমি বুঝতে পারলাম তার সমস্যাটা কোথায়। কেন তিনি তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে যেতে চান না। তার স্ত্রী বা সন্তানটাকে তিনি সংক্রমিত করতে চান না। ছোট্ট ওই অ্যাপার্টেমেন্টে তিনি নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারবেন না। এমনকি একই রুমে এবং একই বাথরুম ব্যবহার করে তিনি সবাইকে নিরাপদে রাখতে পারবেন না।
আসলে এ বিষয়ের সমাধান আমারও নেই। সামর্থ্যে যেটুকু কুলায় তার বেশি কিছুই করার নেই আমার। আমি তাকে হাসপাতালে আরো এক রাত রেখে দিলাম। পরের দিন সকালে তিনি হাসপাতাল ছাড়লেন এবং কোয়ারেন্টিন পালন করা পর্যন্ত তিনি একটি হোটেলে গিয়ে উঠলেন। যদিও হোটেলের ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য তার নেই। হোটেল বিল পরিশোধ করবেন তার ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে, যা তিনি আগামী দিনগুলোতে উপার্জন করে পরিশোধ করবেন।
এ সময়ে আমরা কী-ই বা করতে পারি?

আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীটা যেন থেমে আছে। লন্ডন, ব্রাসেলস ও লস অ্যাঞ্জেলেসের ভূকম্পন বিজ্ঞানীরা ভূকম্পন শব্দের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, পৃথিবী নামক এই গ্রহে মোটরযান, গাড়িঘোড়া, কলকারখানা ও অন্যান্য যানবহান চলাচল একেবারেই কমে গেছে। কোনো উড়োজাহাজ উড়ছে না। কোনো শব্দের কম্পন হচ্ছে না, বুলডোজার্সের ভাঙনও থেমে গেছে। আকাশে তীক্ষè দৃষ্টিতে থাকা ভূ-উপগ্রহ পৃথিবীটাকে দেখতে পাচ্ছে আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও নির্মল। পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল হয়ে উঠছে পরিষ্কার ও অমলিন। আমাদের এই পৃথিবীটা যেন এখন নিঃশ্বাস নিতে পারছে। পৃথিবী পৃষ্ঠে মানুষের ব্যস্ততা থেমে যাওয়ার কারণে ভূকম্পন কমে গেছে।
এই ধরিত্রীকে মানুষ কত কষ্টই না দিয়েছে এত দিন!

সম্পদের প্রতি লোভ-লালসায় আমরা পৃথিবীকে চুষে চুষে খেয়েছি। আমাদের তৈরি যন্ত্রযানগুলো নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বাতাসে বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। পৃথিবীর আবহাওয়াকে প্রতিদিনই আরো বিষাক্ত ও উষ্ণ করে তুলেছে। আমাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক দিয়ে ভরে ফেলেছি সাগর মহাসাগরকে। তাদের ভেতরের প্রাণী ও প্রকৃতিকে মেরে ফেলেছি। উষ্ণতায় পৃথিবীর বরফকে গলিয়ে ফেলছি।

আমরা এখন আইসোলেশনের ছ্ট্টো ঘরে বন্দী। মুখে মুখে এন-৯৫ মাস্ক পড়ে থাকি। আর সে কারণেই পৃথিবী সত্যিকার অর্থে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। কোভিড-১৯ ভাইরাসের মাধ্যমে প্রকৃতি কী আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে, এই পৃথিবী নামক গ্রহটি আমাদেরকে আর তার প্রয়োজন মনে করছে না? আমরা কি পৃথিবীর জন্য কোভিড-১৯ ভাইরাসের মতো মারাত্মক হয়ে গেছি?


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us