ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে নবী করিম সা: যা বলেছেন
মদিনা শরিফ - সংগৃহীত
কুষ্ঠরোগ হচ্ছে মানব ইতিহাসের সম্ভবত সবচেয়ে পুরনো রোগ। ঈসা আ: প্রায় দুই হাজার বছর আগে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করেছিলেন। এ রোগ তেমন ছোঁয়াচে নয়। দীর্ঘ সময় ধরে ও বারে বারে এ রোগীর সংস্পর্শে এলে এ রোগ অন্যের হতে পারে। এরকম রোগীর সংস্পর্শে এসে কেউ আক্রান্ত হলে তার লক্ষণ দেখা দেয় ৩-৫ বছর পর, এমনকি ২০ বছরও লাগতে পারে। এ রোগে সাধারণত মানুষের ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে মানুষের চেহারা বিকৃত হতে পারে; কিন্তু সহজে মানুষ মারা যায় না। এ রোগ একটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হয়ে থাকে। ফলে এ রোগ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিরাময় করা যায়। এ রোগ পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে দেখা যায়। এ রোগ আজ পর্যন্ত কোনো Pandemic বা মহামারী সৃষ্টি করতে পারেনি।
এরকম অল্প ছোঁয়াচে রোগ সম্পর্কে আমাদের নবী করিম সা: বলেছেন:
‘কুষ্ঠরোগী থেকে দূরে সরে যাও যেরূপ বাঘ থেকে দূরে সরে থাকো’ (বুখারিÑ কিতাবুত তীব ১৯ অনুচ্ছেদ)। একই ধরনের আরেকটি হাদিস রয়েছে : সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধিদলের সাথে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল। নবী সা: তাকে বলে পাঠালেন : ‘আমরা তোমার আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেছি। অতএব, তুমি চলে যাও’ ( মুসলিম-কিতাবুস সালাম অনুচ্ছেদ ২৯)।
ছোঁয়াচে রোগের ব্যাপারে কেন এত সতর্কতা? কারণ ইসলাম মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। শূকরের মাংস খাওয়া হারাম করা হয়েছে। ‘নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন মৃত জন্তু, শূকরের মাংস এবং যা গায়রুল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে। সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (আল কুরআন ২:১৭৩)।
নামাজের জন্য অজু করা ফরজ। কিন্তু পানি না পেলে তায়াম্মুমের অনুমতি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো’ (আল কুরআন ৫:৬)। রাসূল সা: নামাজের সময় কোনো মায়ের সাথে আগত শিশুর কান্না শুনতে পেলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে তিনি জামাতে নামাজ পড়াকে নিরুৎসাহিত করতেন। নিম্নের হাদিস দু’টি লক্ষ করুন : ১. আবু সালিহ তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি হুদায়বিয়ার সময় জুমার দিন নবী সা:-এর কাছে হাজির হলেন। সে দিন সামান্য কিছু বৃষ্টি হয়েছিল যাতে তাদের জুতাও ভিজল না। এ অবস্থায় নবী সা: তাদের নিজ নিজ তাঁবুতে নামাজ পড়ে নিতে আদেশ করলেন (আবু দাউদ, নামাজ অধ্যায়)। ২. ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর মুয়াজ্জিন মদিনাতে বাদলা রাতে এবং শীতের সকালে এরকম ঘোষণা করেছিলেন (আবু দাউদ, নামাজ অধ্যায়)। জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আল্লাহ ও তার রাসূল সা:-এর এই হচ্ছে মূল নীতি।
এবার চলুন করোনাভাইরাস প্রসঙ্গে আলোচনা করি :
করোনাভাইরাস হচ্ছে খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। প্রায় ১০০ বছর আগে তারই সগোত্রীয় ভাইরাস দ্বারা Spanish flu তে পাঁচ কোটি লোক মৃত্যুবরণ করেছিল। এই ভাইরাস হাঁচি-কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে ফুসফুস থেকে বের হয়ে রোগীর ১-২ মিটার দূরত্বে বিভিন্ন জিনিসের ওপর গিয়ে পড়ে যেমন মোবাইল ফোন, জায়নামাজ, মসজিদের ফ্লোর/মেট/কার্পেট, টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল প্রভৃতি। দু-তিন দিন পর্যন্ত জীবাণু সব জায়গায় বেঁচে থাকে। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ মানুষ এ জায়গাগুলো স্পর্শ করলে জীবাণু হাত থেকে নাকে মুখে চলে আসে। প্রতিদিন মানুষ ১০০ বারের বেশি অবচেতন মনে মুখমণ্ডল স্পর্শ করে থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় গাণিতিক হারে যেমন ১-২-৪-৮-১৬-৩২। আর এ ভাইরাস বিস্তার লাভ করে অনেকটা জ্যামিতিক হারে যেমন-১-৩-৯-২৭-৮১-২৪৩। জীবাণু সুস্থ মানুষের শরীরে ঢুকলে ৫-৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়, ক্ষেত্রবিশেষে ১৪ দিনও লাগতে পারে। অর্থাৎ ১ সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্ত মানুষটি অন্য মানুষকেও আক্রান্ত করতে শুরু করে। ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ এ রোগটি প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর তিন মাসে প্রায় ২০০ দেশে১২ লাখের বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে। এই মহামারীতে মারা গেছে প্রায় ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ। এ পরিসংখ্যানটি প্রধানত উন্নত বিশ্বের যেখানে রয়েছে আধুনিক চিকিৎসার সবরকম সুযোগ সুবিধা। ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল, বেড জনসংখ্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত। তার পরও হঠাৎ করে এত রোগী বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোথাও প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম।
সংক্ষেপে তুলনা করলাম এ রোগটি কুষ্ঠরোগের চেয়ে কত মারাত্মক। মালয়েশিয়াতে একজন রোগী মসজিদে নামাজ পড়ার পর তার থেকে ৪৫ জন নামাজি আক্রান্ত হয়েছেন। আমাদের দেশে সীমিত টেস্ট কিট থাকায় রোগ শনাক্তকরণ হচ্ছে না। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় মৃত ব্যক্তি (মিরপুরের বাসিন্দা) বিদেশী কোনো রোগীর সংস্পর্শে যাননি। কিন্তু তিনি নিয়মিত মসজিদে যেতেন। তার পরিবারের ধারণা মসজিদ থেকেই তিনি সম্ভবত সক্রমিত হয়েছেন। আমাদের কারো কারো ধারণা আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে মসজিদে গেলে করোনা হবে না। রাসূল সা: সবচেয়ে বেশি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করেছেন। মক্কা থেকে হিজরতের সময় তিনি কত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন! রাতের অন্ধকারে বের হয়েছেন। তার আগে বাহন ঠিক করেছেন, একজন পথপ্রদর্শক নিয়েছেন। বিশ্বস্ত বন্ধুকে সাথে নিয়েছেন, পাথেয় নিয়েছেন। পরিচিত পথে না গিয়ে সম্পূর্ণ উল্টো পথে গিয়ে একটি গুহায় তিন দিন লুকিয়ে রইলেন। তিন দিন পর গোপন রাস্তা দিয়ে মদিনার দিকে অগ্রসর হলেন। এত কিছু করে তার পর তিনি আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করলেন। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি উট বেঁধে আল্লাহর ওপর ভরসা করব নাকি মুক্ত রেখে? তিনি বললেন, উট বেঁধে নাও অতঃপর আল্লাহর ওপর ভরসা করো (তিরমিজি)।
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কাফের না মোমেন, রাজা না প্রজা, মক্কা না মস্কো কোনো পার্থক্য করে না। ১৮২১ সালে মক্কায় ২০ হাজার হাজী কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৬৫ সালে ১৫ হাজার হাজী একই রোগে মৃত্যুবরণ করেন। ওমর রা:-এর সময়ে বড় বড় সাহাবিসহ প্রায় ২৫ হাজার মানুষ প্লেগে মৃত্যুবরণ করেন। বেশ কয়েক বছর আগে হজের সময় মিনায় আগুন লেগে গেল। কিছু হাজী তাওয়াক্কুল করে এ বিশ্বাস নিয়ে তাঁবুতে বসে রইলেন যে আগুন হাজীদের স্পর্শ করবে না। অবশেষে তাদের কেউ মারা গেলেন কেউবা দৌড়ে পালিয়ে গেলেন। হজের মৌসুমে প্রতি বছর হাজার হাজার হাজী ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, যা হালকা রোগ বলে সেরে যায়। আর করোনা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক। এর ভয়াবহতা বিবেচনা করে সৌদি আরব, কাতার, জর্দান, মালয়েশিয়াসহ প্রায় ১২টি দেশ মসজিদে নামাজ আপাতত স্থগিত করেছে। মাত্র কয়েকজন মিলে সীমিত জামাত মসজিদগুলো চালু রেখেছে।
ভারতের দেওবন্দ ও নাদওয়ার আলেমরাও একই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। ওই সব দেশের মানুষদের যা দোষ আছে তা আমাদেরও আছে। কিন্তু আমাদের যা দোষ আছে তা তাদের নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকা, সোনা থেকে শুরু করে মসজিদের জুতা গায়েব হয়ে যাওয়া, শেয়ারমার্কেটের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করা, দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা। ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়া, আর রমজান মাসে মক্কায় গিয়ে এতেকাফ করা আমাদের বৈশিষ্ট্য। ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা ছাত্র, গ্যাং রেপের আসামি, মার্ডার কেইসের আসামি আমাদের দেশে সহজে পার পেয়ে যায়। অথচ ওই সব দেশে এরকম অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি পেতে হয়। যে শহরে প্রায় ৪০ লাখ লোক বস্তিতে বাস করে, সেখানেই কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয় এবং অনেক বিত্তশালী তাদের দিকে না তাকিয়ে বছর বছর হজ ও ওমরাহ করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বায়ুদূষিত, মশায় ভারাক্রান্ত ও ট্রাফিক জ্যামের শহর হচ্ছে ঢাকা। ঘুষ আর সুদ আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। ওজনে কম দেয়া, খাদ্যে ভেজাল দেয়া, রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, ছিনতাই পকেটমার, চাঁদাবাজি, গুম, খুন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয় আমাদের দেশে। আমরা কাজে ফাঁকি দেই, সহজে ওয়াদা খেলাফ করি ও চুক্তি ভঙ্গ করি। এত কিছুর পরও আমরা মনে করছি যে জামাতে নামাজ পড়ছি বলে আমরা করোনাভাইরাস থেকে বেঁচে যাবো।
‘দূরে থাক সে ফেতনা থেকে, যার অশুভ পরিণাম বিশেষভাবে সে লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না তোমাদের মধ্যে যারা গুনাহ করেছে। আর জেনে রাখো, আল্লাহ বড় কঠিন শাস্তিদানকারী’ (আল কুরআন ৮:২৫)।
আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মার্কেট, জনসমাগম, যোগাযোগ বন্ধ করেছি, সশস্ত্র বাহিনী টহল দিচ্ছে আর মসজিদে মানুষ আরো বেশি ভিড় জমাচ্ছে। এ ধরনের লকডাউনে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা খুবই কম। মসজিদে মানুষ গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ায়, একজনের নাক মুখ অন্যজনের নাক মুখের কাছাকাছি থাকে। দুই হাত বাঁধা থাকে বলে অনেকে মুখে হাত না দিয়ে হাঁচি-কাশি দিতে থাকে। দুই হাতে সেজদা দিয়ে জীবাণু নিয়ে মুনাজাতের সময় সে হাত দু’টি মুখমণ্ডলে স্পর্শ করে। কাজেই মসজিদে নামাজের মাধ্যমে এই ভাইরাস যত ছড়াতে পারে অন্য কোনো সমাবেশে তত ছড়াবে না।
আমাদের সামনে সাহাবিদের জ্বলন্ত উদাহরণ রয়েছে। ওমর রা:-এর সময় সেনাপ্রধান আশারায়ে মুবাশশারা হজরত আবু উবায়দা বিন জাররাসহ প্রায় ২৫ হাজার সৈনিক প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। পরবর্তী সেনাপ্রধান হজরত আমর বিন আস রা: আদেশ করলেন, যেন সেনাবাহিনী ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে উঁচু ভূমিতে বা পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। (তাতে বড় জামাতে নামাজের সুযোগ আর থাকবে না) একজন আবেগের বশবর্তী হয়ে বলল, ‘তুমি তো দেখছি আমার গাধার চেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট।’ এরকম অপমানকর কথার জবাব না দিয়ে তিনি বললেন, এখন তাদের জীবন বাঁচানো দরকার। ওমর রা: তার সেনাপ্রধানের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেন। এভাবে তারা মহামারী থেকে বেঁচে যায়।
আমাদের আলেমদের উচিত এ রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে ডাক্তারদের কাছ থেকে জানা। ‘সুতরাং তোমরা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো যদি তোমরা না জানো’ (আল কুরআন ২১:৭)।
সারা পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা একমত যে ঘরে অবস্থান করা আর আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করে আলাদা করাই হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান। এভাবেই চিনের উহান শহর রোগমুক্ত হয়েছে যেখানে এ রোগের উৎপত্তি হয়েছিল। এখন সেখানে জীবনযাত্রা প্রায় স্বাভাবিক। দক্ষিণ কোরিয়া তাইওয়ান, জাপান, সিঙ্গাপুর একইভাবে সফল হতে যাচ্ছে। আমাদের দেশে কোনো কোনো আলেম করোনাভাইরাসকে আল্লাহর আজাব বলে উল্লেখ করছে। তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে সে আজাব চলে গেছে। অচিরেই দেখতে পাবেন ইউরোপ, আমেরিকা ও অন্যান্য দেশ থেকেও এ আজাব চলে যাচ্ছে। কারণ তারা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’ (আল কুরআন ১৩:১১)।
আর আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না চালিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পৃথিবীর সব ডাক্তারের মতামত উপেক্ষা করে বিরাট দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করছি। ড. মরিস বুকাইলি খুব সুন্দরভাবে বলেছেন, বর্তমান মুসলমানরা প্রাকৃতিক আইনগুলোকে (ঘধঃঁৎধষ ষধংি) অনুসন্ধান না করে সবসময় অলৌকিক কিছু প্রত্যাশা করে অথচ এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চলছে প্রাকৃতিক আইন দ্বারা। এই আইনগুলোর মধ্যেই অনেক অলৌকিক জিনিস রয়েছে। কুরআনও মানুষকে সব সময়য় এগুলোর দিকে ইঙ্গিত দেয় : ‘নিশ্চয়ই আসমানগুলো ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নিদর্শন’ (আল কুরআন ৩:১৯০)।
মহান আল্লাহ তায়ালা ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসকে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়ম অনুযায়ীই তারা কাজ করবে। এই নিয়মের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। চীনের জন্য এই ভাইরাস ভয়ঙ্কর আর আমাদের জন্য হবে বন্ধুত্বপূর্ণ তা হতে পারে না।
ভারতের আর্থসামাজিক অবস্থা আমাদের প্রায় কাছাকাছি। সে দেশের সরকার পুরোহিত, আলেম সবাইকে নিয়ে এত বড় দেশকে লকডাউন করেছে। তাতেও তারা এ রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আমাদের সরকারের উচিত সবাইকে সাথে নিয়ে সত্যিকারের লকডাউন কার্যকর করা। কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে অন্যান্য দেশও এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণের আশা করছে। এখন যদি আমরা পিছিয়ে থাকি তাহলে কয়েক মাস পর সব দেশ আমাদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে।
মধ্যযুগে মিসরে কিছু আলেম প্লেগ মহামারীতে জামাতে নামাজের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন পরে যখন হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে শুরু করল, তখন এই ফতোয়া প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু তত দিনে অনেক প্রাণ ঝরে যায়। মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বড় বড় আলেম, ড. ইয়াসির কাজি, মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক এরকম এক ভয়ঙ্কর সময়ের আশঙ্কা করছেন। শেষোক্তজন অত্যন্ত দরদ দিয়ে বলেছেন, তার নাম যেন ইতিহাসে লেখা থাকে যে এ সময়ে তিনি মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি প্লেগ মহামারী সম্পর্কে রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করেন। নবী সা: তাকে জানান যে, এর সূচনা হয়েছিল আজাবরূপে। আল্লাহ যাদের ওপর চান তা পাঠান। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা একে ঈমানদারদের জন্য রহমতস্বরূপ বানিয়ে রেখেছেন। কোথাও যদি প্লেগ মহামারী ছড়িয়ে পরে এবং তথাকার কোনো বান্দা এ কথা জেনে বুঝেই ধৈর্যসহকারে শহরে-বাড়িতে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখে দিয়েছেন সেই বিপদ ছাড়া আর কিছুই তার ওপর আসবে না, তবে সে শহীদের অনুরূপ সওয়াব পাবে (সহিহ আল বুখারি, কিতাবুত তিব্ব, হা: নং : ৫৩১৪)।
লেখক : হৃদরোগ, বিশেষজ্ঞ