সিঙ্গাপুরে করোনা : প্রবাসীশ্রমিকদের কাছে বিভীষিকা
সিঙ্গাপুরে করোনা : প্রবাসীশ্রমিকদের কাছে বিভীষিকা - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস ঠেকাতে যেসব দেশ খুবই প্রশংসা অর্জন করেছিল, তার অন্যতম ছিল সিঙ্গাপুর। সবাই দেশটির প্রশংসায় ছিল পঞ্চমুখ। কেন? কারণ, তারা সবার আগে এমনসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, যা অন্যরা ভাবতেই পারেনি। এমনকি এই রোগের যখন নামকরণও করা হয়নি, সিঙ্গাপুরে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বহনকারীদের ব্যাপারে অন্যদের সাবধান করার কাজ শুরু হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হুহু করে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে সে দেশে।
বৃহস্পতিবারে এক দিনে সে দেশে নতুন ২৮৭ জন করোনারোগী শনাক্ত করা হয়, যেখানে তার আগের দিনের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪২।
নতুন এই সংক্রমণ প্রধানত হচ্ছে অভিবাসীদের কলোনিগুলোতে যেখানে অল্প জায়গার মধ্যে অনেক মানুষ বলতে গেলে গাদাগাদি করে থাকে। ফলে এতদিন লকডাউনের পথ পরিহার করলেও, সিঙ্গাপুরকে এখন বাধ্য হয়ে আংশিক লকডাউন করতে হচ্ছে।
স্কুল বন্ধ করা হয়েছে, এবং জরুরি নয় এমন সব ব্যবসা প্রতিষ্টান বন্ধ করা হয়েছে। মানুষজনকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে কোথায় কোথায় ভাইরাস ছড়িয়েছে?
বিদেশ থেকে ভাইরাস শরীরে বয়ে এনে ছড়ানো ঠেকাতে, বিদেশ ফেরত সমস্ত লোকজনকে এখন পরিবারে না রেখে সরকারি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে। এখন অবশ্য খুব কম মানুষই সিঙ্গাপুরে ঢুকছে, ফলে সরাসরি তাদের মাধ্যমে সংক্রমণের সংখ্যাও এখন দ্রুত পড়ে গেছে।
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরে নতুন একটি আইন জারি করা হয়েছে যার অর্থ, মুখে না বললেও, দেশব্যাপী আংশিক লকডাউন। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে গেলে ১০,০০০ সিঙ্গাপুর ডলার পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের জেল হতে পারে।
অধ্যাপক টিও এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন, এবং বলেন তারপরও সামনের দিনগুলোতে হয়ত সংক্রমণের সংখ্যা বেশি হতে পারে, কিন্তু এটা কাজে দেবে।
কিন্তু গত সপ্তাহে যে হারে সংক্রমণ সিঙ্গাপুরে বেড়েছে তার সিংহভাগ শিকার হয়েছে সেখান অভিবাসী শ্রমিকরা। লাখ লাখ এসব শ্রমিক সেখানকার নির্মাণ শিল্প, শিপিং এবং রক্ষনাবেক্ষণে কাজ করে। অর্থনীতি সচল রাখতে সিঙ্গাপুরকে এদের ওপর নির্ভর করতেই হবে।
কিন্তু যেসব জায়গায় এই অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করে বা থাকে, তাদের পক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব।আইন অনুয়ায়ী এই শ্রমিকদের সুনির্দিষ্ট কিছু হস্টেল বা ডরমিটরিতে থাকতে হয়।
বেসরকারিভাবে পরিচালিত এসব অনেক ডরমিটরিতে এক ঘরে ১২ জন পর্যন্ত শ্রমিক থাকে। এরা বাথরুম, রান্নাঘর এবং আরো অনেক কিছু শেয়ার করে।
ফলে, এসব শ্রমিক ডরমিটরি যে করেনাভাইরাসের ক্লাস্টারে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য, এবং হয়েছেও তাই।প্রায় পাঁচশ কোভিড-১৯ কেস পাওয়া গেছে এরকম কয়েকটি শ্রমিক ডরমিটরিতে।
সিঙ্গাপুরে এখন পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে তার ১৫ শতাংশই এসেছে এরকম একটি মাত্র ডরমিটরি থেকে।অনেক শ্রমিক উপসর্গ নিয়েও কাজ করতে গেছে।আর এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে বা তারপর সিঙ্গাপুরে সংক্রমণের সংখ্যা অনেক বাড়বে, অনেক নতুন রোগী তৈরি হবে।
সূত্র : বিবিসি