যেসব দেশের ওপর অবরোধ দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র
ট্রাম্প - সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে ইরান, উত্তর কোরিয়া, সুদান, কিউবা, ভেনিজুয়েলা, বেলারুশ, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, চীন, কমোরস, কঙ্গো, ইকুইটরিয়্যাল গিনি, ইরিত্রিয়া, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, মিয়ানমার, নিকারাগুয়া, পাপুয়া নিউগিনি, রাশিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, তুর্কমেনিস্তান, ইউক্রেন, ইয়েমেন ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে।
এ দিকে গোটা মানব পরিবার আজ মোকাবেলা করছে করোনাভাইরাসের এক ভয়ানক পরিস্থিতি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যেও বদ্ধপরিকর এসব দেশের ওপর কয়েক দশকের নিষেধাজ্ঞা ব্যাপকভাবে অব্যাহত রাখতে। সে নিষেধাজ্ঞা এসব দেশে মানুষের দুর্ভোগ যতই বেড়ে চলুক, কিংবা মারা যাক অগণিত মানুষ- তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু যায়-আসে না। এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে এক দিকে, অন্য দিকে চলবে সরকার বদলের প্রয়াসও।
ছলে-বলে-কৌশলে এবং প্রয়োজনে আরোপিত সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘটিয়ে সেসব দেশে পুতুল সরকার বসাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মরিয়া। এর বিপরীতে এসব দেশের মানুষও দৃঢ়প্রত্যয়ী তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে শুধু জাতিসঙ্ঘ সনদই লঙ্ঘন করেনি, একই সাথে লঙ্ঘন করে চলেছে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন। এই কনভেনশন মতে, যৌথভাবে শাস্তিদান (কালেকটিভ পানিশমেন্ট) হচ্ছে একটি যুদ্ধাপরাধ। এর ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘ঘড় ঢ়ৎড়ঃবপঃবফ ঢ়বৎংড়হ সধু নব ঢ়ঁহরংযবফ ভড়ৎ ধহ ড়ভভবহপব ঃযধঃ যব ড়ৎ ংযব ফরফ হড়ঃ ঢ়বৎংড়হধষষু পড়সসরঃ.’এর সার কথা হচ্ছে, কোনো সংরক্ষিত ব্যক্তিকে এমন কোনো অপরাধের জন্য শাস্তি দেয়া যাবে না, যে অপরাধ সে নারী বা পুরুষ ব্যক্তগতভাবে করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র এখন যে নিষেধাজ্ঞা ইরানের ওপর জারি রেখেছে, তা নিশ্চিতভাবেই একটি ‘কালেকটিভ পানিশমেন্টেরই’ উদাহরণ। এর ফলে ইরানের সাধারণ নাগরিকদের স্বাস্থ্য-বিপর্যয়ের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। এসব নাগরিককে সরকারের অবলম্বিত কোনো নীতির জন্য কোনোভাবেই দায়ী করা যায় না। উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে- ‘ওষুধপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কখনোই কোনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। কিন্তু ইরানে ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, থেলাসেমিয়া ও মাল্টিপল স্কে¬রোসিস-সহ ৩০ ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ওষুধ তৈরির উপাদানের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কারণ ইরানকে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না। তা ছাড়া সেখানে রয়েছে ৪০ হাজার হেমোফাইলিয়াক রোগী, যারা এন্টি-ক্লটিং ওষুধ ব্যবহার করতে পারছে না। এক হিসাব মতে, ২৩ হাজার ইরানি এইডস রোগে আক্রান্ত। এদের বাঁচিয়ে রাখার মতো ওষুধ ইরান আমদানি করতে পারছে না এই মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে।’
আমরা যদি বড় দাগে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের শিকার তিনটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আনি, তবে দেখতে পাব কী করে করোনাভাইরাসজনিত সঙ্কটের সময়েও যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে কতটুকু অমানবিক আচরণ করছে এসব দেশের নাগরিক সাধারণের সাথে। ইরান ১৯৮০ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার শিকার একটি দেশ। এর কারণ ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছামতো সব নির্দেশনা মেনে চলতে অস্বীকার করে আসছে। দেশটি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য সংগ্রামের পক্ষ নেয়। শুধু কথায় নয়, কাজের মধ্য দিয়ে ইরান তা প্রমাণ করে। এর ফলে ইরান হয়ে ওঠে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট। ইরান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, এই করোনাভাইরাস সঙ্কট যত জটিল আকারই ধারণ করুক, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সহায়তা গ্রহণ করবে না। তবে দেশটি আইএমএফের কাছে অর্থসহায়তা চেয়েছে। কিন্তু সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্র তা বন্ধ করে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে প্রবল প্রভাববলয় জারি রেখেছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির ওপর। তবে চীন ও কিছু ইউরোপীয় দেশ ইরানকে অর্থসহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে।