যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ছড়িয়েছে যারা
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ছড়িয়েছে যারা - সংগৃহীত
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই কী কাল হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখন দিন-রাত এক করে ফেলছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। আর তা করতে গিয়ে তন্নতন্ন করে খোঁজা হচ্ছে কোভিডের ‘সুপার বাহক’দের। সাধারণ সর্দি-জ্বর, শ্বাসকষ্টকে আমল না দিয়েই অনেকেই স্রেফ স্বাস্থ্য সচেতনতার বুলি আউড়ে অবাধে মেলামেশা করে গিয়েছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে। নিজেদের অজান্তেই যমদূতকে আহ্বান করে গেছেন দিনের পর দিন।
ফেব্রুয়ারির শেষের কথা। তখন সবে মার্কিন মুলুকে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে কোভিড-১৯। শিকাগো শহরকে পুরোপুরি তালাবন্দি করার চিন্তাভাবনা করছে মার্কিন প্রশাসন। শহরের এক ব্যক্তি তখন সামান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। সর্দি-কাশির উপসর্গও রয়েছে তার। এমন সামান্য শারীরিক সমস্যা নিয়ে কে আর বাড়িতে বসে থাকতে চায়? ওই ব্যক্তিও বসে থাকেননি। একের পর এক যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তখনো তার ধারণাতেই আসেনি, তিনি মারণ কোভিডের ‘সুপার বাহক’ হয়ে উঠছেন! এবং করোনার থাবাকে প্রসারিত করছেন! এর ঠিক তিনদিন বদে ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট বাড়ল। অন্যান্য উপসর্গও বেড়েছে। সে সব অগ্রাহ্য করেই তিনি শামিল হলেন একটি জন্মদিনের পার্টিতে। সবার সঙ্গে হইহুল্লোড় করলেন। একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করলেন। যখন জানা গেল ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত, ততদিনে কমপক্ষে ১৫ জন ব্যক্তিকে সংক্রামিত করে দিয়েছেন তিনি একাই। আমেরিকার রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা (সিডিসি)’র তথ্য বলছে, আক্রান্ত ও ১৫ জন ব্যক্তির মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছেন। আরোবেশ কয়েকজন সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
করোনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির নেপথ্যে এটি একটি উদাহরণমাত্র। শিকাগোর ওই ব্যক্তির মতো আমেরিকার বহু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই নিজেদের অজান্তে কোভিডের বিস্তারচক্রকে মদত দিয়ে গিয়েছেন অবলীলায়। সেই কারণেই লকডাউন কড়াকড়ি হওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত শিকাগো, নিউ ইয়র্ক কিংবা নিউজার্সির ব্যস্ততায় কোনও ছেদ ছিল না। আসলে, শিকাগো কিংবা গোটা মার্কিন মুলুকের মানুষের ভাবখানা ছিল এই রকম-আমাদের এখানে কোভিড দাঁত ফোটাতেই পারবে না। শুধু কি সাধারণ মানুষের এই আত্মবিশ্বাস? এমন বদ্ধমূল ধারণা ছিল এক মার্কিন সাহিত্যিকেরও। তাঁর কথায়, টুইন টাওয়ারে আল কায়েদার বিধ্বংসী রূপ দেখার পর ওই মার্কিন সাহিত্যিক বলেছিলেন, ‘এতদিন আমেরিকাকে জেনেছি এমন একটি দেশ হিসেবে যেখানে কোনওদিন এমন কিছু ঘটবে না, যা এই দেশটিকে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মতো বিপন্ন করে দেবে। এই প্রথম বুঝলাম আমেরিকার প্রতিটি মানুষ পৃথিবীর অন্য সব মানুষের মতোই বিপন্ন। অনিশ্চিত। তাঁরাও পায়ের তলায় মাটি হারিয়ে ফেলছেন।’
করোনার দাপটে আজ সত্যিই পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না আমেরিকার আম জনতা। অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলায় নেমে নাস্তানাবুদ অবস্থা মার্কিন প্রশাসনের। চূড়ান্ত স্বাস্থ্য সচেতন দেশ হিসেবে বিশ্বের প্রথম সারিতে থাকা আমেরিকায় কেন এত দ্রুত মহামারী ছড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু করেছে সিডিসি। তাদের গভীর অনুসন্ধান হয়তো আগামী দিনে কোভিডের মতো মহামারীর প্রাদুর্ভাব রোখার কোনও নতুন পথের দিশা দেখাবে গোটা বিশ্বকে।
সূত্র : বর্তমান