করোনার ছোবল : কী হবে খামারিদের?

নুরুল ইসলাম রইসী সিরাজগঞ্জ | Apr 01, 2020 10:17 am
করোনার ছোবল : কী হবে খামারিদের?

করোনার ছোবল : কী হবে খামারিদের? - নয়া দিগন্ত

 

করোনার প্রভাবে হুমকির মুখে পড়েছে সিরাজগঞ্জের দুগ্ধশিল্প। কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ নষ্ট হচ্ছে। ক্রেতার অভাবে অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা। এতে গরুর প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ঠিকমতো খাবার না পেয়ে এক দিকে গরুর স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, অন্য দিকে দিন দিন দুধ উৎপাদনক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং পাবনার ফরিদপুর ও বেড়া উপজেলায় বড়সর আকারে গড়ে উঠেছে দুগ্ধশিল্প। বাড়িতে বাড়িতে পালন হচ্ছে গাভী। অনেকে বড় পরিসরে খামার করেছেন। এই শিল্পে স্থানীয়দের সহযোগিতা করেছে বিভিন্ন কোম্পানি। কোম্পানিগুলো চুক্তির মাধ্যমে এলাকার বাসিন্দাদের অর্থিক জোগান দিয়ে থাকে। খামারিরা গরুর দুধ একটি নির্দিষ্ট দরে কোম্পানিকে দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করে থাকেন। এভাই গড়ে উঠেছে এখানকার দুগ্ধশিল্প। তবে করোনার প্রভাবে মিল্কভিটাসহ যেসব কোম্পানি খামারিদের কাছ থেকে দুধ নিত সে সব কোম্পানি দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এতে কোম্পানি নেয়ার পর অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে পানির দরে।

খামারিরা জানান, বাঘাবাড়ি মিল্কভিটা এলাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এর মধ্যে সোয়া লাখ থেকে দেড় লাখ লিটার দুধ নিত মিল্কভিটা। বাদ বাকি দুধ নিত প্রাণ, আকিজ গ্রুপ, আড়ংসহ বিভিন্ন কোম্পানি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব কোম্পানি সীমিত পরিমাণ দুধ নিচ্ছে। উৎপাদিত পুরো দুধ বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। এতে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে খামার মালিকদের।

শাহজাদপুরের পোতাজিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম, তোতা মিয়া ও রইচ সরদার জানান, উৎপাদিত সব দুধ বিক্রি করতে পারছেন না তারা। ফলে বাধ্য হয়ে প্রতি লিটার ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কম দামে দুধ বিক্রি করায় গাভীর দানাদার খাবার কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ফলে দুধের উৎপাদন কমে গেছে এবং গরুর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে। তারা জানান, গরুর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে পুনরায় স¦াভাবিক স্বাস্থ্যে ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে। এতে দুধ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

আলোকদিয়ার গ্রামের জিন্না সরকার বলেন, হাটবাজারে কিংবা রাস্তায়ও ক্রেতা পাচ্ছি না। এই এলাকার প্রতি বাড়িতেই দুই-চারটি করে দুধেল গাভী আছে। তাই এখানে খুচরা দুধ বিক্রির সুযোগ কম। বর্তমানে করোনা ইস্যুতে লোকজন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অনেক খামারি ইতোমধ্যেই ঋণ করে গাভির খাদ্য কিনছেন।

খামারিদের দাবি- তারা বেশি সহযোগিতা চান না। শুধু করোনার প্রভাব থাকা পর্যন্ত তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রির ব্যবস্থা অথবা গরুর জন্য সামান্য কিছু হলেও আমাদের সহযোগিতা করা হোক। এ ব্যাপারে রেশমবাড়ি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদন সমিতির পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকির জানান, দুধ বিক্রির যে অবস্থা চলছে তাতে খামারিরা চলতে পারছেন না। এ অবস্থা বেশি দিন চললে তাদের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে দুধের উৎপাদনও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রান্তিক চাষিদের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া মিল্কভিটা এবং এ এলাকার খামারিদের কথা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই শিল্পের জন্য অনুদান ঘোষণার অনুরোধ জানান তিনি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us