ভারতে লকডাউনে অভিবাসী শ্রমিকদের ঢল, করোনার ভয়াল ছোবলের শঙ্কা
ভারতে লকডাউনে অভিবাসী শ্রমিকদের ঢল, করোনার ভয়াল ছোবলের শঙ্কা - সংগৃহীত
ভারতে দেশব্যাপী করোনাভাইরাস লকডাউনের ফলে নগরীগুলোর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশাল আকারের অভিবাসন প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এর ফলে কোভিড-১৯ সবচেয়ে ভয়াবহভাবে বিস্তৃত হতে যাচ্ছে।
গত কয়েক দিনে ভারতের রাজধানী দিল্লির উপকণ্ঠের রাস্তাগুলো অভিবাসী শ্রমিকে পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তারা বাড়ি ফেরার জন্য বেসরকারি বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তাদের অনেকের মাস্ক নেই, কেউ কেউ স্কার্ভ দিয়ে তাদের মাথা ঢেকে রাখছে। আবার বিপুলসংখ্যক শ্রমিক শত শত মাইল পায়ে হেঁট তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে।
গত ২৪ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশজুড়ে ২১ দিনের ‘পূর্ণাঙ্গ’ লকডাউনের নির্দেশ দেন। দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর এই কর্মসূচি শুরু হয় ২৫ মার্চ। দেশটির ১৩০ কোটি মানুষকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকতে হবে। এই সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। সরকার মনে করে, সংক্রমণের চক্র ভাঙার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, লকডাউন মানে অনেক ভারতীয়ের জন্য ক্ষুধা, বেকারত্ব ও গৃহহীনতা।
ভারতীয় শ্রমিকদের বিপুলসংখ্যক কাজ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে। তাদের সামাজিক নিরাপত্তা আছে সামান্যই, দিন আনে দিন খায় তারা। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউনান একাডেমি অব সোস্যাল সায়েন্সেসের মাও কেজি মঙ্গলবার গ্লোবাল টাইমসকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, অন্তত তিন সপ্তাহ তাদের বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই বুঝতে পেরেই এসব শ্রমিক বাড়ি ফেরার চিন্তা করে।
জওহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বরন সিং বলেন, প্রধান প্রধান মেগাসিটিকে অবস্থানকারী শ্রমিকেরা হয় তাদের কর্মস্থলে (এগুলো এখন বন্ধ) থাকেন বা ভয়ঙ্কর অবস্থায় থাকা বস্তিগুলোতে বাস করেন।
এখন এত লোকে একসাথে রাস্তায় নেমে পড়ার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে গেছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিবাসী শ্রমিকেরা সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে বরং দল বেঁধে চলছে। তাদের অনেকে পা খালি, গায়ে জীর্ণ পোশাক। এমনকি আরো খারাপ বিষয় হলো, তারা রাস্তায় খায়, ঘুমায়, কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই।
অধিকন্তু, মাও বলেন যে সঙ্কটটির মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে সামাজিক বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় অদূর ভবিষ্রতে অস্থিরতার সৃষ্টিও হতে পারে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশটির করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যে প্রয়াস গ্রহণ নিয়েছে, এটি তাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। মাও বলেন, ভারতীয় প্রশাসন কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে বন্ধন ছিন্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, এতে ফাঁকফোঁকর রয়ে গেছে। এতে ভারত সমস্যায় পড়ছে।
সোমবার ভারতে ২২৭ জন পজেটিভ হয়েছে করোনাভাইরাসে। এটি কোনো এক দিনে হিসাবে সর্বোচ্চ। এছাড়া মারা গেছে ৫ জন। ভারতে এখন মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩০০-এর বেশি।
গ্লোবাল টাইমস