করোনা প্রতিরোধে ১০ ব্যবস্থা

শামীম ওসমান | Apr 08, 2020 06:44 am
করোনা প্রতিরোধে ১০ ব্যবস্থা

করোনা প্রতিরোধে ১০ ব্যবস্থা - সংগৃহীত

 

আমাদের সমাজে একটা কথা খুবই প্রচলিত ‘রোগ দিয়েছেন আল্লাহ ভালো করবেন আল্লাহ’ এ কথা যদি ঠিক এমন হয় তা হলে একজন মানুষ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যায়? রোগ পরীক্ষা করে ওষধ খায়? ডাক্তার যেসব নিয়মকানুন মেনে চলার কথা বলে সেসব নিয়ম কেন মেনে চলে? অবশ্যই যে কেউ উত্তর দিবেন রোগ থেকে মুক্তি পেতে। আমরা যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্দেশনা দেখি তা হলে আমরা আরো সহজে বুঝতে পারব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তার (মৌমাছি) উদর থেকে নির্গত হয় আরোগ্য; অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নির্দশন’ (সূরা নাহল ৬৯)। তাহলে বোঝা গেল এখানে মধুকে নিরাময় হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন রোগ হলে ওষুধ খাওয়া, নিয়মকানুন মেনে চলা এটাও আল্লাহর নির্দেশ। এ পৃথিবীতে অসংখ্য রোগজীবাণু। এসব রোগজীবাণু মানুষের জীবনে খুবই কষ্টের। জীবন চলার পথে এক ধরনের বাধা ও পরীক্ষা। এসব বাধা, পরীক্ষা ও কষ্ট সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করতে হয়।

আজকের পৃথিবীতে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মানুষের জন্য ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। ছড়িয়ে গেছে বিশে^র প্রায় দেশে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও এর মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিলের সংবাদ পাচ্ছে বিশ্ববাসী। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও চীনের পরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে বর্তমানে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইরান, ফ্রান্স, রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড। আজ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এ ছাড়াও এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গেছে। এসব পরিস্থিতি দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আবার এসব বলার সুযোগ নেই যে, আমরা মুসলমান আমাদেরকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত করবে না। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বক্তার বক্তব্য শুনে মনে হলো আল্লাহ মুসলমানদের কোনো বিপদ দেন না। সব বিপদ শুধু কাফির, মুশরিকদের জন্য। এসব কথা খুবই দুঃখজনক। অথচ ইসলামের মৌলিক আহ্বান হলো আদ-দ্বীনু নাসিহা অর্থাৎ দ্বীন (জীবনব্যবস্থা ) কল্যাণ কামনা করা। তাই এসব কথায় কান না দিয়ে আল্লাহ ওপর ভরসার সাথে অবশ্যই আমাদের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে মুসলমান হিসেবে কিছু ইসলামী নিয়মকানুনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। যেমনÑ এক. পবিত্রতা : মুসলমানের জীবনে পবিত্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিছু ইবাদত পালনে পবিত্রতা আবশ্যক। যেমন নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত। নামাজের ক্ষেত্রে শরীর, পোশাক, নামাজের জায়গা পবিত্র থাকা আবশ্যক। ইসলাম পবিত্রতার বিষয়ে অনেক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা, যখন তোমরা নামাজের জন্য মনস্থির করো তখন তোমরা মুখ ও কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং পায়ের গিরা পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। যদি নাপাক অবস্থায় থাক তা হলে গোসল করে পাক হও।’ (সূরা মায়িদা ৬) রাসূল সা: বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক’। (সুনানে তিরমিজি) তিনি আরো বলেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ।’ (সহিহ মুসলিম) রাসূল সা: বলেন, ‘পবিত্রতা ছাড়া সালাত গ্রহণযোগ্য হয় না; আর অন্যায় সম্পদ থেকে দান করলে সদকা গ্রহণযোগ্য হয় না।’ (সহিহ মুসলিম)

দুই. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা : মানুষ হিসেবে সবাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ইসলামও মুসলমানের জীবনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে আবশ্যক করে দিয়েছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা:-কে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমার পোশাক পাক-সাফ রাখ, মলিনতা (অপবিত্রতা, শিরক) পরিহার করে চল।’ (সূরা মুদ্দাসসির ৩, ৪)। রাসূল সা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, সে যেন তার হাত তিনবার ধৌত করা ব্যতীত পাত্রে হাত না দেয়। কেননা সে জানে না তার হাত কোথায় রাত অতিবাহিত করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ) আমাদের জীবনে পবিত্রতা পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ উল্লিখিত আয়াত হাদিস থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট। পরিবেশের অসংখ্য রোগজীবাণু থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এসব নিয়মকানুন মেনে চলা খুবই জরুরি। সেই সাথে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেসব পরামর্শ দিয়েছে তা আমাদের মেনে চলা জরুরি।

১ সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে।
২ গোশত ও ডিম অবশ্যই যথাযথভাবে রান্না করে খাওয়া।
৩ রোগে ভুগে মারা যাওয়া বা অসুস্থ প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না
৪ হাঁচি-কাশির সময় টিসু বা রুমাল দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে।
৫ অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে।

৬ একবার মাস্ক ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হবে। মাস্ক ধরার পর হাত ধুয়ে নিতে হবে।
৭ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বিরত থাকা।
৮ যেখানে সেখানে থুথু ফেলা যাবে না।
৯ জ্বর-সর্দি হলে যেকোনো ভ্রমণ বাতিল করা।

১০ পাশাপাশি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ খেতে হবে।
পরিশেষে বলব বাংলাদেশও এই বিপর্যয়ের বাহিরে নেই। এখানেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। তাই সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এবং সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেছে। আমরা এসব নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিকারে সতর্ক থাকব। আল্লাহ আমাদের সুরক্ষা দান করুক।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us