ভারতের ট্যাঙ্ক বাহিনীকে নিমিষেই ধ্বংস করে দেবে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র!
ভারতের ট্যাঙ্ক বাহিনীকে নিমিষেই ধ্বংস করে দেবে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র! - সংগৃহীত
বিশ্বের সব দেশের মধ্যে মাত্র ৯টি পরমাণু অস্ত্র তৈরী করেছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এই এক্সক্লুসিভ ক্লাবের এক সদস্য হলো পাকিস্তান। এই দেশটি ভারত উপমহাদেশে বিশেষ কৌশলগত অবস্থান দখল করে আছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মিত্র ও ভারতের চিরবৈরী পাকিস্তান তার নিজস্ব বিশেষ প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেই পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। এমনটা ছোট ছোট দেশে দেখা যায় না। পাকিস্তান এমন ধরনের পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করেছে, যা দিয়ে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুবাহিনীকে ধ্বংস করতে পারবে।
পাকিস্তান তার পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের কাজ শুরু করে ১৯৫০-এর দশকে। তবে ১৯৭০-এর দশকে ভারত তার প্রথম পরমাণু অস্ত্র ‘স্মাইলিং বৌদ্ধ’ পরীক্ষা করার পর পাকিস্তানের তার পরমাণু কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজের অবসানের পর থেকে শত্রু হিসেবে বিরাজমান ভারত ও পাকিস্তান ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে। পাকিস্তান মনে করে, ভারত যত দিন পরমাণু অস্ত্রের একক মালিক বনে থাকবে, তত দিন দেশটি সামরিক হামলার হুমকি দিয়ে যাবে এবং চূড়ান্ত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করে, পাকিস্তানের হাতে ১৫০ থেকে ১৮০টি পরমাণু বোমা আছে। পাকিস্তানের হাতে হামলা চালানোর মতো বোমা কবে নাগাম এসেছিল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে, তবে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি নাগাদ তাদের হাতে বেশ কয়েকটি বোমা চলে আসে। ভারতের কয়েকটি পরমাণু বোমা পরীক্ষার জবাবে পাকিস্তান ১৯৯৮ সালের ২৮ মে পাকিস্তান একই দিনে ৫টি ডিভাইসে বিস্ফোরণ ঘটায়। দুই দিন পড়ে ঘটায় ষষ্টটির। এসব ডিভাইসের ৪টি এক হাজার টিএনটি থেকে ২-৩ কিলোটনের।
টেকটিক্যাল নিউক্লিয়ার অস্ত্রকে নন-স্ট্র্যাটেজিক পরমাণু অস্ত্রও বলা হয়। এগুলোর মাত্রা থাকে স্বল্প (১০ কিলোটন বা এর কম) এগুলো তৈরী করা হয় যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। বড়গুলোর বিপরীতে আরো শক্তিশালী কৌশলগত পরমাণু অস্ত্রগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে সামরিক টার্গেট ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। শত্রুর ফরমেশন, সদরদফতর ইউনিট, সরবরাহ ডাম্প ও অন্যান্য উচ্চ মানের টার্গেটে এসব বোমা দিয়ে হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষানীতিতে টেকটিক্যাল পরমাণু অস্ত্র বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। পাকিস্তানের জিডিপি মাত্র ৩০৫ বিলিয়ন ডলার, আকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের সমান। পাকিস্তানের অ্যাক্টিভ ডিউটি আর্মি ৭,৬৭,০০০। বেশির ভাগ সদস্য পদাতিক হলেও একটি অংশ ট্যাঙ্ক, ইনফেন্ট্রি ফাইটিং ভেহিক্যাল, সেল্ফ-প্রপেলড আর্টিলারি, অ্যাটাক্ট হেলিকপ্টার ও ট্যাঙ্কবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে সুসজ্জিত।
ভারতের জিডিপি ২,৫৯৭ বিলিয়ন ডলার, অ্যাক্টিভ আর্মি ১.২ মিলিয়ন, প্রতিটি বিভাগ অনেক ভালোভাবে অস্ত্রে সজ্জিত। ভারতীয় সেনাবাহিনী সবদিক থেকেই এগিয়ে। সর্বাত্মক স্থল যুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আধিপত্য থাকবে।
তবে প্রচলিত যুদ্ধে ভারতের সুবিধা ভণ্ডুল করে দিতে পারে পাকিস্তানের এই পরমাণু অস্ত্র।
পাকিস্তানের কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র কয়টি আছে, তা জানা যায় না। তবে তাদের ডেলিভারি সিস্টেম গুণে একটি ধারণা পেতে পারি। বুলেটিন অব দি অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টস দাবি করেছে যে পাকিস্তানের হাতে ২০-৩০টি ট্রান্সপোর্টার-ইরেক্টর-লঞ্চার (টিইএল) ভেহিক্যাল আছে। এগুলো নাসর/হাতফ-৯ স্বল্প পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করার জন্য তৈরী করা হয়েছে। টিইএল হলো ফোর-এক্সেল ভেহিক্যাল, এটি দুই বা এর বেশি নাসর ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। প্রতিটি টিইএল দুটি করে নাসর ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারলে পাকিস্তানের হাতে ৬০টি কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র আছে বলে ধরা যেতে পারে। আর তা হলো তার অস্ত্রভাণ্ডারের এক-তৃতীয়াংশ।
নাসর হলো সলিড রকেট ফুয়েল ক্ষেপণাস্ত্র। এটির পাল্লা মাত্র ৪৩ মাইল। বুলেটিনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের বড় কোনো টার্গেটে ব্যবহার করা যাবে না। এর মানে হলো, পাকিস্তানি ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনাবাহিনী ঢুকে পড়লেই তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করবে। এতে খুবই স্বল্প মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটে। আর কোনো দেশই চাইবে না তার নিজের ভূখণ্ডে বড় ধরনের পরমাণু বোমার বিস্ফোরণ ঘটুক।
একটি মজার প্রশ্ন জাগে এক্ষেত্রে। আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃতি হলো খুবই দ্রুত, আর আধুনিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া খুবই মন্থর। এই প্রেক্ষাপটে কি পাকিস্তান তার সেনাবাহিনীকে আগুয়ান ভারতীয় ট্যাঙ্ক মোকাবিলার অনুমতি দিয়ে রেখেছে? ভারতীয় ট্যাঙ্ক আসার পর যদি বিতর্ক শুরু হয়, তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর টিইএলগুলোর কোনো ব্যবহারের দরকার পড়বে না। কারণ মাত্র কয়েক মিনিটও যদি দেরি হয়ে যায়, তবে এক বা এর বেশি ব্যাটিলিয়ন ট্যাঙ্ক ঢুকে পড়বে, তখন আর এর চেয়ে বড় বোমাতেও কাজ হবে না।
পাকিস্তানের কৌশলগত পরমাণু অস্ত্রগুলো রক্ষণাত্মক প্রকৃতির। তবে কোনো এক পক্ষের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে দ্রুত উভয় দেশের জনবহুল এলাকাগুলোতে এর ব্যবহার ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পাকিস্তান ও ভারত কি তাদের পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করবে? প্রচলিত যুদ্ধে যে দুর্বলতা আছে, তা পূরণ করার জন্য পাকিস্তান কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র প্রয়োজন। আর একবার পরমাণু অস্ত্র আয়ত্বে আনার পর তা ত্যাগ করা একেবারেই কঠিন। আর পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম নয়।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট