১৫ মিনিটের ব্যবধান, লাশবাহী গাড়ি আসে আর যায়, মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী স্পেন
১৫ মিনিটের ব্যবধান, লাশবাহী গাড়ি আসে আর যায়, মৃত্যুমিছিলের সাক্ষী স্পেন - সংগৃহীত
স্পেন বিখ্যাত কেন? এখানকার ফুটবল ক্লাব বিখ্যাত। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার নাম জানে না, এমন কেউ আছে? বর্তমান ফুটবল সম্পর্কে একটু ধারণাও যার আছে, তিনিই স্পেনের ক্লাবগুলোর নাম জানেন। এই দেশের বিখ্যাত মাদ্রিদ শহর। লা আলমুদেনা সিমেট্রি, অর্থাৎ কবরস্থান। ১৫ মিনিটের ব্যবধান। একটা করে লাশবাহী গাড়ি এসে দাঁড়াচ্ছে। কফিন নামিয়ে আবার চলে যাচ্ছে। আবার আসছে। একজন ক্যাথলিক পাদ্রি, ফাদার এডৌর, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। বাইরে পাঁচ কি ছ’জন মানুষ। যাদের কাছের কেউ একজন করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
গাড়ি থেকে বেরল একটা কফিন। দূরে দূরে দাঁড়িয়ে পড়লেন সবাই। হাতে গ্লাভস। মুখে মাস্ক। পাঁচ মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হলো প্রার্থনা পর্ব। নেই কোনো স্মৃতিচারণের দু’চার কথা, নেই মালা পরানো। ভালো করে গুডবাই বলারও ফুরসত নেই। সবটা শেষ। কফিন অগুন্তি। আর পৃথিবীর মাটি সীমিত। মাটির তলায় পোঁতার জায়গা শেষ হতে চলল। তাই নিয়ম বদলে ফেলল ইউরোপ। ক্যাথলিকদেরও পোড়াতে হবে লাশ। চুল্লির চিমনি থেকে আগুনের কালো ধোঁয়া যেন বিরতিই নিচ্ছে না।
‘মুখে মাস্ক নেই। হাতে গ্লাভস নেই। রোজ এতজনের সঙ্গে দেখা করতে হচ্ছে, আপনার প্রাণের ভয় নেই?’ ফাদার এডৌরের জবাব, ‘শুনতে অদ্ভুত লাগবে। আমি ভাগ্যবান। এই সময়ে মানুষের জন্য কিছু করতে পারছি। এ যে বড় প্রাপ্তি। তাই ভয় নেই। তবে হ্যাঁ, রোজ এত মৃত্যু দেখে মাঝে মাঝে কান্না পায়। মৃতের পরিবারকে বলি, তারা একা নন, আমি তাদের পাশে আছি।’
ফিলিক্স পোভেদা। তার থেকেই তার মায়ের ও ভাইয়ের করোনা সংক্রমণ হয়। ৭৭ বছরের মাকে বাঁচানো গেল না। শেষ যাত্রাতেও দূর থেকে হাত নাড়তে হল। তিনি বুঝতে পারেন, দূরত্ব কেন প্রয়োজন। কিন্তু তার বুঝতে পারাটা তো আর তাঁর অন্তরটাকে শান্ত করতে পারেনি। তিনি চান, সব যেদিন ঠিক হয়ে যাবে, সেদিন মায়ের জন্য একটা স্মরণসভার আয়োজন করবেন। কিন্তু তিনি জানেন না, সেই দিনটা আদৌ আসবে কিনা। এলে কবে আসবে।
সূত্র : আজকাল