ভারত মহাসাগরে চীনের প্রস্তুতি কতটা?
ভারত মহাসাগরে চীনের প্রস্তুতি কতটা? - সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি। ব্যক্তিগতভাবে ভারতকে আশ্বস্ত করা যে প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে রক্ষাপ্রাচীর হিসেবে গ্রহণ করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন, ভারত ও পাকিস্তানের সাথে যুকত্রাষ্ট্রের সম্পর্কে বোধগম্য পরিবর্তন বেশ কিছু সূচকে বোঝা যায়। মার্কিন দাদাগিরিতেই ভারত ইসরাইল ও সৌদি আরবের সাথে জোট বেঁধেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতে ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধ করেছে ভারত। ভারতকে নিজের কক্ষপুটে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রাশিয়ার এস-৪০০ সিস্টেমের বিকল্প হিসেবে ভারতের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারের (প্রতি ইউনিট) টার্মিনাল হাই আলটিটুট এরিয়া ডিফেন্স (থাড) ও প্যাট্রিয়ট অ্যাডভান্সড ক্যাপাবিলিটি (প্যাক-৩) ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যেই ১৫ বিলিয়ন ডলারে ৪৪টি থাড লঞ্চার ও ক্ষেপণাস্ত্র (প্রতিটিতে ছয়টি করে উৎক্ষেপক) কেনার চুক্তিতে সই করেছে।
অন্যদিকে ৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ৫টি এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ভারতকে খুশি রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরো অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখা, পাকিস্তানের ওপর ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের অবরোধের খাড়া ঝুলিয়ে রাখা, আইএমএফ-পাকিস্তান চুক্তিতে বাধা প্রদান ইত্যাদি।
মার্কিন মৌন সমর্থনে চীনের প্রতি আরো কঠোর হচ্ছে ভারত। গত বছর সিকিম সীমান্তের কাছে দোকলামে ৭৩ দিনের অচলাবস্থা ছিল। চীন শেষ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করতে রাজি হয়। পরে সেখানে থাকা ভারতের সুবিধাজনক অবস্থান ভণ্ডুল করতে চীন তার গোলন্দাজ বাহিনীর জন্য হাই-আলটিচুট ইলেকট্রমেগনেটিক ক্যাটাপুল্ট রকেট করে।
দোকলাম, তিব্বত, দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত মহাসাগরে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানে চীন। জাহাজবিধ্বংসী ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক বিমানচালিত ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ জিয়ান এইচ-৬কে বোমার মাধ্যমে বিমানবাহীর রণতরীর ঘাটতি পূরণ করতে চায় চীন। চীনা প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে ডিএফ-, দং-ফেং ২১। দং-ফেং ২১ হলো দুই পর্যায়ের সলিড-ফুয়েল রকেট, সিঙ্গেল-ওয়ারহেড মধ্যম পাল্লার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ডিএফ-২৬-এর একটি সংস্করণের পাল্লা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩,০০০ কিলোমিটার। চীনের রয়েছে দুটি সুপারসনিক জাহাজবিধ্বংসী ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র, ওয়াইজে-১২ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লার) ও ওয়াইজে-১৮ (যার পাল্লা ৫৪০ কিলোমিটার)। কিন্তু এগুলো মার্কিন সাবসোনিকের সাথে তুলনীয় নয়।
পরিমার্জিত করে হারপুন জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা করা হয়েছে ২৪০ কিলোমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের রেথিয়নের টোমাহক স্থল-হামলা ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ১,৬০০ কিলোমিটারের বেশি।
আর যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ভারত সাগর নিরাপদ করার কৌশল গ্রহণ করেছে। ‘ফ্রিডম টু ইউজ দি সি’ নামের পরিকল্পনা অংশ হিসেবে ইরানের চাবাহার বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ভারত। তাছাড়া সেশ্যালসের সাথে চুক্তি করে দেশটির অ্যাজামশন আইল্যান্ডে স্থাপনা নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনার। আর মরিশাসের সাথেও অ্যাঞ্জেলা আইল্যান্ডে স্থাপনা দ্বৈত ব্যবহারের চুক্তি করে। আবার ওমানর দুকম ও মোজাম্বিকের মাপাতু বন্দর ব্যবহারের চুক্তিও করেছে ভারত। আবর কালাদান মাল্টি-মডেল ট্রানজিট প্রকল্পের আওতায় মিয়ানমারের সিত্তুবি বন্দর উন্নয়নের কাজও গ্রহণ করেছে ভারত। এই প্রকল্পের আওতায় সিত্তুবি বন্দর দিয়ে নদীপথে মালামাল পরিবহন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দিয়াগো গার্সিয়ায় মার্কিন নৌঘাঁটি ও মায়োত্ত ও রিইউনিয়ন আইল্যান্ডসে ফরাসি নৌঘাঁটিতেও প্রবেশের সুযোগ আছে ভারতের।
রবাট ক্যাপলান তার গ্রন্থ মনসুন: দি ইন্ডিয়ান ওশ্যান অ্যান্ড ফিউচার অব আমেরিকান পাওয়ার-এ বলেছেন, ২১ শতকের ভূরাজনীতি হবে ভারত মহাসাগরকেন্দ্রিক। ভারত মহাসাগরের পানি পৌঁছেছে ২৮টি দেশে। এই দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৫ ভাগ, বিশ্বের মোট জিডিপির ১৯ ভাগ আছে এখানে। এখানকার পানি দিয়েই উপসাগরীয় দেশগুলোর তেল যায় চীন, জাপান ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে। এখানেই আছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত ২৩টি বন্দর।
কাশ্মির ওয়াচ