ভারতের হিন্দি বলয়ে করোনা হানা!

বাসুদেবন শ্রীধরন | Apr 11, 2020 08:09 am
ভারতের হিন্দি বলয়ে করোনা হানা!

ভারতের হিন্দি বলয়ে করোনা হানা! - সংগৃহীত

 

ভারতে নজিরবিহীন ২১ দিনের লকডাউনের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের নিশ্চিত সংখ্যা ৫,৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটির ঐতিহাসিক উত্তর-দক্ষিণ লড়াই কেবল আরো বেড়েছে।

রাজনৈতিক ক্ষমতা বনাম উন্নয়নের ফ্রল্ট লাইনগুলো অনেক দিন ধরেই অস্তিস্তশীল। ভারতের উত্তর অংশে জনসংখ্যা বেশি। তারা প্রাধান্য সৃষ্টিকারী ভাষা হিন্দিকে ব্যবহার করে অঞ্চলটিকে সহজাত ক্ষমতার ঘাঁটিতে পরিণত করেছেন। আর দক্ষিণ দিকের রাজ্যগুলোতে বাস করে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ। এসব এলাকার স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ভালো।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় এই দুই অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে পরিচালিত করোনাভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর প্রায় অর্ধেকই (২০২টির মধ্যে ৯৭টি) দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিল নাড়ু, কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা, কেন্দ্রশাসিত এলাকা পদুচেরি ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে। অথচ এসব এলাকায় ভারতের মোট ১৩০ কোটি জনসংখ্যার মাত্র এক-তৃতীয়ংশ বাস করে।
পরীক্ষার তদারকিতে নিয়োজিত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ যখন রাজ্যভিত্তিক করোনা আক্রান্ত নির্ধারণের প্রয়াস নিয়েছে, তখন দেখা গেল, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ টেস্টিং স্যাম্পল আসতে শুরু করেছে।
জানুয়ারির শেষ দিকে থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষা করা ১,২৭,০০০ নমুনার মধ্যে অর্ধেকের বেশি এসেছে তামিল নাড়ু, কেরালা, কর্নাটক, অন্ধ্র প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারিটি মোকাবিলায় দক্ষিণাংশ অনেক দ্রুত প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা তাদের চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও অনেক আগে প্রস্তুত রেখেছে। অথচ রাজধানী নয়া দিল্লি পর্যন্ত সাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল (সাড়ে ২৩ কোটি) রাজ্য উত্তর প্রদেশে ভাইরাস পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১১টি। এই রাজ্যে অর্থের অভাবে শিশুদের টিকা প্রদান কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। আর এখানে শিশু মৃত্যুর হার কেরালার চেয়ে ১০ গুণ বেশি। কেরালার চেয়ে এখানে গড় আয়ু কম ১০ বছর।
অথচ, ভারতের সবচেয়ে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হচ্ছে উত্তর প্রদেশ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দিল্লিসহ আশপাশের এলাকাগুলো থেকে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক এখানে এসেছে।
অনেকে আশঙ্কা করছেন, ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে হঠাৎ করেই কোভিড-১৯ বেড়ে যাবে। অথচ কেন্দ্র তাদের অর্থ যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। আবার দক্ষিণের রাজ্যগুলোও করোনা মোকাবিলায় অর্থ চেয়েছে কেন্দ্রের কাছে।

গত জুলাই মাসে ভারত সরকারের নীতি নির্ধারণী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক নিতি আয়োগের স্বাস্থ্য সূচকে দেখা যায়, দেশে উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো তথা উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আর দক্ষিণাংশ অনেক ভালো করছে।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে করোনাভাইরাসে ভারতের সবচেয়ে বসতিপূর্ণ হিন্দু ভাষাভাষী কেন্দ্রভূমি (বেশির ভাগ উন্নয়ন সূচকে অনেক পেছনে থাকা) করোনাভাইরাসে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হতে পারে।
পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে ২০১৭ সালে পণ্য ও পরিষেবা ট্যাক্স প্রবর্তনে। এর ফলে রাজ্যগুলোর রাজস্ব বাড়ানোর সক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা আগেই কেন্দ্রীভূত থাকার পাশাপাশি এখন তহবিলও কেন্দ্রের মুঠোয় চলে গেছে।

গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ন্যাশনাল হেলথ সিস্টেমস রিসোর্স সেন্টারের সাবেক পরিচালক টি সুন্দরামন বলেন, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা বা হিমাচল প্রদেশের মতো ক্লাসিক হিন্দি-ভাষাভাষী বেল্টে থাকা রাজ্যগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, এখানে পরীক্ষা আসলে শুরুই হয়নি।
তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে ৭ কোটি জনঅধ্যুষিত তামিল নাড়ু রাজ্য এক লাখ টেস্টিং কিটের অর্ডার দিয়েছে। অথচ সাড়ে ২৩ কোটির রাজ্য উত্তর প্রদেশ কয়টির অর্ডার দিয়েছে?
তিনি বলেন, অনেক রাজ্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা না করেই কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ কম করে দেখাচ্ছে। অথচ দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে সমস্যাটি অনেক প্রকট।

এসসিএমপি

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us