ভারতকে মোকাবিলার পরমাণু নীতি পাকিস্তানের

হারিস বিলাল মালিক | Apr 13, 2020 08:40 am
ভারতকে মোকাবিলার পরমাণু নীতি পাকিস্তানের

ভারতকে মোকাবিলার পরমাণু নীতি পাকিস্তানের - সংগৃহীত

 

ভারত ১৯৯৯ সালে ‘খসড়া পরমাণু নীতি’ (ড্রাফট নিউক্লিয়ার ডকট্রিন- ডিএনডি)) প্রণয়ন করার পর থেকে দেশটি তার পরমাণু নীতিতে ক্রমশ পরিবর্তন আনছে। ভারতের প্রাথমিক অবস্থান ছিল এই যে তারা প্রথমে হামলা করবে না (নো ফার্স্ট ইউজ- এনএফইউ)। তবে এই খসড়ার প্রথম পরিবতৃন আনা হয় ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে। ইন্ডিয়ান ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটিস (সিসিএস)-এর পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই পরিবর্তন আনা হয়। এতে বলা হয় যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কিংবা এর জনগণ যদি রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রে আক্রান্ত হলে ভারতের অধিকার আছে তার পরমাণু অস্ত্র দিয়ে প্রতিক্রিয়া দেয়ার। এর পরপরই ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে আগাম পরমাণু হামলার ধারণা জেঁকে বসে। অধিকন্তু, অতি সম্প্রতি আরেকটি পরিবর্তন দেখা গেছে। ২০১৯ সালের ১৬ আগস্ট ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জোর দিয়ে বলেছেন যে ভবিষ্যতের পরিস্থিতির আলোকে ভারত তার এনএফইউ নীতি পর্যালোচনা করতে পারে। এ ধরনের প্ররোচনা পাকিস্তানকে তার ‘কুইড প্রো কোও প্লাস’ (ইটের বদলে পাটকেল) নীতি আরো শক্তিশালী করার দিকে ঠেলে দেয়। কারণ ভারতের পরমাণু ও প্রচলিত হুমকির বিরুদ্ধে এটিই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, দক্ষিণ এশিয়ার বর্তমান নিরাপত্তা কাঠামো বিবর্তিত হচ্ছে পরমাণু শক্তিধর ভারতের দায়িত্বহীন আচরণকে ঘিরে। আঞ্চলিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ভারতের আকাঙ্ক্ষার কারণে পাকিস্তানকে তার নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে পরমাণু ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হচ্ছে। ভারতের ঘোষিত এনএফইউ নীতির বিপরীতে এ ধরনের কোনো প্রতিশ্রুতি পাকিস্তান দেয়নি। বরং ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমেই পরমাণু হামলা চালাবে কিনা সে ব্যাপারে কোনো কথা না বলে বিষয়টিকে পরিকল্পিতভাবে দ্ব্যার্থবোধক অবস্থায় রেখে দিয়েছে। পাকিস্তানের পরমাণু শক্তির ভিত্তি হলো ‘ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্য ভীতি প্রদর্শন।‘ অর্থাৎ পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র হলো নীতিগতভাবে আত্মরক্ষামূলক। আর এর মাধ্যমে তারা ভারতের যেকোনো ধরনের আগ্রাসনের জবাব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এর অর্থ হলো এই যে ভারত যদি লাল রেখা অতিক্রম করে, তবে পাকিস্তান প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে না। এ কারণে পাকিস্তানের কুইড প্রো কোও প্লাস (কিউপিকিউপি) নীতি পরমাণু অস্ত্র ও প্রচলিত সক্ষমতা অর্জনের সমন্বয় সাধনে জোর দিচ্ছে। তারা একেই যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য কৌশল মনে করছে।

পাকিস্তানের কুইড প্রো কোও প্লাস নীতির মাধ্যমে ভারতকে এ কথাও বলে দেয়া হচ্ছে যে তারা যে পাকিস্তানের পরমাণু সক্ষমতাকে খাটো করে না দেখে। তাছাড়া পাকিস্তান তার ভূখণ্ডগত ও আদর্শগত অখণ্ডতা সুরক্ষিত রাখতে অন্য সব বিকল্পও বহাল রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতের সীমিত ও স্বল্প-তীব্রতার সঙ্ঘাত- যেভাবেই হোক না কেন, ভারতের যেকোনো হামলার জবাব দিতে পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্য প্রচলিত সামরিক সক্ষমতাও অর্জন করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যেই প্রণীত হয়েছে ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স (এফএসডি)। ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নয়, বরং সীমিত বা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ প্রতিরোধের সক্ষমতার দিকে নজর পাকিস্তানের। কেবল পরমাণু শক্তিই নয়, প্রচলিত সামরিক শক্তিও তাই অর্জন করেছে। অবশ্য, প্রচলিত যুদ্ধে ভারত অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। এ কারণে ভারতের বিপরীতে প্রচলিত ও পরমাণু সমীকরণে পাকিস্তানকে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে পাকিস্তানের পরমাণু মতবাদ ও নীতির লক্ষ্য হলো তার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এই লক্ষ্যে পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি করায়ত্ত করেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র নাসর ভারতের সীমিত যুদ্ধ নীতির জবাবে মোতায়েন করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে ভারতের স্বল্প-তীব্রতার যুদ্ধ প্রতিরোধ করা ও যুদ্ধে আধিপত্য রোধের পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান। অধিকন্তু মাল্টিপল ইন্ডিপেডেন্টলি রি-এন্ট্রি ভেহিক্যালস (এমআইআরভি), স্থল, বিমান ও সাগর-চালিত ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন, সাগরভিত্তিক সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটির ব্যবস্থা- সবই কুইড প্রো কোও প্লাস নীতির অংশ।

বর্তমানে ভারত দৃশ্যত নিজেকে আঞ্চলিক শক্তি ও সম্ভাব্য পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে। ভারতের নীতি হলো পাকিস্তানের বিদ্যমান শক্তিকাঠামোকে অস্থিতিশীল করা। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের নজর কেন্দ্রীভূত থাকা দরকার তার পূর্ব সীমান্তের দিকে। ভারতের সমান তালে শক্তি বাড়াতে চায় না পাকিস্তান। তবে ভারতের হুমকির ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানকেও সাম্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই তার সক্ষমতার চেয়ে বেশি শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং প্রচলিত অস্ত্র ও পরমাণু শক্তির সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমেই কেবল তার নিরাপত্তা সুরক্ষিত ও শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। ইটের বদলে পাটকেল নীতির ভিত্তিতেই ভারতকে সংযত রাখতে পারবে পাকিস্তান।

মডার্ন ডিপ্লোমেসি

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us