ট্রাম্পের এক ধমকেই কাজ হাসিল!
ট্রাম্প - সংগৃহীত
ম্যালেরিয়াপ্রতিরোধী ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের রফতানির ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করতে রাজি হওয়ায় ভঅরতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য মনে হচ্ছে, এর আগে ট্রাম্প যে হুমকি দিয়েছিলেন, তার ফলেই ভারত রাজনৈতিকভাবে বাধ্য হয়েছে ওই সিদ্ধান্ত নিতে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট সুস্পষ্টভাবেই বলেছিলেন যে ভারত যদি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তবে ‘প্রতিশোধ’ গ্রহণ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করেছেন, বিশেষ সময়ে বন্ধুদের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। ধন্যবাদ ভারত ও ভারতের জনগণকে এইচসিকিউ নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। আমরা ভুলব না! এই লড়াইয়ে কেবল ভারত নয়, মানবতাকে সহায়তা করার জন্য আপনার দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আপনাকে ধন্যবাদ।
এর আগে হোয়াইট হাউসে দৈনন্দিন ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ওষুধটি রফতানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি আমরা পছন্দ করছি না। এটি মোদির সিদ্ধান্ত, তা আমরা শুনতে চাই না।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানী আর চিকিৎসা বিশেজ্ঞরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন করোনাভাইরাস চিকিৎসায় সম্ভাব্য ওষুধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে। নিউ ইয়র্কে এই ওষুধ দিয়ে ১৫ শ’র বেশি লোককে চিকিৎসা করা হয়েছে। তবে কোনো কোনো বিজ্ঞানী বলছেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এর নিরাপদ ও কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে আরো পরীক্ষা প্রয়োজন।
প্রাথমিকভাবে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাওয়ায় ট্রাম্প ধারণা করছেন যে এই ওষুধটিতে কাজ হবে। এ কারণেই তিনি করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় ২৯ মিলিয়ন ডোজ হাইড্রোক্সিক্লোকুইন কিনেছেন।
বিশ্বের মোট হাইড্রোক্সিক্লোকুইন চাহিদার ৭০ ভাগ সরবরাহ করে ভারত। এই তথ্য ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের (আইপিএ) মহাসচিক সুদর্শন জৈনের।
ভারতের প্রতি মাসে ৪০ টন হাইড্রোক্সিক্লোকুইন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এ দিয়ে ২০০ এমজি করে ২০ কোটি ট্যাবলেট বানানো সম্ভব। আর ওষুধটি রিউমেটোইড আর্থাইটিস ও লুপাসের মতো স্বয়ংক্রিয় রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হওয়ায় উৎপাদনকারীদের তা বাড়ানোর ভালো সক্ষমতা রয়েছে।
ভারতের আর কোনো বিকল্প ছিল না
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, কয়েকটি কারণে রফতানির অনুমতি দেয়া ছাড়া ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। মহামারিতে আমেরিকাকে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হয়েছে এবং দেশটির নেতৃত্ব দৃশ্যত লোকরঞ্জক বাগাড়ম্বড়তার ওপর নির্ভর করছিল জনসাধারণের আস্থা অবিচল রাখতে। এ কারণে ভারত যদি ওই ওষুধটির দরজা না খোলে, তবে তারা যে দেশটির বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারত।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্তের পক্ষে সম্ভব সব ধরনের সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছে এবং দেশটির স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ধারণাকে নস্যাৎ করে দেয়ার ধারণা নাকচ করে দিতে চাইছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীভাস্তব বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে আমাদের সামর্থ্যের ওপর নির্ভরশীল প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্যারাসিটামল ও হাইড্রোক্সিক্লোকুইনের লাইসেন্স আমরা দেব।
তিনি বলেন, আমরা মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি দেশে অপরিহার্য ওষুধ সরবরাহ করছি।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪,৬০০ লোক মারা গেছে, নিউ ইয়র্কে মৃত্যু হয়েছে ৭৯৯ জনের। অধিকন্তু, মার্কিন কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে চ চলতি সপ্তাহে করোনাভাইরাসে ভয়াবহ সংখ্যায় মৃত্যু ঘটতে পারে। একটি প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ৬০ হাজার লোকের মৃত্যু হতে পারে।
লাহোরভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট সালেহা আনোয়ার মনে করেন, ট্রাম্পের ‘প্রতিশোধ’ গ্রহণের হুমকির পর প্রধানমন্ত্রী মোদি চাপে ছিলেন। ট্রাম্প ভালো খেলেছেন। তিনি প্রথমে ভঅরতকে কূটনৈতিকভাবে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছেন, তারপর সম্মানজনক প্রস্থানের পথ দেখিয়েছেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ওই ওষুধটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া।
তবে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধুর বাক্য বলায় ভারতীয় মিডিয়া, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও রাজনীতিবিদেরা খুশি বলেই মনে হচ্ছে।
জিভিএস