করোনার ক্ষত অর্থনীতিতে গভীর হবে কতটা?
করোনার ক্ষত অর্থনীতিতে গভীর হবে কতটা? - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকেও এটি নাড়িয়ে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এর ক্ষত গভীর হতে শুরু করেছে। জনজীবন ও স্বাস্থ্যে এর প্রভাব একবারে প্রত্যক্ষ। এই প্রভাব সাথে নিয়ে আসছে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রিক সব পর্যায়ে অর্থনৈতিক দুর্গতি। বাংলাদেশে করোনার বিস্তার ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা করা কঠিন। এক দিকে রয়েছে করোনার বিস্তার কমিয়ে দেখানোর প্রবণতা। অন্য দিকে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক বিস্তারের অপচেষ্টা। এর মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য যেসব ধারণা পাওয়া যায় তাতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এর অর্থনৈতিক অভিঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের বড় অংশজুড়েই করোনার বিষয়টি রেখেছেন। এবারের স্বাধীনতা দিবস এবং মুজিব শতবর্ষের কর্মসূচি ব্যাপকভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আগামী এপ্রিলের শুরু থেকে করোনা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রীর করোনা নিয়ে করা মন্তব্য নিয়েও নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে। তবে এসব মন্তব্য সিরিয়াসলি নেয়ার মতো নয় বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ও উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় তিনি করোনা এবং এর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং সক্রিয়।
আজকের লেখার মূল বিষয় মূলত করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব। এ ব্যাপারে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ কোনো এসেসমেন্ট এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কেবল এর প্রভাব কোন কোন ক্ষেত্রে পড়তে পারে তার ওপর অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদেরকে তাদের নিজস্ব ধারণা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলতে দেখা গেছে।
Ad by Valueimpression
সঙ্কট বিশ্বব্যাপী
করোনা কেবল বাংলাদেশের সমস্যা না হওয়ায় চীনের উহান থেকে যখন এর সূত্রপাত হয়, তখন থেকেই এর গতিবিধির ওপর নজর রেখেছেন বিশ্ব অর্থনীতির পর্যবেক্ষক এবং নীতিপ্রণেতারা। করোনাভাইরাস আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর থেকে একের পর এক দেশ নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে বিশ্ব থেকে। স্টেডিয়ামের খেলা থেকে শুরু করে বড় বড় সব বৈশ্বিক আয়োজন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কমে আসছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞার কারণে লোকসানে পড়ছে বিশ্বের এয়ারলাইন্সগুলো। ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিনই ধস নামছে প্রধান সব শেয়ারবাজারে।
জেপি মর্গান বলছে, পরপর আগামী দুই প্রান্তিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখা দেবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে। চলতি বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালের চেয়ে অর্ধেক কমে যাবে বলে জানিয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সংগঠন ওইসিডি। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিতে দুই দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলারের লোকসান ঘটাবে, যা গোটা যুক্তরাজ্যের জিডিপির সমান। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান মন্দায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সেক্রেটারি-জেনারেল অ্যাঞ্জেল গুরিয়া বিশেষভাবে সতর্ক করে দেন, করোনাভাইরাস বড় ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করে চলেছে। তিনি এটিকে ‘একবিংশ শতাব্দীর সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ধাক্কা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, এই সঙ্কট এখন মজুরিতে চলেছে, এতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে, বিশ্বজুড়ে সরবরাহের চেইন নষ্ট হয়েছে। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় হলেও এজন্য যে কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে, অর্থনীতি এক নজিরবিহীন ‘ডিপ ফ্রিজ’ অবস্থায় চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে উত্থান সহজ হবে না। সম্ভবত অর্থনীতি আগের অবস্থায় সহজে ফিরে আসবে না।
অভিঘাত বাংলাদেশে কতটা?
প্রশ্ন হলো, এই অভিঘাত বাংলাদেশের ওপর কতটা পড়বে? এর ফলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। আমদানি-রফতানি এমনকি রেমিট্যান্সও কমতে পারে, অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হতে পারে। চাকরি হারাতে পারে বহু মানুষ। আর্থিক খাতে নজিরবিহীন চাপ পড়তে পারে। দেউলিয়া হতে পারে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বিনিময় হারও অস্থিরতার শিকার হতে পারে। নতুন বছরের বাজেট তৈরি করা সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হতে পারে।
অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ বর্তমান অর্থবছরের সাড়ে আট মাসের বেশি সময় পার করেছে। এর মধ্যে সামগ্রিক অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় ছয় মাসের। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাত বা আট মাসের তথ্য পাওয়া যায়।
চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের বিষয়টি বিশেষভাবে সামনে আনা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে সঙ্কটজনক দিকটি হলো রাজস্ব আয়। ২০১৯ অর্থবছরে নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রেকর্ড পরিমাণে ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় চলতি ২০২০ অর্থবছরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছিল ৫০ শতাংশ। এর বিপরীতে ডিসেম্বর শেষে মোট রাজস্ব আহরণ বেড়েছে মাত্র ৫.৬ শতাংশ। কর রাজস্বের একটি হিসাব জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া যায়, যেখানে বছরের শুরুর ৫০.৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সারা বছর যে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ছয় মাসে তার মাত্র ৩২.২ শতাংশ আদায় হয়েছে। কোনো খাতই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারেকাছেও যায়নি।
ফেব্রুয়ারি মাস থেকে করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করে অর্থনীতিতে। ফলে শেষ ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আশা করার কোনো কারণই নেই। বর্তমান বাস্তবতা সামনে রেখে অতি আশাবাদী চিত্র অনুসারেও অর্থবছর শেষে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে যেতে পারে। এর ফলে গত চার দশকে চলতি মূল্যেই বাজেট বরাদ্দ কমে যাওয়ার রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে ২০২১ অর্থবছরে। অবশ্য স্বপ্নকল্পনার মিশেল দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হলে ভিন্ন কথা।
ছয় মাসের ভালো বৈশ্বিক পরিস্থিতি থাকাকালে বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন চিত্র সামনে রাখলে উদ্বেগ আরো স্পষ্ট হবে। এ সময় ২৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি ঘাটতি অর্থায়ন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ হাজার কোটি টাকার মতো। এ সময়ে আগের বছরের তুলনায় বিদেশী উৎসের ঘাটতি অর্থায়ন বৃদ্ধি পাওয়ার পরও শুধু ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতি অর্থায়ন করা হয়েছে ৩১ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল মাত্র সাত হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষার্ধ্বে রাজস্ব আহরণ যেমন কমছে, সেই সাথে সরকার চালাতে এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতেও ব্যাংক খাত অথবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর টাকা ধার নিয়ে খরচ করার কোনো বিকল্প সরকারের সামনে থাকছে না।
এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে গত তিন-চার দশকে সরকারকে পড়তে হয়েছে বলে জানা যায় না।
বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব
করোনার বিস্তারজনিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৪.৭৯ শতাংশ কমে ২৬ হাজার ২৪২ কোটি ডলারে নেমেছে। অর্থবছরের শেষ চার মাসের অবস্থা খুবই খারাপ যাবে। এ সময় বাংলাদেশের পোশাক রফতানির বাজার ইউরোপ-আমেরিকায় দ্রুত করোনা বিস্তারের কারণে অনেকটাই অবরুদ্ধ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিলিয়ন ডলারের উপরে রফতানি আদেশ বাতিল হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক কথায় বলা যায়, এবার রফতানির নেতিবাচক রেকর্ড স্থাপিত হতে যাচ্ছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস এবং লকডাউনের মতো বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমদানিও কমে যাচ্ছে। অর্থবছরের সাত মাসে আমদানি সাড়ে ৪ শতাংশের মতো কমে সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। বর্তমান প্রবণতা অনুসারে অর্থবছর শেষে এটি আরো কমে ঋণাত্মক ১০ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
বৈদেশিক খাতে একমাত্র আশাবাদের চিত্রটি ছিল রেমিট্যান্সের। অর্থবছরের আট মাসে ২০ শতাংশের বেশি রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্সের উৎস দেশগুলোতে করোনার আঘাত হানা আর তেলের দাম ৬০ ভাগ কমে যাওয়ার কারণে শেষ চার মাসে রেমিট্যান্সের আয়ও কমে যেতে পারে।
এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওপর চাপ বাড়তে পারে। এর মধ্যে সরকারের ওপর বিনিময় হারকে পর্যায়ক্রমে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেয়ার চাপ বাড়ছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকে। করোনা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আর্থিক সহায়তা পেতে হলে তাদের শর্ত মানার কোনো বিকল্প থাকবে না সরকারের সামনে। আইএমএফের হিসাব অনুসারে, প্রকৃত বিনিময় হার অনুযায়ী ডলারের বিপরীতে টাকার কার্যকর দাম ১১৫ থেকে ১২০ টাকা হওয়া উচিত।
আর্থিক খাতের অবস্থা
করোনাভাইরাসের একটি প্রবণতা হলোÑ আগে থেকে যেসব মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মৃত্যু ঘটার হার বেশি। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল আগে থেকেই কম। ব্যাংক খাত থেকে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা বা এক-পঞ্চমাংশ ঋণ ব্যাংক পরিচালকরা পারস্পরিক যোগসাজশের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন বলে সংসদে তথ্য দেয়া হয়েছে। বেনামে তারা যে অর্থ তুলেছেন তার পরিমাণও সমান বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। একটি গ্রুপ এককভাবেই এক লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যাংক সিস্টেম থেকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এই অবস্থায় করোনার আঘাত ব্যাংক খাতে পড়া শুরু হলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটি শঙ্কার বিষয় হয়ে গেছে।
এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতির অজুহাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৬ মাস খেলাপি ঋণের হিসাব স্থগিত করেছে। এতে প্রকৃতপক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তারা সহায়তা পাবেন। তবে একই সাথে যারা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নামে বেনামে টাকা তুলে নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাদের হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরত দেয়ার চাপ আর থাকবে না। সরিয়ে নেয়া তহবিল গোছগাছ করার জন্যও একটি বড় সময় তারা পেয়ে যাবেন। আর এর প্রভাব পড়বে ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য ও সক্ষমতার ওপর।
এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর তীব্র তারল্য সঙ্কট যাতে এসব প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে না দেয় তার জন্য নানা ইন্সট্রুমেন্টের মাধ্যমে উদার হাতে টাকা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একজন পর্যবেক্ষকের মূল্যায়ন অনুসারে, এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি হলো কোরামিন দিয়ে ব্যাংকগুলোর পতন ঠেকিয়ে রাখা। এর প্রভাব দেখা যাবে জরুরি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবসান শুরু হলে।
করোনার ক্ষত কতটা গভীর হবে?
করোনাসংক্রমণের প্রভাব প্রতিক্রিয়া কোথায় গিয়ে ঠেকে তার হিসাব নিকাশ বা গবেষণা সেভাবে নেই। তবে এর মধ্যে করোনার সম্ভাব্য বিস্তার সম্পর্কে একটি একাডেমিক গবেষণার ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে দেয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেল্থ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেল্থ ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের যৌথ এই সমীক্ষা রিপোর্টে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রকৃত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কত, আগামীতে সংখ্যাটি কিভাবে বাড়তে পারে এবং কতজন রোগীর মৃত্যু হতে পারে তার সম্ভাব্য একটি রূপরেখা দেয়া হয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনা মহামারীতে আট কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার ১৬১ ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। যার মধ্যে ৩৩ লাখ সাত হাজার ৩৯৩ জন রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। ছয় লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৫ জন রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে। আর পাঁচ লাখ সাত হাজার ৪৪২ জন রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
এতে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের কোভিড-১৯ রেসপন্স টিমের সাম্প্রতিককালের খুবই প্রভাবশালী একটি রিপোর্টের মডেল ও বাংলাদেশের জনমিতির তথ্য ব্যবহার করে ফাইন্ডিংস বা ফলাফল বের করা হয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের যে রিসার্চের ভিত্তিতে রিপোর্টটি করা হয়েছে তা পাশ্চাত্যের অনেকগুলো দেশে ব্যবহার হয়েছে। এই রিপোর্টের পরে বরিস জনসন হেরড ইমিউনিটি তত্ত্ব থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন। আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক করোনা নিয়ে ভাবনা পরিবর্তনেও এই রিপোর্টটি ভূমিকা রেখেছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নীতি প্রণেতারা যেন এই এক্সপোনেন্সিয়াল গ্রোথ এবং সেইভাবে ভাইরাসের বিস্তারের সম্ভাবনা মাথায় রেখে পলিসিগুলো গ্রহণ করেন এবং কোভিড-১৯ ভাইরাস এই মডেল অনুসারে বিস্তার লাভ করার আগে থেকেই যেন তাকে থামানো যায়।
বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত প্রণেতারা এই রিপোর্ট এবং মডেলটিকে সিরিয়াসলি নেবেন কি না বলা মুশকিল। তবে এটাকে সামনে রেখে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত। এর মধ্যে আইইডিসিআর’র পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বীকার করেছেন, করোনাভাইরাসের কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের বাস্তবতা উপরে উল্লিখিত প্রক্ষেপণ অনুসারে না হলেও তা অর্থনীতির ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।
সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা
করোনার শঙ্কাজনক বিস্তার ঘটলে তা সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। আর এর অর্থনৈতিক প্রভাব সামাজিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে। এর মধ্যে ছোট ও মাঝারি আকারের শ্রমঘন পোশাক কারখানা বন্ধ হতে শুরু করেছে। এক-দুই মাস অবরুদ্ধ অবস্থা চললে মাঝারি এমনকি অনেক বড় পোশাক কারখানাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে করোনার কারণে বাসাবাড়িতে নি¤œবিত্ত মহিলাদের কাজ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। রিকশাচালক ও অন্যান্য দিনমজুরও কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন।
এই অবস্থায় সরকার রফতানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোর জন্য কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। নগদ সহায়তা ছাড়া এসব পোশাক কারখানা চালু রাখা কঠিন হতে পারে। অন্য দিকে নি¤œবিত্তদের জন্য নামমাত্র দামে বা বিনামূল্যে খাবার সরবরাহের ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ ভারত যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। তা না হলে আবার অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানোর মতো অবস্থা সৃষ্টি কঠিনতর হতে পারে।হ
mrkmmb@gmail.com