আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন ও কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে পার্থক্য কী?
করোনাভাইরাস - সংগৃহীত
করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই অনেকে প্রথমবারের মতো আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হচ্ছে। এখন সারা বিশ্বেই শব্দগুলো ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস রুখতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম আইসোলেশন, হোম কোয়ারেন্টাইন ও কোয়ারেন্টাইন।
মানুষকে সচেতন করতে এবং এই মারণ করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাতে বহু চেষ্টা চালাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দওয়া হয়েছে কিছু গাইডলাইন, যা মেনে চললেই কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করতে পারব নিজেকে ও দেশকে। তাই, অবহেলা না করে সঠিকভাবে মানতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া একের পর এক নির্দেশ।
ভালো করে হাত ধোয়া থেকে শুরু করে নিজেকে গৃহবন্দি রাখা, এই প্রত্যেকটি স্টেপ যত্ন নিয়ে করতে হবে আমাদের। তবেই হয়তো আটকানো যাবে করোনাভাইরাসকে। বর্তমানে হাত ধোয়া, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি ব্যবহারের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার জানিয়েছে যে, সকল মানুষকেই গৃহবন্দি অবস্থায় থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন, হোম কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু, অনেক মানুষের কাছে এই তিনটি শব্দের মানে অজানা। তবে চলুন, দেখে নেয়া যাক এই তিন শব্দের প্রকৃত অর্থ কী এবং এদের মধ্যে ফারাক কোথায়?
কোয়ারেন্টাইন
কোয়ারেন্টাইন-এর সহজ অর্থ হলো, সংক্রামক রোগের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য কোনো ব্যক্তির পৃথকীকরণ। অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তির শরীরে রোগটি বাসা বেঁধেছে কি না বা সে আক্রান্ত হয়েছে কি না এটা বুঝতেই ওই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। অন্য রোগীর কথা ভেবেই কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা কখনো হাসপাতালে করা হয় না, করোনা হতে পারে এমন ব্যক্তিকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন পয়েন্টে রাখা হয়।
করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পরেই তার উপসর্গ সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় না। সপ্তাহ খানেক কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই ভাইরাসটি শরীরের মধ্যে থাকতে পারে। কোনো ব্যাক্তি করোনা আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে বা করোনা আক্রান্ত কোনও দেশ ঘুরে এলে কোভিড-১৯ তার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। সেক্ষেত্রে সে করোনা পজিটিভ কি না তা জানতে তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইন পয়েন্ট খোলা হয়। এখানে সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তিকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোনো ওষুধপত্র ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বাড়ির লোকের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা থাকে।
হোম কোয়ারেন্টাইন
কোয়ারেন্টাইন এর সব নিয়ম মেনে কোনো ব্যক্তি যখন নিজেকে নিজের বাড়িতেই আলাদা করে রাখেন তখন তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে। কোনো আক্রান্ত দেশ ঘুরে এলে বা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সেই ব্যাক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১৪ দিন ধরে তাকে আলাদা ঘরে রাখা হয়। কোভিড-১৯ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে কি না তা বুঝে নিতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এক্ষেত্রেও কেবলমাত্র স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া কোনো রকম ওষুধ দেয়া হয় না এবং কাউকে সেই ব্যক্তির কাছে ঘেঁষতে দেয়া হয় না।
আইসোলেশন
কানো শরীরে যদি করোনার লক্ষণসহ সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হয় তবে সেই ব্যক্তিকে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আইসোলেশনে পাঠানো হয়। হাসপাতলে সম্পূর্ণ আলাদা জায়গায় আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়। ১৪ দিনের মেয়াদে চিকিৎসক ও নার্সদের তত্ত্বাবধানে এই পর্যবেক্ষণ চলে। রোগের প্রকৃতি দেখে এই মেয়াদ বাড়তেও পারে।
আইসোলেশনে থাকার সময় রোগীকে যেমন বাইরে বেরোতে দেয়া হয় না, তেমনি বাইরের কোনও ব্যক্তিকে রোগীর সঙ্গে দেখা করতেও দেওয়া হয় না। এই রোগের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এরকম কিছু ওষুধ ও খাবার দিয়ে রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। যেহেতু এই রোগের কোনো প্রতিষেধক নেই তাই কিছু অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর হার অত্যন্ত কম (৩-৪%)। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অথচ সংক্রমণের ব্যাপ্তি বেশি তাদের সুস্থ হয়ে ওঠার প্রবণতা কম থাকে। অপরপক্ষে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং সংক্রমণের ব্যাপ্তি কম তারা এই পদ্ধতিতে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
সূত্র : বোল্ডস্কাই