যেভাবে কাজ চলছে গাজীপুরের গার্মেন্টকারখানায়
যেভাবে কাজ চলছে গাজীপুরের গার্মেন্টকারখানায় - সংগৃহীত
গাজীপুরের অধিকাংশ কারখানা বিজিএমইএ এর নির্দেশনায় বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবারও কাজ চলছে কিছু কারখানায়। হাজার হাজার শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করছেন। একই ফ্লোরে পাশাপাশি থেকে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। এসব কারখানার অধিকাংশেই করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে বজায় নেই সামাজিক দূরত্ব এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কর্মরত শ্রমিকরা।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকায় শাহজাহান স্পিনিং মিলস লিমিটেড এবং গাজীপুর মহানগরের জরুন কাশিমপুর এলাকার দুলাল এন্ড ব্রাদার্স (ডিবিএল) নামের পোশাক কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কারখনা চলতে দেখা গেছে। এদিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গলির ভিতর পাড়া মহল্লার দোকান গুলোতে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ বড় বাজারগুলো পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির কারণে সেখানে চা -সিগারেটের দোকানগুলো বন্ধ । এই সুযোগে কর্মহীন আড্ডাবাজ মানুষের জন্য নতুন আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে গলির ভিতরের ওই সকল দোকানগুলো। সুযোগ সন্ধানী এক শ্রেণীর দোকাদার ও ব্যবসায়ীরা করোনা আতঙ্ক উপেক্ষা করে ঝুকিঁপূর্ণ ব্যবসা পরিচালানা করে আসছে। এ মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় সকল ধরনের আড্ডা ও জটলা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসন সহ দ্বায়ীত্বশীল সকল নাগরীকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্ট জনেরা।
শ্রীপুরের চন্নাপাড়া এলাকায় শাহজাহান স্পিনিং মিলস লিমিটেড’র শ্রমিক মারুফ জানান, করোনা সংক্রমনের আশঙ্কায় সারাদেশে মসজিদ-মন্দির-গির্জা বন্ধ হলেও কারখানা বন্ধ করছেন না মালিকরা। কারখানা খোলা রেখে তারা শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করছেন। এতে হাতধোয়া ছাড়া সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। এতে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন সকলেই।
একই কারখানায় কর্মরত শরীফুল ইসলাম জাতীয় দিনগুলোতে কর্তৃপক্ষ আমাদের ডিউটি করায়। বর্তমানে করোনা মহামারীর মধেও আমাদের কাজে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। তা না হলে আমাদের অ্যাবসেন্ট কিংবা ছাটাইয়েরও হুমকি দিয়েছে কতৃপক্ষ। তাই আমরা বাঁচার তাগিদেই কাজে যোগ দিয়েছি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুর এলাকার ডিবিএল পোশাক কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, এ পোশাক কারখানাটিও দুইদিন ধরেই চলছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর নির্দেশনায় ২য় দফায় ১১ এপ্রিল এবং তৃতীয় দফায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা ছুটির প্রস্তাব করেছে। এ ঘোষণার পর ৯০ ভাগ কারখানার ছুটি থাকলেও বিজিএমইএ এর এই আহবানের সাড়া না দিয়ে বেশ কিছু ছোট বড় প্রতিষ্ঠান এখনো তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। এসব কারখানায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম, বালাই নেই সামাজিক দূরত্বেরও।
পোশাক শ্রমিকদের অভিযোগ, বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ থাকলেও বেতন না দিয়ে তাদের কারখানার কর্তৃপক্ষ এক প্রকার জোর করে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ আদায় করছে। এখানে নেই কোন সামাজিক নিরাপত্তার বালাই, নেই হ্যান্ড গ্লাভসসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রি। ফলে করোনা আতঙ্কে প্রতিটি ফ্লোরে কাজ করছেন হাজার হাজার শ্রমিক।
করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শ্রমিকদের শুধুমাত্র হাত ধোয়া ও সচেতনতায় প্রচারণার ব্যবস্থা নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতসহ শ্রমিকদের সুরক্ষায় মালিকপক্ষের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
করোনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র বলছেন, যারা কারখানা বন্ধের পর বাড়ি গেছেন এবং পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন তাদের মধ্যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত কী না তা বুঝা অত্যন্ত কঠিন। তাই এই ভাইরাস সংক্রমণরোধে মালিকপক্ষ, শ্রমিকসহ সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চলে ঠিক কতগুলো কারখানা এসময়ে খোলা রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি শিল্প পুলিশ। তবে শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্প কারখানায় কাজ করেন অন্তত ২২ লাখ শ্রমিক। তাদের সুরক্ষা না দিতে পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহতার আশঙ্কা করছেন শ্রমিকরা।
এদিকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জেলার বিভিন্ন বাজার ও প্রধান সড়কের পাশের চা – সিগারেটের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তপক্ষ। এই সুজোগে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী গলির ভিতর জমজমাট চা, পান - সিগারেটের ব্যবসা জমিয়ে নিয়েছে। সকাল বিকেল ওই সকল দোকানগুলোতে এক শ্রেণির লোকজনকে ভিড় জমিয়ে আড্ডাদিতে ও দল বেধে চা- সিগারেট পান করতে দেখা যায়। পুলিশ টহল দেখলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে থাকে । পুলিশ চলে গেলে আবার দোকান খুলে বসে। গাজীপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি মঞ্জুর হোসেন মিলন এ বিষয়ে বলেন জাতীর এ দূর্যোগ মূহুতে সমাজের সকল শ্রেণীল মানুষকে দ্বায়িত্বশীল আচরন করতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বেচ্ছাচারী ও দ্বায়ীত্বজ্ঞানহীন ওই শ্রেণীর লোকদের সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে বাধ্য করতে হবে। পুলিশ সকল সময় গিয়ে পাহারা দিয়ে রাখতে পারবে না। সেটা সম্ভবও না।