ইতালির ধনী এলাকাতে করোনার ভয়াবহ থাবা
ইতালির ধনী এলাকাতে করোনার ভয়াবহ থাবা - সংগৃহীত
রোববার সকাল পর্যন্ত ইউরোপের দেশ ইতালিতে কোভিড–১৯–এ মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫,৩৬২ জন। মৃতদের মধ্যে সাধারণ মানুষ যেমন আছেন, তেমনই আছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আক্রান্ত ১,২৪,৬৩২ জন। এপর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২০,৯৯৬ জন। গত চার সপ্তাহ ধরে চলা লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। কিন্তু রোগ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় তা হয়নি। উল্টা লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ইস্টার সানডে, অর্থাৎ ১২ তারিখ পর্যন্ত। দিন কয়েক আগে পর্যন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান করে, থালা-বাসন বাজিয়ে পরস্পরকে উৎসাহ জোগাচ্ছিলেন প্রতিবেশীরা। সবাই মনে করেছিলেন, এভাবেই ঐক্যবদ্ধভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা যাবে। কিন্ত তা মনে হয় আর হচ্ছে না।
বর্তমানে প্রায় নিস্তব্ধ সারা দেশ। ধনী এলাকা, উত্তর ইতালিকেই কোভিড–১৯–এর সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। শুধু টাস্কানিতেই সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ। এমনটাই জানিয়েছে ইতালীয় নাগরিক সুরক্ষা সংগঠন।
সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাবে উত্তর ইতালির প্রদেশগুলোতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০,০০০ স্বাস্থ্যকর্মী। জানিয়েছে ইতালির চিকিৎসক সংগঠন। যদিও ইউরোপের সেরা চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম এই অঞ্চল। অথচ, সেখানেই এতো কোভিড–১৯–এর এই রূপ দেখে চিকিৎসক মহল আশঙ্কিত, দক্ষিণে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে ছবিটা আরো ভয়ঙ্কর হবে। কারণ, সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা তেমনভাবে উন্নত নয়। এবং বাসিন্দাদের মধ্যে বেশিরভাগই অসংগঠিত শ্রমিক, দিনমজুর, ছিঁচকে চোর, ভবঘুরে, ভিখিরি, পতিতার মতো মানুষের বাস। লকডাউনের জন্য সব কিছু বন্ধ থাকায় দক্ষিণ ইতালিতে এর মধ্যেই খাদ্যাভাব শুরু হয়ে গেছে। কারণ এই সবহ মানুষরা সবাই দৈনিক রোজগারের উপরই নির্ভরশীল। তাদের ওই রোজগার আরো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে করোনার ভয়ের চেয়ে পেটের জ্বালা অনেক বেশি কষ্টের। তাই তারা রাস্তায় নেমে পড়তে বাধ্য হচ্ছে।
বেশ কিছু মুদি দোকান এবং ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে এই দরিদ্র মানুষদের জন্য খাদ্য দানপাত্র রাখা হয়েছে। ধনী বা মধ্যবিত্তরা সেখানে খাবার দান করে গেলে তা নিতে লম্বা লাইন পড়েছে। সরকারি খাবার বিতরণের কেন্দ্রগুলোর সামনেও একই ছবি। কারণ দক্ষিণ ইতালির বেশিরভাগ মানুষের কাছেই এমুহূর্তে অর্থ নেই।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী গিয়েসপ্পি কন্তে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, গরিবদের জন্য খাবার প্যাকেট কিনতে ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করবেন। এবং ওই সব মানুষ এবং তাদের অঞ্চলের সুরক্ষার জন্য আঞ্চলিক মেয়রদের হাতে আরও ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে দেবেন। কিন্তু এত দিন তা কেন করেনি দেশের সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই অঞ্চলের মানুষরা এবার পেটের তাগিদে লকডাউন অমান্য করে রাস্তায় নেমে পড়লেই কোভিড–১৯–এর সংক্রমণ আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা কন্তে সরকারের নাও হতে পারে।
সূত্র : আজকাল