সু চির দেশে সংবাদপত্র দমন
সু চি - সংগৃহীত
গত ২৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার মতো বাজে। পুলিশ মান্দালয়ভিত্তিক এক সম্পাদকের বাড়ি ঘিরে ফেলে তাকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেফতার করে। তার অপরাধ, তিনি রাখাইনের এক বিদ্রোহী প্রতিনিধির সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিলেন।
এক দিন পর পুলিশ রাখাইনের রাজধানী সিত্তুবির নারিনজারার একটি সংবাদপত্র অফিসে অভিযান চালায় এর সম্পাদককে গ্রেফতার করার জন্য। তিনিও বিদ্রোহী মুখপাত্রের সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিলেন। ওই সিনিয়র সাংবাদিক তখন অফিসের ছিলেন না, এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
পুলিশ তিনটি কম্পিউটার জব্দ ও নারিনজারার তিন সাংবাদিককে আটক করে। ওই সন্ধ্যায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এরপর ২৪ মার্চ ইয়াঙ্গুনভিত্তিক খিত থিট মিডিয়ায় অভিযান চালায় পুলিশ, এডিটর-ইন-চিফকে গ্রেফতার করতে। তিনি ওই বিদ্রোহী মুখপাত্রের একই সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছিলেন। ৬ এপ্রিল থেকে তিনি কোথায় আছেন, জানা যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময়ে আং সান সু চির দেশের কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালাচ্ছে, রাখাইনের অস্থিরতার কভারেজ দেয়া নিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, জাতিগত সঙ্ঘাত নিয়ে খবর প্রকাশের জের ধরে ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করে দেয়া হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনটি নিউজ সাইটের সম্পাদক সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ-সংবলিত গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে আছেন।
গত ২৪ মার্চ মান্দালয়ভিত্তিক এক সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালতে সন্ত্রাসবাদ আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর শাস্তি তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী, সরকারি নিরাপত্তা লঙ্ঘন করলে বা জনসাধারণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করলে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আর সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করলে তিন থেকে সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে।
তারা স্রেফ তাদের দায়িত্ব পালন করেছে
অধিকার গ্রুপগুলো অবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর থেকে অভিযোগ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করছে, এতে করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে, দেশে তথ্যের প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া আইন উপদেষ্টা ২ এপ্রিল বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্ব করেছে। অথচ এসব সাংবাদিক তথ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের সিনিয়র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিনিধি শন ক্রিসপিন বলেন, সশস্ত্র সঙ্ঘাত নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা আর সন্ত্রাসী হওয়া এককথা নয়। আর সাংবাদিকদের যাবজ্জীবনের জন্য কারাদণ্ড দেয়াটা অগ্রহণযোগ্য।
মহামারির মধ্যেও সঙ্ঘাতের তীব্রতা
বিশ্বনেতারা যখন কোভিড-১৯ দমন করায় ব্যস্ত তখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিন রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির সাথে জাতিগত সঙ্ঘাতে নিয়োজিত।
২০০৯ সালে গঠিত আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। সরকার ২৩ মার্চ তাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন ও কারেনি ন্যাশনাল প্রগ্রেসিভ পার্টির মতো জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপগুলো কোভিড-১৯-এর কারণে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর রাখানে চলছে আরেক সঙ্ঘাত। উল্লেখ্য, সামরিক বাহিনীর অভিযানের মুখে রাখাইন থেকেই সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের আগস্টে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে গিয়েছিল।
দীর্ঘতম ইন্টারেনট বিচ্ছিন্নতা
ভুয়া খবর প্রকাশ ও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির দাবি করে সরকার অন্তত ২২০টি ওয়েবসাইট বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাখাইনসহ জাতিগত সঙ্ঘাতের খবর প্রচারকারী স্থানীয় নিউজ ওয়েবসাইটগুলোও রয়েছে এর মধ্যে।
রাখাইন ও প্রতিবেশী চিন রাজ্যে ২০১৯ সালের জুন থেকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিশ্বে কোনো দেশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার এটিই দীর্ঘতম সময়।
আরাকান ন্যাশনাল পার্টির নিম্ন পরিষদ এমপি পে থান বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনে অভিযোগ আনা হলে তা অন্য সাংবাদিকদেরও একটি বার্তা পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে এটি ভালো ইঙ্গিত নয়।
মিয়ানমারে করোনাভাইরাসে ২২ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, আর মারা গেছে একজন। ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ কোটি লোকের দেশটিতে করোনার পরীক্ষা করা হয়েছে ১,২৪৬টি।
ইউসিএএন নিউজ