নিউ ইয়র্কে কেবল লাশ আর লাশ
নিউ ইয়র্কে কেবল লাশ আর লাশ - সংগৃহীত
সারি সারি শায়িত লাশ হাসপাতালের করিডরে, হলে। লাশগুলোকে মর্গে চালান করতে হাসপাতালের বাইরে ফ্রিজার ট্রাক। বাইরে কিছু অ্যাম্বুল্যান্সও আছে। হৃদরোগীদের নিয়ে। তাদের চিকিৎসা করা যাবে না। করোনা আক্রান্তদের নিয়ে নাজেহাল হাসপাতালের নির্দেশ, অন্য কোনো রোগীর চিকিৎসা হবে না। অগত্যা অ্যাম্বুল্যান্স ঘোরাচ্ছেন চালকেরা। শোচনীয় এবং একইসঙ্গে মর্মান্তিক দৃশ্য নিউ ইয়র্কের সব হাসপাতালে।
‘ভয়াবহ ভয়াবহ! ইমার্জেন্সি রুমে একে একে মৃত্যু দেখছি।’ বর্তমানে করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল নিউ ইয়র্কের শোচনীয় বাস্তব তুলে ধরতে গিয়ে বিধ্বস্ত ভারতীয়–মার্কিনি চিকিৎসক কৃষণ কুমার। বৃহস্পতিবার রাতে শুধু নিউ ইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫১,৮০৯। ১,৫৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শহরের হাসপাতালগুলো এই হারে আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধি আঁচ করতে পারেনি। তাই মহামারী সামাল দিতে বেসামাল হয়ে পড়ছে। বেডের অভাব দেখা দিয়েছে। মাস্কের মতো ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বস্তুটিরও আকাল দেখা দিয়েছে।
নিউ ইয়র্কের নামী দু’টি হাসপাতাল ব্রুকলিন এবং কুইনস বরো হিমশিম খাচ্ছে। এই দু’টি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে লাগাতার কাজ করে চলেছেন ডা. কুমার। আক্রান্তদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানেই রাখতে হচ্ছে। অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। একটাও বেড খালি নেই। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে পড়ে থেকেই অনেকে মারা যাচ্ছেন।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিতে অন্য কোনো রোগী চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন না। ‘নিউ ইয়র্ক কলেজ অফ অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন’–এর প্রাক্তনী, ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকান ফিজিশিয়ানস অফ ইন্ডিয়ান ওরিজিন’–এর নিউ ইয়র্ক শাখার প্রেসিডেন্ট ডা. কুমারের কথায়, ‘ইমার্জেন্সিতে যখন রোগীদের আনা হচ্ছে, তখন তারা প্রায় মৃতপ্রায়। দিনের পর দিন এসব দেখে নতুন চিকিৎসকদের ওপর মানসিক চাপ পড়ছে। তাঁরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।’
রবিবার আক্রান্তের সংখ্যা আরও মারাত্মকভাবে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল দি ব্লাসিও। কী করে তাঁদের হাসপাতালে জায়গা দেবেন, তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। ডা. কুমারের কথায়, ‘এখনই রোগীদের মাটিতে শুইয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছি।’
শহরের সেন্ট্রাল পার্কের লনে, কনভেনশন সেন্টারে, বিলি জিন টেনিস সেন্টারে অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে। এছাড়া একটি নৌসেনার জাহাজ, ২০টি হোটেল করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে তৈরি হচ্ছে।
ব্রুকলিন হাসপাতালের বাইরে রোগীদের জন্য তাঁবু করা হচ্ছে। তাঁদের সেখানেই ঠাঁই হবে। ডা. কুমারের বক্তব্য, ‘হাসপাতালের তুলনায় রোগীদের জন্য ঢের নিরাপদ হবে ওইসব তাঁবু।’
পিপিই, মাস্ক সবই অপ্রতুল। কিছু কিছু হাসপাতালে তাই নিয়ে বিক্ষোভরত চিকিৎসাকর্মীরা। ডা. কুমার বললেন, ‘সত্যিই তাই। মাস্ক এত অপর্যাপ্ত যে একেকটা মাস্ক এক সপ্তাহ অবধি চালাতে হচ্ছে। তারপর আরও বড় সমস্যা ভেন্টিলেটর নিয়ে। ২০ হাজার ভেন্টিলেটর আছে। আরও অন্তত ৩০ হাজার প্রয়োজন।’ সঙ্কটের এই সময়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার এই বেহাল দশায় নিউ ইয়র্ক এবং সার্বিকভাবে মার্কিন প্রশাসনকে দুষছেন ডা. কুমার। তার কথায়, ‘ভেন্টিলেটর অতি জরুরি বস্তু। বাড়তি কিছু থাকাই উচিত। সাধারণ বুদ্ধি তো তাই বলে। গাড়ি চালাতে গেলে যেমন একটি বাড়তি চাকা রাখা উচিত, ঠিক তেমনই।’
যোগ করেছেন, ‘মেয়র আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারতেন। নিউ ইয়র্ক এমন ঘোর দুর্দিন দেখেছিল ৯/১১–এ, যা খুব পুরনো ঘটনা নয়। তবু শিক্ষা হয়নি। সবাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষ দিচ্ছেন। বলছেন, উনি ভাল কাজ করছেন না। তবে নিউ ইয়র্কের মতো শহরে ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সির জন্য প্রস্তুতি থাকবে না কেন?’
অনেক অভিবাসীর বাস নিউ ইয়র্ক। পর্যটনস্থল হিসেবেও বিপুল জনপ্রিয়। সেটা করোনার কোপে পড়ার একটা বড় কারণ। আরেকটা কারণ এর জনঘনত্ব। প্রচুর আবাসন এবং পরিবহণের উপস্থিতি।
সূত্র : আজকাল