করোনা লকডাউন : ফুঁসে উঠেছেন অভিবাসী শ্রমিকরা
করোনা লকডাউন : ফুঁসে উঠেছেন অভিবাসী শ্রমিকরা - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য আবারো লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এতে ফুঁসে উঠেছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। মঙ্গলবার তারা মুম্বাই নগরীর বান্দ্রা রেলস্টেশনে জড় হয়ে বাড়িতে ফেরার সুযোগ দানের দাবিতে বিক্ষোভও করেছেন। ফলে করোনা মোকাবিলায় নতুন মাত্রার সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানীতে এই বিক্ষোভকে সরকারের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। লকডাউনের কারণে দেশটির সবচেয়ে গরিব ও নাজুক নাগরিকদের জীবিকা অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
চলতি সপ্তাহেই ভারতের হীরক কাটিং ও পলিশিং শিল্পের কেন্দ্র সুরাটে এক হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিক তাদের বকেয়া বেতন ও বাড়ি যাওয়ার যানবাহনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এসব শ্রমিক মূলত পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে ঊড়িষ্যা থেকে এসেছে।
২২ মার্চ থেকে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিক মুম্বাইয়ে আটকা পড়ে আছে। ওই দিন থেকে সারা ভারতে বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ। এর আগে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে জনগণ একদিনের জন্য ‘জনতা কারফিউ’ নামে প্রতীকী লকডাউন পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এরপর তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করলে গোটা দেশ অচল হয়ে পড়ে। তখন থেকে কোন গণপরিবহন চলেনি, স্বাভাবিক কাজকর্মও শুরু হয়নি।
মোদি মঙ্গলবার আবারো লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। আজ বুধবার আগের লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিলো। ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা ১০,৮০০ ছাড়িয়ে গেছে।
অনেক আশা করেছিলো বুধবার থেকে লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল হবে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হবে। বিশেষ করে গম কাটার মওসুম এটা। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকার এখনো কিছু বলছে না। তবে কিছু মিডিয়া বলছে যে অভিবাসী শ্রমিকদের বাড়ি পৌছে দিতে ট্রেন সার্ভিস চালু হতে পারে।
একদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ ও অন্যদিকে অর্থনীতির ধসে পড়া ঠেকানোর জন্য কুস্তি করছে মোদি প্রশাসন। দেশটির অর্থনীতি লকডাউনের আগেই দীর্ঘ মন্দার মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো। এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি থেমে গেছে।
নিশ্চল হয়ে পড়া শিল্পাঞ্চলগুলোতে অনেক অভিবাসী শ্রমিক আটকা পড়েছে। আয়বিহীন অবস্থায় পরিবার থেকে অনেক দূরে পড়ে আছে তারা। ফলে তাদের ধৈর্য্য ফুরিয়ে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার বান্দ্রা স্টেশনে জড় হওয়া শ্রমিকদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায় পুলিশ।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, কাজের খোঁজে শ্রমিকরা গিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে। গত তিন সপ্তাহ লকডাউনে তাঁদের না আছে কাজ, না হাতে টাকাপয়সা। মঙ্গলবার বিকেলে বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া সেই শ্রমিকেরাই গিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন মুম্বাইয়ের বান্দ্রা স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে। ছিলেন দেশের অন্য প্রান্তের শ্রমিকেরাও।
ওই শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা সকলেই কপর্দকশূন্য। বেশিরভাগই অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সকলেই বলছেন, বাড়ি ফিরতে দেওয়ার দাবিতে আবেদন করা সত্ত্বেও বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা তো দূর, খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়নি। তারপর মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতায় অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি বলেই বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ দেখান বলে জানান ওই শ্রমিকদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, খাবার বা বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা না হলে বুধবার তাঁরা হেঁটেই বাড়ির দিকে রওনা দেবেন।
মহারাষ্ট্র জুড়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহের অনেক শ্রমিকের বাস। তাঁরা মূলত নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত। লকডাউনে বহুতল নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা কর্মহীন। এ দিন যখন বিক্ষোভ দেখাতে তাঁরা বান্দ্রায় জড়ো হন, বিহারের অনেক শ্রমিকও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। বিক্ষোভে ছিলেন কালিয়াচক ২ ব্লকের ধল্লা গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান।
ফোনে তিনি বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউনে আমাদের শোচনীয় অবস্থা। খাবার জুটছে না। সরকারি ভাবে ত্রাণও মিলছে না। রাস্তায় বার হলে পুলিশ মারধর করছে। ভেবেছিলাম আমাদের মতো শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কোনও বার্তা দেবেন। কিন্তু তিনি কিছুই বলেননি। বরং লকডাউন ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আতাউরের কথায়, এমনিতেই এখন খেতে পাচ্ছি না। আরো ১৯ দিন কী ভাবে কাটাব?
আতাউর এবং তার সঙ্গীরা জানান, সে কারণে তারা বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিকদের ডাকে বান্দ্রা স্টেশন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। আতাউর বলেন, আমাদের একটাই দাবি, বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। বিক্ষোভে সামিল হন কালিয়াচক খালতিপুরের আব্দুল মোমিন, রশিদুল শেখ, জামশেদ আলিরা। তাঁরা বলেন, “সরকার ব্যবস্থা না করলে হেঁটেই রওনা দেব।
সূত্র : এসএএম