‘কোয়ারানটাইন’ ধারণা চালু করেছিলেন যে মুসলিম বিজ্ঞানী
ইবন-সিনা - সংগৃহীত
ইরানে জন্মগ্রহণকারী ইবনে সিনা ছিলেন মুসলিম দুনিয়া তথা বিশ্বের একজন অগ্রণী বিজ্ঞানী, গবেষক ও দার্শনিক। তাঁর পুরো নাম আবু আলি আল হুসেইন ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবন-সিনা। অবশ্য পাশ্চাত্যে তিনি পরিচিত আভিসিন্নাহ নামে। তার ছিল বিভিন্ন বিষয়ে বিরল প্রতিভা। এককথায় ‘পলিম্যাথ’ বা বহুবিদ্যাধর। ইবনে সিনা ছিলেন একাধারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ৪৫০টি গবেষণা গ্রন্থ লিখেছিলেন। তার মধ্যে এখনও ২৪০টি গ্রন্থ পাওয়া যায়।
ইবনে সিনাকে দুনিয়ার আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়। তার সময়কাল ছিল ৯৮০-১০৩৭ খ্রিস্টা·। যাঁদের প্রতিভার আলোকে বিজ্ঞান ও গবেষণায় ইসলামি সোনালী যুগ উদ্ভাসিত হয়েছিল, তার মধ্যে ইবনে সিনা ছিলেন অগ্রগণ্য। চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাঁর লেখা ৪০টি কিতাব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে খ্যাত হল ‘দ্য বুক অফ হিলিং’ (আরোগ্য পুস্তক) ও ‘দ্য ক্যানন অফ মেডিসিন’ (চিকিৎসাশাস্ত্র)।
ইবনে সিনা ধারণা করেছিলেন, কিছু রোগ নিশ্চিতভাবে মাইক্রোঅর্গানিজম দ্বারাই ছড়ায়। তাই মানুষ থেকে মানুষে রোগ সংক্রমণ প্রতিহত করতে তিনি যে ব্যবস্থাপত্রের কথা বলেছিলেন তা হচ্ছে, সংক্রমিত বা সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিকে ৪০ দিন ধরে একেবারে আলাদা করে আইসোলেশনে অর্থাৎ নির্জনে রাখতে হবে। আর এর দ্বারাই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তার এই ব্যবস্থাপত্রকে আরবিতে বলা হয়, ‘আল আরবা’ইনিয়া’ (অর্থাৎ ৪০ দিন)।
ভেনিসের ব্যবসায়ীরা রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের এই সফল পদ্ধতির কথা শুনেছিলেন এবং তারা অর্জিত এই জ্ঞানকে বর্তমানের ইতালি ভূ-খণ্ডে নিয়ে যান। তারা আরবি থেকে অনুবাদ করে ইতালিতে এই পদ্ধতিটির নামকরণ করেন ‘কোয়ারানটেনা’ (অর্থাৎ ইতালি ভাষায় ৪০ দিন)। আর এ থেকেই ইংরেজি ‘কোয়ারানটাইন’ শব্দটির উদ্ভব।
আধুনিক পৃথিবীতে এই যে প্রণালীটি ‘বৈশ্বিক-মহামারি’ রুখতে ব্যবহার করা হচ্ছে, তার শিকড় রয়েছে ইসলামি দুনিয়ায়। এ ছাড়া মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. তাঁর জীবিতকালেই নির্দেশ দিয়ে গেছিলেন যে, ‘যদি কেউ কোনো মহামারি আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করে, তবে মহামারি চলাকালীন তার ওই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র আসা উচিত নয়। অন্যদিকে, মহামারি আক্রান্ত নয়, এমন স্থান থেকে কোনো সুস্থ ব্যক্তির মহামারিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া সমীচিন নয়।’
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন, ‘যদি কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করে, তাহলে তা সমগ্র মানবতাকে রক্ষা করার সমান।’ আজকের দিনেও ইবনে সিনার পদ্ধতিটি লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করছে। ইবনে সিনার এই প্রণালীটি মাশাআল্লাহ্ বিশেষ বরকতময়। আজকের করোনার সময়েও পৃথিবীর নানা দেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিটিকেই খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
তথ্য সম্পাদনা : আহমদ হাসান ইমরান
সূত্র : পূবের কলম