করোনা বিপর্যয় : মুসলিমদের ৬ দায়িত্ব
করোনা বিপর্যয় : মুসলিমদের ৬ দায়িত্ব - সংগৃহীত
আমরা মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, পুরো পৃথিবী আমাদের জ্ঞান আর মেধা দিয়ে পরিচালনা করি। হিংস্র বাঘ, সিংহ, নেকড়েকে খাঁচায় বন্দী করি রাখি। ‘ভয়’ শব্দটা আমরা ‘জয়’ করি সর্বদা। কিন্তু আজ সামান্য একটি ক্ষুদ্র অণুজীবের কাছে পুরো পৃথিবীর মানুষ বন্দী হয়ে আছি, যা চোখেও দেখা যায় না।
কভিড-১৯ ‘করোনা ভাইরাস’ পুরো পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। হাজার মানুষের প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক চাকা বন্ধ করে দিচ্ছে।
কেন হচ্ছে এটি? এই ভাইরাসটি পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আমরা কেউ এর সঠিক ব্যাখ্যা জানতে পারছি না। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন গণমাধ্যমÑ করোনাভাইরাস সম্পর্কে নানা ধরনের, অনেক সময় পরস্পর বিরোধী মন্তব্য করছেন।
এই মুহূর্তে কেন, কিভাবে এই ভাইরাস উৎপত্তি হয়েছে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমাদের উচিত, এই মহামারী থেকে নিজেকে, পরিবারকে, দেশের মানুষকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে ভাবা।
মানব সভ্যতা সৃষ্টির পর হতেই মানুষের নানা কর্মের মাধ্যমে অর্জিত মহামারী, বিপদ দ্বারা নিজের ধ্বংস ডেকে আনছে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেনÑ ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ [সূরা-রুম, আয়াত-৪১]
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না, আর এর মধ্য থেকেই আমাদের সতর্ক হতে হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই মহামারীতে যা করা উচিত তা হলো-
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, যা ইসলামেরই একটি অংশ। পাঁচ ওয়াক্তে নামাজে পাঁচবারের অজুতে ছোট গুনাহের পাশাপাশি জীবাণুও ঝরে যায়। বর্তমানে অজুতে হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার করাটাই উত্তম।
২. সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাড়িতে থাকুন, খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না, ধর্মীয় ও বিভিন্ন ধরনের বই পড়ুন। এই সময়টায় পরিবারকে সময় দিন, কুরআন তেলওয়াত করুন যথা সম্ভব অর্থসহ।
৩. এই সময়টিতে বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তেগফার করুন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: বলেছেনÑ
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহতায়ালা তার সব সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দিবেন।’ [আবু দাউদ]
আমরা জানি না নিজের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে কত ভুল করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত, আর তাওবা তথা ভুল বা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে সে কাজ থেকে সরে আসাই পারে আমাদের উত্তরণের পথ দেখিয়ে দিতে।
৪. দান-সদকাহ করা। মহামারীর সময়গুলোতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে পড়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর। আমরা সাধ্যমতো ওই সব মানুষকে দান-সদকা করার মাধ্যমে আমাদের পূর্ণতা অর্জন ও তাদের জীবন যাত্রার মান স্বাভাবিক করতে পারি।এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই দান-সদকাহ (মানুষের) পাপাচারের কারণে আল্লাহর গজবের যে আগুন সৃষ্টি হয় তাকে নিভিয়ে দেয়; যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ [তিরমিজি] তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমাদের এই দান-সদকাহ যাতে লোক দেখানো না হয়।
৫. বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, দোয়া মানবজীবনে প্রশান্তির পাশাপাশি তকদিরেরও পরিবর্তন আনে। দোয়া কেবল নিজের জন্যই নয়। সমস্ত মানবজাতির জন্য করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।’ [সূরা - মু’মিন, আয়াত - ৬০ ]
৬. যেকোনো বিপদ, মহামারী সংঘটিত হলে একজন মু’মিনের উচিত ধৈর্যধারণ করা এবং সালাত আদায় করা, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। [আবু-দাউদ ] মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আর তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।’ [সূরা-বাকারা, আয়াত-৪৫]
পরিশেষে বলা যায় আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী, তবে আমরা চাইলে আমাদের সতর্কতা, ঈমান ও আখলাকের মাধ্যমে সমস্ত বিপদ মহামারী থেকে পরিত্রাণের চেষ্টা করতে পারি। মহান আল্লাহ পৃথিবীতে শান্তি বর্ষিত করুন। মানবজাতিকে হেদায়াত দান করুন। আল্লাহ গাফুরুর রাহিম, আমাদের সব গুনাহ মাফ করে এই মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (আমিন)
শরীফবাগ কামিল মাদরাসা, ধামরাই