সাদের কারণে তারা সুযোগ পেয়ে গেছে!

পি কে বালাচন্দ্রন | Apr 05, 2020 09:01 pm
সাদের কারণে তারা সুযোগ পেয়ে গেছে!

সাদের কারণে তারা সুযোগ পেয়ে গেছে! - সংগৃহীত

 

ভারতে আবার মুসলিমদের ওপর আক্রমণ পূর্ণ শক্তিতে ফিরে এসেছে। এবার এর আংশিক কারণ দিল্লির নিজামুদ্দিনে অবস্থিত তাবলিগি জামাতের অসতর্কতার কারণে। ১৯২৬ সালে ভারতে প্রতিষ্ঠিত দ্রুত বর্ধিষ্ণু বিশুদ্ধবাদী ইসলামি সংগঠন তাবলিগি জামাত ১৩-১৫ মার্চ একটি বিশাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ভারত ও বিদেশ থেকে চার হাজারের বেশি লোক যোগ দেয়।

আর যেমন আশঙ্কা ছিল, তেমনভাবেই কোভিড-১৯ ভাইরাসের সহজ শিকার ক্ষেত্রে পরিণত হয় সম্মেলনটি। প্রতিনিধিরা যখন ভারতের বিভিন্ন অংশে ফিরতে থাকে, তখন সবস্থানেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়ে যায়। ফলে নিজামুদ্দিনে অবস্থিত তাবলিগি জামাতের ‘মারকাজ’ বা কেন্দ্রটি ভারতে কোভিড-১৯-এর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রচার করার সুযোগ পায় মিডিয়া।

প্রাণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তারে তাবলিগের কথিত ভূমিকার খবর মূলধারা ও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের গোপন বা প্রকাশ্য- অনুমোদে মুসলিম-বিদ্বেষের একটি ভালো সুযোগ পেয়ে মিডিয়া বেশ খুশি। অনেকে এখন পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করে বলছে যে তারা বৃহত্তর কল্যাণের তোয়াক্কা না করে গোঁয়ারতুমি করে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

এই ট্রাজেডিতে সরকার ও মিডিয়া জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যু খুঁজে পেয়েছে। এর কারণ হলো, ৯৬০ বিদেশী প্রতিনিধি ইতোমধ্যেই তাদের ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। তারা যদি কনফারেন্স ভিসা বা ভিজিটর ভিসায় এসে থাকেন, তবে তারা ধর্ম প্রচার করতে পারেন না। কিন্তু তারা তা করেছেন, তাবলিগি জামাত তা করতে উৎসাহিত করে। তারা ‘বিশুদ্ধ ইসলাম’ প্রচারের জন্য ভারতের বিভিন্ন অংশে গিয়েছিলেন। অবশ্য তারা সঙ্গে করে ভাইরাসটিও নিয়ে গিয়েছিলেন।
ইসলামি সন্ত্রাসবাদ বৈশ্বিক উদ্বেগ ও ভারতীয় বদ্ধমূল বিষয়ে পরিণত হওয়ায় নয়া দিল্লি এখন জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছে। সিনিয়র সাংবাদিক সাঈদ নাকভির মতে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই ১৯৭০-এর দশক থেকে তাবলিগি জামাতকে নিরাপত্তা হুমকি বিবেচনা করছে এবং ভারতীয় মিশনগুলোকে তাদের ভিসা না দেয়ার জন্য বলে আসছে।

গত ২৪ মার্চ ভারত সরকার হঠাৎ করেই লকডাউনের কথা ঘোষণা করে। ৩০ মার্চ দিল্লি রাজ্য সরকার ২০০-এর বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ করে। কিন্তু তখনো দিল্লির মারকাজে ২,৩৪৬ জামাতি রয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৫৩৬ জন ছিলেন সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয, ১,৮১০ জনকে কোয়ান্টিনে রাখা হয়।

জামাতের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে নিজেকে নির্দোস জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি যখন দেশব্যাপী লকডাউনের পর তাদের প্রতিনিধিদের পরিবহন করার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন, তখন সাড়া পাননি।

হিন্দু সমাবেশ অগ্রাহ্য
টিভি চ্যানেলগুলো যখন তাবলিগি জামাতের দিকে নজর রাখছিল, সাম্প্রদায়িক আবেগ উস্কে দিচ্ছিল, তখন হিন্দু গ্রুপগুলো খুশিমনে ও প্রকাশ্য বিপুল উদ্দীপনায় রাম নবমী উদযাপন করছিল। মিডিয়া হয় তাদের দিকে চোখ বন্ধ করে ছিল কিংবা বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত ছিল।
পশ্চিমবঙ্গে বেলেঘাটার ও কলকাতার মানিকতলার মন্দিরগুলোতে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাবেশ ঘটে। রাম ও সীমার ঐশ্বরিক বিবাহ হয় তেলেঙ্গানার বদ্রচালামের শ্রী রাম সীতা রামচন্দ্রনস্বামী মন্দিরে।

মানবিক সঙ্কটের প্রতি আগ্রহ ম্লান
তাবলিগি জামাতের ইস্যুটি সামনে আসামাত্র মিডিয়া একটি বড় মানবিক সঙ্কটকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে। আর সেটা হলো ভারতীয় নগরীগুলোতে হাজার হাজার অভিবাসী শ্রমিকের দুর্দশা। তারা ২১ দিনের লকডাউনে হতচকিত হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে কাজের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় তারা হাজার হাজার মাইল দূরের গ্রামের দিকে লংমার্চ শুরু করে।
পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা পায়ে হেঁটেই চলতে থাকে। তাদের কষ্ট আরো বাড়ে, যখন রাজ্যগুলো সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। কর্নাটক রাজ্য এমনকি চিকিৎসা সামগ্রী পর্যন্ত কেরালা রাজ্যে যেতে দেয়নি। ফলে কেরালা বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে উত্থাপন করতে বাধ্য হয়। আর আদালত বিরোধ না মিটিয়ে পক্ষ দুটিকে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার উপদেশ দেয়।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দুর্দশা
বার্কলের মতে, ২১ দিনের লকডাউনে ভারতের প্রবৃদ্ধি ২.৫ ভাগে নামিয়ে আনতে পারে। ইতোপূর্বে তা ৪.৫ ভাগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। এর সবচেয়ে বড় শিকার হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এ ধরনের মহামারি ও শাটডাউন কাটিয়ে ওঠার মতো সামর্থ্য তাদের নেই।
অথচ এই খাত ১১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান করে। অর্থ সঙ্কটে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘ লকডাউনের সময় তাদের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে বলা বাস্তবসম্মত নয়। আবার কাঁচামাল, পরিবহন, শ্রমের মতো ইস্যুর কারণে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের দাম কমাতে পারবে না। এর মানে হবে, চীনা কম দামের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে বিদায় করে দেবে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন। সংরক্ষণবাদ বাড়িয়েও চীনা আমদানি ঠেকানো সম্ভব। এতে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় পাবে। ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর কনফেডারেশনের মতে, এই খাত বছরে ১৩ থেকে ১৫ মিলিয়ন চাকরির সংস্থান করে। তাদের সংরক্ষণ করা উচিত।

সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us