ডলার সঙ্কটে দিশাহারা ব্যবসায়ীরা

আশরাফুল ইসলাম | Apr 13, 2020 06:42 am
ডলার সঙ্কটে দিশাহারা ব্যবসায়ীরা

ডলার সঙ্কটে দিশাহারা ব্যবসায়ীরা - সংগৃহীত

 

বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে রেমিটেন্স আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে আসছে না রফতানি বিল। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহে ইতোমধ্যে টান ধরেছে ব্যাংকিং খাতে। আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না না ব্যবসায়ীরা। রফতানির বিপরীতে যে ব্যাক টু ব্যাক এলসি করা হয়, রফতানি আদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায়ও পরিশোধ করতে পারছেন না অনেকেই। এমনি পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রানীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। রফতানির বিপরীতে আমদানির দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বড় অংকের আমদানি দায়ও তিন মাস অন্তে পরিশোধের নির্দেশনা শিথিল করে এককালীন পরিশোধের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও অনেক উপকৃত হবেন।
জানা গেছে, আমাদের রফতানি আয়ের প্রধান বাজারগুলো ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে বিদেশী ক্রেতারা রফতানি আদেশ বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালির বড় বড় ক্রেতারা রফতানি আদেশ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন দেশের তৈরী পোশাক রফতানিকারকরা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার। ফলে দেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে যে পরিমাণ পণ্য রফতানি করা হয়েছিল ওই রফতানি আয়ের অর্থও দেশে আসছে না। অপর দিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরাও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। এতে রেমিটেন্স প্রবাহও শূন্যের কোটায় চলে এসেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যারা ইতোমধ্যে পণ্য আমদানি করেছিলেন তারা।

সাধারণত রফতানির বিপরীতে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয় তার দায় তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডলারের সঙ্কটে ব্যবসায়ীরা আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছেন না। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে গতকাল এক জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, যারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে পারছেননা তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডিএফ থেকে ৬ মাসের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা হবে। ওই অর্থ দিয়ে তারা আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারবেন।

এ দিকে ৫ লাখ ডলারের ওপরে কোনো পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হলে তাকে বড় অংকের আমদানি বলা হয়। সাধারণত, বড় অংকের এলসি এককালীন পরিশোধ করা হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ বেড়ে যায়। এ চাপ কমানোর জন্য বড় অংকের এলসির দায় পণ্য দেশের আসার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর পরিশোধ করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে করোনার প্রভাব আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও পড়েছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরই এখন শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রভাবে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় অংকের এলসির দায় নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। অর্থাৎ, তিন মাস অন্তে পরিশোধ করতে পারছে না। এমনি পরিস্থিতিতে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার এ নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, তিন মাস অন্তে বড় অংকের এলসির দায় পরিশোধের সিদ্ধান্ত আপাতত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ, এ সময়ের মধ্যে কেউ পরিশোধ না করে এককালীন পরিশোধ করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো এতদিন নিজেদের মজুদ থেকে ব্যবসায়ীদের চাহিদা মিটিয়ে এসেছেন কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না। মজুদ অনেকেরই শেষ হয়ে গেছে। কারণ কোনো রফতানি বিল দেশে প্রত্যাবাশিত হাচ্ছে না। আসছে না রেমিট্যান্স প্রবাহ। সবমিলে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ শিথিলতা ব্যাংক এবং গ্রাহক উভয়ের জন্যই ভালো হবে বলে তারা মনে করেন।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us