জাপানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা
জাপানে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা - সংগৃহীত
নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে মহামারি ঠেকাতে জাপানে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হলেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এসময় জাপানে সবাইকে বাড়িতে অবস্থানের সাথে সাথে সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও প্রায় দিনই সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রী বলে আসছিলেন জরুরি অবস্থা জারি করলে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পরবে। তাই আরো কিছু দিন দেখতে সময় চান তিনি। অন্যদিকে দেশের বড় দুটি শহর টোকিও ও ওসাকার দুই গভর্নর ও সরকারের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিদিনই জরুরি অবস্থা জারির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। তারা বলেছেন, সময় যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নানারকম ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও জাপানে এর সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গেল রোববার শুধু টোকিওতেই আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেলে দিশেহারা হয়ে পড়ে আবে সরকার। সোমবার সকাল থেকেই প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে জরুরি অবস্থা জারির। অবশেষে সন্ধ্যায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ শেষে প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে প্রাথমিকভাবে রাজধানী টোকিওসহ ৭টি প্রিফেকচার বা জেলায় জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেন। অবস্থার প্রেক্ষাপটে প্রাথমিকভাবে মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল থেকে ১ মাসের জন্য টোকিওসহ ৭ জেলায় "স্টেট অব ইমার্জেন্সি" কার্যকর হবে। এসব হচ্ছে- টোকিও, সাইতামা, কানাগাওয়া, চিবা, ওসাকা, হিওগো, ফুকুওকা জেলা। তবে সংক্রামণের মাত্রা বাড়তে থাকলে অন্য জেলাগুলোও আওতায় আসবে বলে জানানো হয়। নানা রকম ব্যবস্থা নেয়া সত্ত্বেও করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে দেশটিতে।
দ্যা জাপান টাইমসের সর্বশেষ তথ্য মতে, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে ১০১ জন (প্রমোদ তরীসহ) মারা গেছেন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১ জন (প্রমোদ তরীসহ)। এর মধ্যে রাজধানী টোকিওতেই প্রায় ১১ শ'। মোট সুস্থ হয়েছেন ৫৭৫ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১৭৯ জন।
জাপানের প্রায় সকল গণমাধ্যম জানিয়েছে, সংক্রমণের মাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধির কারণে জাপানের প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশটির অর্থনীতিবীদরা জানিয়েছেন, ভাইরাসের তীব্র সংক্রমণ ঘটে যাওয়ায় শিনজো আবে এক ধরনের চাপে পড়েছেন। সীমাবদ্ধ চলাচল ও ব্যবসার গতি অর্থনীতিতে মারাত্মক আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহামারির প্রভাবে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা ও অলিম্পিক পিছিয়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে চরম বিপর্যজয় সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পদক্ষেপ নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কেননা ইতোমধ্যে টোকিওতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি ঘটে হাজার ছাড়িয়েছে।
গত মার্চের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, জাপানে যদি কোনো রোগের দ্রুত বিস্তার জনজীবন ও অর্থনীতিতে 'গুরুতর বিপদ' তৈরি করে তবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তবে এই জরুরি অবস্থার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারবে।