একটি বানরের গল্প

জসিম উদ্দিন | Apr 15, 2020 09:03 pm
একটি বানরের গল্প

একটি বানরের গল্প - সংগৃহীত

 

এক বড় ভাই একটি গল্প বলেছিলেন। তিনি এর ভালো রেফারেন্স আছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। গল্পটি একটি বানর ও তার বাচ্চা নিয়ে। বানরের উচ্চবুদ্ধিমত্তা সবার জানা। মানুষের পর যদি প্রাণিজগতে আর কারো নাম নিতে হয়, তাহলে বানরের নামটি আসে সবার আগে। ঘটনাটি ছিল একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের। বানরটি ছিল বাচ্চাসমেত একটি বাড়িতে খাঁচায় বন্দী।

বাড়িতে আগুন লাগার পরপরই বানরটি টের পেয়েছিল। সে জানত, আগুন শেষ পর্যন্ত তার খাঁচাটিও পুড়িয়ে দেবে। সে নিজের বাচ্চার নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তাকে কিভাবে বাঁচানো যায় সেটাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। বাচ্চাটিকে নিয়ে সে বিভিন্ন ধরনের কসরত করতে লাগল। একবার কোলে তুলে নেয়, একবার মাথায় নেয়। আগুন যতই কাছাকাছি আসছিল, এ নিয়ে তার উৎকণ্ঠাও বাড়ছিল। কারণ তার বাচ্চাটিকে বাঁচাতে হবে।

তার চেঁচামেচি ভাব ভাষায় এ সময় কেবল বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্নতা প্রকাশ পেয়েছিল। ঠিক আগুন যখন খাঁচার নিচ দিয়ে হানা দিলো, মুহূর্তের মধ্যে বাচ্চাটিকে সে মাথায় তুলে নিলো। আগুন যখন সত্যি সত্যি খাঁচার নিচের অংশটি পুড়ে ফেলছিল, তখন আগুনের কঠিন উত্তাপে তার পা-ও ঝলসে যাচ্ছিল। এ ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে বানরটি নিজের মাথার ওপর থেকে বাচ্চাটিকে নিচে ছুড়ে ফেলে দিলো। বাচ্চাকে পায়ের নিচে দিয়ে আসন্ন উত্তাপ থেকে নিজের পা বাঁচাতে চাইল। নিজেকে রক্ষার জন্য সামান্য একটি অবলম্বন হিসেবে বাচ্চাটির শরীরকে ব্যবহার করল।

প্রথম থেকে বানরটি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেনি। নিজে মরে গিয়ে হলেও বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা ভেবেছে। প্রকৃত বাস্তবতা যখন সামনে এলো- সব ভুলে আসন্ন বিপদ মোকাবেলা করতে চাইল। সেখানে নিজের বাচ্চার প্রতি মায়া-মমতা আর মূল্য পায়নি। বাচ্চাটিকেই আসন্ন ব্যথা উপশমের জন্য ব্যবহার করেছে। পায়ের নিচে ফেলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্বস্তি পেতে চেয়েছে। বানরটির ঠিক এ চেহারাটি আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। সঙ্কটের ভয়াবহতা তাকে এমন নিষ্ঠুর করতে বাধ্য করেছে। প্রকৃতপক্ষে এমন বিপদে পড়ে কেউ কি তার অস্তিত্বের বিনিময়ে অন্যকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেয়ার জন্য আত্মবলিদান করতে পারে?

মানুষের ক্ষেত্রে এর একটি সম্পর্ক কি রয়েছে? বলা হয়- বিপদে বন্ধুর পরিচয়। সঙ্কটে এলে সে তার মূল চরিত্রে স্বচেহারায় প্রকাশিত হয়। বিশেষ করে করোনার মতো ভয়াবহ বিপদ মানুষের সামনে আসায় মানুষকে নতুন করে চেনা যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে রক্ত, আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো এখন যাচাই হয়ে যাচ্ছে। আগুনের মতো কঠিন দহনের কষ্ট ছাড়াই মানুষ অন্যের প্রতি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করছে।

করোনায় ইউরোপের করুণ অবস্থার কথা আমরা জানি। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। হাসপাতালগুলো রোগীদের জায়গা দিতে পারছে না। কিন্তু কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেখবর কিংবা অন্যের অবহেলার পাত্র হয়ে মারা যাচ্ছে এমনটি ঘটছে না। এখনো জানা যাচ্ছে, কেউ বিপদগ্রস্ত হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হচ্ছে। এটা উন্নত ইউরোপের একটা ভালো নজির। কল্যাণরাষ্ট্র বলতে যা বোঝায় তা তারা বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে। এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কথা। পরিবার ও নিকটাত্মীয়রা সে ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হলেও রাষ্ট্র কিন্তু সেই ভূমিকা পালন করছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us