বাবার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন
ডা. মঈন উদ্দিন - সংগৃহীত
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুর খবরে কেবল তার জন্মমাটি ছাতক নয়, সিলেট এবং সেইসাথে পুরো বাংলাদেশের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার মৃত্যুর বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
মঈন ছিলেন এক মানব দরদি চিকিৎসক। সর্বমহলে তিনি ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। মৃত্যুর আগে ছেলেকে বলেছিলেন এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন। পল্লী চিকিৎসক পিতার কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের ছাতকের নাদামপুরে ছুটে আসতেন তিনি। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এলাকার মুরুব্বী সোহেল আহমদ বলেন, ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোন রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন।
জানা যায়, ডা. মো. মঈন উদ্দিন ১৯৭৩ সালের ২ মে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি ধারণ নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং ১৯৯০ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তিনি এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করেন।
২২তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ স্বাস্থ্য ক্যাডারে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালের ২০ মে তিনি ওসমানী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. মঈনুদ্দিনের স্ত্রী ডা. রিফাত জাহান সিলেটের বেসরকারি পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও এ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (চলতি দায়িত্ব)। তার বড় ছেলে জিহাদের বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলে জায়ানের বয়স ৭ বছর। তারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে।
তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ৫ম ডা. মঈন উদ্দিনের বড় ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী শফিক উদ্দিন বছর খানেক পূর্বে সেখানে মারা গেছেন। মেঝভাই সিরাজ উদ্দিনও মারা যান কয়েক বছর পূর্বে। তার তিনবোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
ডা. মঈন উদ্দিন সিলেটে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্যোগে গঠিত সিলেট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে তিনি এ হাসপাতালের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিসহ আরো কয়েকটি কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।
সিসিক মেয়রের শোক করোনাভাইরাসে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এক শোক বার্তায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
সিলেট মহানগর জামায়াতের শোক
সিলেটের বিশিষ্ট চিকিৎসক, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিনের ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দ। মরহুমের মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা।
এক শোক বার্তায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নায়েবে আমীর হাফিজ আব্দুল হাই হারুন ও মো. ফখরুল ইসলাম, সেক্রেটারী মাওলানা সোহেল আহমদ বলেন, সিলেটের চিকিৎসা অঙ্গনের প্রিয়মুখ ও জনদরদী চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিনের ইন্তেকালে সিলেটবাসী একজন মানবতাবাদী চিকিৎসককে হারালো। যা সহজে পূরণ হবার নয়। তিনি আজীবন মানবতার কল্যাণে কাজ করে গেছেন। করোনা মহামারীর এই কঠিন সময়েও তিনি রোগীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। যার ফলে তিনি নিজে করোনা আক্রান্ত হন। আল্লাহ ডা. মঈন উদ্দিনকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও পরিবারবর্গকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।