মহামারীর সময় ইসলামের নির্দেশ
মহামারীর সময় ইসলামের নির্দেশ - সংগৃহীত
মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য পৃথিবীতে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সঙ্কট বা মহামারী দিয়ে থাকেন। ইসলামের পরিভাষায় এগুলোকে ‘ফিতনা’ বলা হয়। ফিতনা শব্দটি আরবি। বাংলায় এর অর্থ পরীক্ষার বস্তু বা পরীক্ষার মাধ্যম। শত বিপদ বা মহামারীতেও যারা আল্লাহর দেয়া বিধানের ওপর অটল থাকে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী ইসলামের বিধানের অনুসরণ করে এবং নামাজ, রোজাসহ ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লহর সাহায্য প্রার্থনা করে তারাই মূলত সফলতা লাভ করে থাকেন।
মহামারী, আসমানি দুর্যোগের ক্ষেত্রে ইসলামী বিশ্বাস হলোÑ সব রোগের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ কোনো রোগ বা মহামারী সৃষ্টি করতে পারে না এবং তা দিতেও পারে না। মানুষ, প্রাণী বা কোনো শক্তির ক্ষমতা নেই কোনো রোগ দেয়ার বা ছড়ানোর। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছা তাকে রোগ দেন বা মহামারীতে নিমজ্জিত করেন। এমনিভাবে রোগের কোনো ক্ষমতা নেই যে, নিজে নিজে কাউকে আক্রান্ত করবে। আল্লাহ যাকে চান তাকে আক্রান্ত করেন। আর যাকে চান তাকে মৃত্যু দেন। আর আল্লাহ যাকে কোনো বিপদ বা মৃত্যু দেন তা তিনি মানুষ সৃষ্টির আগেই তা লিখে রেখেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ সূরা হাদিদ ২২ নম্বর আয়াত বলেন, পৃথিবীতে এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যে যেই বিপদই আসুক তা আগ থেকেই লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ আছে। আর এটা আল্লাহর কাছে অতি সহজ।
হজরত হুজাইফা রা: বর্ণনা রাসূল সা: বলেন, ‘মানুষের অন্তরে চাটাইয়ের এক একটা কাঠির মতো করে ফিতনা উপস্থাপন করা হবে। যার অন্তরে সেই ফিতনা পান করিয়ে দেয়া হবে সে অন্তরে একটা কালো দাগ পড়ে যাবে। আর যার অন্তর তা অস্বীকার করবে সে অন্তরে একটা সাদা দাগ পড়ে যাবে। সুতরাং এই ফিতনা অন্তর দু’টিতে এমন হবে যে, একজনের অন্তর সাদা পাথরের মতো হবে। সুতরাং তাকে ফিতনা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, যত দিন আসমান-জমিন বহাল থাকবে। আর অন্যটা উল্টানো কলসের মতো ধূসর রঙের কালো পাথরের মতো হবে। সে কোনো ভালো কাজ চিনবে না এবং কোনো খারাপ কাজকে অস্বীকার (খারাপ মনে) করবে না। তাকে যে প্রবৃত্তি পান করিয়ে দেয়া হয়েছে তা ছাড়া।’ Ñমুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর-২৩১
যখন কোনো যুদ্ধবিগ্রহ ঘটবে, যা মানুষের ঈমানের সাথে সম্পর্কিত অথবা কোনো মহামারী আসবে তখন মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের কর্তব্য হলো কঠিম মুহূর্তে ইসলামী আকিদা ও বিশ্বাসে অটল থাকবে। এই ইসলামী বিশ্বাস তাকে সব আতঙ্ক ও ভয় থেকে নিশ্চিন্ত করবে। আর মনের মধ্যে শান্তি এনে দেবে।
হজরত মুহাম্মদ সা: রোগ সংক্রমণের ব্যাপারে বলেন, ‘ছোয়াচে বলতে কিছুই নেই।’ বুখারি, হাদিস নম্বর- ৫৭১৭
মুহাম্মদ সা: যখন এ হাদিস বললেন তখন এক গ্রাম্য সাহাবি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তা হলে উটের কী অবস্থা হয়? তারা বালুকাময় স্থানে চরে বেড়ায়। দেখতে মনে হয় যেন তারা হরিণ। তার পর তাদের সাথে এসে মিশে খোঁচ-পাঁচড়াওয়ালা উট। তার পর সেই উটটি ওই সব উটকে খোঁচ-পাঁচড়াওয়ালা বানিয়ে দেয়।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তা হলে প্রথম উটটাকে কে খোঁস-পাঁচড়াওয়ালা এনে দিয়েছিল?’ বুখারি, হাদিস নং - ৫৭৭০
কিন্তু কোনো জায়গায় এরকম মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়লে ইসলামে তার জন্য সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। আর তা হলো যেখানে কোনো মহামারী ছড়িয়ে পড়বে সেখানে অন্য জায়গার সুস্থ মানুষজন সেখানে যাবে না। এ সম্পর্কে মুহাম্মদ সা: বলেন, ‘ছোঁয়াচে বলতে কিছুই নেই, কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই, হুতুম পেঁচার কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই, সফর মাসের কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। আর তুমি কুষ্ঠ বা প্লেগ রোগী থেকে ওই রকমভাবে ভাগ (দূরে থাকো) যেমন তুমি সিংহ থেকে ভাগ (দূরে থাকো)।’ বুখারি, হাদিস নম্বর - ৫৭০৭
মুহাদ্দিসগণ এ হাদিসের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, রাসূল সা: হাদিসের শুরুতে সংক্রমণ ও ছোঁয়াচে এবং কুলক্ষণকে না করেছেন এবং হাদিসের শেষে সিংহ থেকে যেভাবে মানুষ দূরে থাকে প্লেগ বা এ-জাতীয় সংক্রামিত রোগী থেকে সেভাবে দূরে থাকার কথা বলেছেন। কারণ ছোঁয়াচে বলতে তো বাস্তবে কিছুই নেই। কিন্তু সুস্থ ব্যক্তি কোনো মহামারী রোগে আক্রান্ত রোগীর কাছে গেলে আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে তিনিও (সুস্থ ব্যক্তি) ওই রোগে আক্রান্ত হবেন। আক্রান্ত হওয়ার পর সে ধারণা করবে যে, আমি ওই জায়গায় যাওয়ার কারণে ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছি। এভাবে তার অন্তরে শিরক বাসা বাঁধবে। আর সে শিরকে লিপ্ত হয়ে যাবে। এ জন্য রাসূল সা: তাকে আগ থেকেই সেখানে যেতে নিষেধ করেছেন; যাতে তার অন্তরে শিরক স্থান করতে না পারে। অন্য এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘তোমরা অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে নিয়ে যেও না।’ বুখারি, হাদিস নং - ৫৭৭৪
এ হাদিসও উপরি উক্ত হাদিসের অনুরূপ রাসূল সা: শিরকের দরজা বন্ধ করার জন্য বলেছেন যে, তোমরা অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির কাছে নিয়ে যেও না।