করোনাভাইরাস ও বাংলাদেশ
করোনাভাইরাস - ছবি : সংগ্রহ
সারা দুনিয়া যখন ভয়ে থরথর করে কাঁপে, তখন বাঙালি কিভাবে সাহস দেখিয়ে বুক চাপড়িয়ে হু-হ্যাঁ গর্জন করে তার একটি বাস্তব উদাহরণ লিখে গেছেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজ। দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সাথে তিনি সুবে বাংলায় এসেছিলেন সেই মধ্যযুগে। তার লিখিত অমর গ্রন্থ তারিখই ফিরোজ শাহীতে তিনি আবু বঙ্গালা অর্থাৎ বাঙালিদের পিতা সম্পর্কে যে রম্য কথা লিখে গেছেন তা কালের বিচারে বাঙালি জাতির জন্য এক মহাদলিলে পরিণত হয়েছে। ভয়ের সময় বাঙালি যেমন বিরূপ আচরণ করে তেমনি আনন্দ কিংবা বিষাদের সময়গুলোতে তাদের আচরণ খুবই অদ্ভুত প্রকৃতির হয়ে থাকে। বাংলা প্রবাদ প্রবচনে হর্ষে বিষাদ, বাড়া ভাতে ছাই, কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ ইত্যাদির বাহার দেখলেই বাঙালির রুচিবোধ এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আমাদের দেশের প্রকৃতি-পরিবেশ এবং প্রাণীকুলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বাংলা সাহিত্যের অমর কবি ডিএল রায় তার একটি বিখ্যাত গানে সে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন, তা এক কথায় অনন্য। আমরা কমবেশি সবাই গানটি শুনেছি, কিন্তু গানের মধ্যে কবি যে স্যাটায়ার করেছেন অথবা প্রশংসার ছলে যে তিরস্কার করেছেন তা লক্ষ করার মতো অন্তর্দৃষ্টি খুব কম লোকের মধ্যেই দেখা যায়। সেই বিখ্যাত গানের প্রথম চরণ হলো, ধন-ধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা...। কবি তার গানে বলেছেন, আমাদের এই পৃথিবী ধনরাজি-ফসলাদি এবং বাহারি ফুলে শোভিত। সেই পৃথিবীর মধ্যে সকল দেশের রানী হলো আমাদের দেশ যা কিনা একই সঙ্গে সকলের মধ্যে সেরা। কবির দৃষ্টিতে কেন সেরা সেটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, দেশটি অতীতের স্মৃতি ঘিরে থাকতে এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখতে যেভাবে ব্যস্ত থাকে তাতে তাদের পক্ষে বর্তমান নিয়ে চিন্তা করার সময় থাকে না। এই জন্য ডিএল রায় মনে করেন যে, এমন দেশ আর পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
ডিএল রায় বাংলার আকাশের চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার উজ্জ্বলতার ছবি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাংলার আকাশের মতো বিদ্যুৎ চমকায় না। এ দেশের আকাশে যেভাবে ক্ষণে ক্ষণে কালো মেঘ ভর করে এবং কালবৈশাখীর জন্ম দেয় তা অন্য কোথাও দেখা যায় না। আকাশে যখন বিদ্যুৎ চমকায় কালবৈশাখীর কালো মেঘ এবং ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে পাখিরা যখন আর্তচিৎকার করে তখন আমরা সেগুলোকে পাখির কূজন বা কলকাকলি মনে করে মনের আনন্দে ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর সব কিছু যখন শান্ত হয়ে যায়- পাখিদের ভয় দূর হয় এবং কালো মেঘের ছায়া দূরীভূত হয়ে সুবেহ সাদিক দেখা দেয়, তখন পাখিরা মনের আনন্দে যে গান শুরু করে আমরা সেই গান শুনে জেগে উঠি।
আমাদের দেশের নদ-নদী, পাহাড়, শস্যক্ষেত এবং বাতাসের বর্ণনাতেও কবি নিদারুণ স্যাটায়ার করেছেন। তার মতে, এ দেশের নদীর মতো স্নিগ্ধতা যেমন দুনিয়ার কোথাও নেই তেমনি ধূম্র পাহাড় অন্য কোথাও দেখা যায় না। বাংলার প্রমত্তা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধানতম নদ-নদীর দুটো প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো বর্ষা মৌসুমে যৌবনপ্রাপ্ত হলে নিজেদের দু’কূল ভেঙে মহাতাণ্ডব চালায় এবং প্রায় প্রতি বছরই দু’কূল প্লাবিত করে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি করে। বাংলার নদ-নদীর এই ভয়ঙ্কর অবস্থা এবং শীতকালে অর্থাৎ যখন ক্ষমতা থাকে না তখন একেবারে চুপচাপ হয়ে যাওয়ার মধ্যে কবি পৃথিবীর অন্যসব বিখ্যাত নদী যেমন সিন্ধু, দানিয়ুব, রাইন, নীল বা হোয়াংহোর কোনো মিল খুঁজে পাননি।
বাংলার ফুল-ফল-পাখি এবং মধুখেকো অলিদের চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে কবি বলেন, যখন গাছের শাখাগুলো ফুলে ফুলে ভরে যায় এবং সেই দৃশ্য দেখে বনের নিঃস্বার্থ পাখিরা গান গাইতে থাকে, তখন মধুলোভী অলি গুন গুন শব্দে গুঞ্জরিয়া দলে দলে ধেয়ে আসতে থাকে। মৌ-লোভী পতঙ্গ তাদের হুল উঁচিয়ে মনের আনন্দে মধু খেয়ে উদর পূর্তি করতে থাকে এবং পেট ভরে গেলে এই পতঙ্গগুলো যেভাবে ফুলের ওপর শয্যা পেতে ঘুমিয়ে পড়ে সেই দৃশ্য কবি পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাননি। এ দেশের ধূম্র পাহাড় অর্থাৎ পাহাড়কে কেন্দ্র করে যে ধূম্রজাল অথবা পাহাড় থেকে বের হওয়া ধোঁয়া কিংবা হয়তো পাহাড়ের কোনো অস্তিত্বই নেই- অথচ ধোঁয়া দ্বারা তৈরি অর্থাৎ ভুয়া জিনিসকে পাহাড় মনে করে সেই পাহাড়ের পদতলে নিজেকে বিসর্জন দেয়ার জন্য মানুষের যে আকুতি, সেই আকুতি বোঝাতে গিয়ে কবি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তা বোঝার ক্ষমতা ঠিক কতজনের রয়েছে সেটি আমি জানি না।
বাংলার আমজনতা, নেতা-নেত্রী, আকাশ-বাতাস-পাহাড়-সমুদ্রকে নিয়ে কবি ডিএল রায়, ঐতিহাসিক মিনহাজুস সিরাজ প্রমুখ বরেণ্য ব্যক্তি যেসব মূল্যবান কথাবার্তা বলে গেছেন, তা ২০২০ সালে এসে অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। কারণ বর্তমানের যে সমাজচিত্র তাতে মনে হয়, বাংলাদেশ পৃথিবীর সব দেশ থেকে আলাদা একটি দ্বীপ। অন্যান্য দেশের লোকজন যা করে তা এই দেশের লোকজন প্রায়ই করে না। অন্যান্য দেশের লোকজন যা বলে কিংবা যেভাবে চিন্তা করে আমরা ওসবের ধারের কাছ দিয়েও হাঁটি না। আমরা বলি, আমরাই শ্রেষ্ঠ! আমরাই সব বুঝি- বাকিরা সব হারাম। আমাদের এই জাতীয় বৈশিষ্ট্য এবং নৈতিক ব্যাপার-স্যাপার যে কতটা নির্মম বাস্তব তা বোঝা যাবে যদি কেউ বর্তমান সময়ের বৈশ্বিক সঙ্কট করোনা নিয়ে জাতীয় উদাসীনতা এবং করোনাসংক্রান্ত ভয়-ভীতি, দুঃখ-কষ্ট-বেদনা এবং হতাশার প্রতি সমব্যথী না হয়ে বিভিন্ন রঙ তামাশা-আলোর ঝলকানি-আতশবাজি-পুতুল নাচ থেকে শুরু করে অন্যান্য বাহারি নৃত্যের তেহারি রঙঢং সঙ দেখার চেষ্টা করেন।
করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বিশ্বের নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশগুলোতে জুমার নামাজে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। মুসলমানদের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পবিত্রময় মসজিদ আল আকসা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য হাজার হাজার মসজিদ বন্ধ রয়েছে। পবিত্র মক্কা ও মদিনার খানায়ে কাবা ও মসজিদে নববীতে প্রবেশে সীমাহীন কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অন্য দিকে, বাংলাদেশের কিছু লোক স্বপ্ন দেখেছে যে, থানকুনি পাতা খেলে করোনা হবে না এবং সেই কথা শোনার পর মানুষজন গভীর রাতে বন-বাদাড়ে গিয়ে থানকুনি পাতার বংশ সমূলে নির্মূল করে ফেলছে। বিশ্বের সবচেয়ে সুসভ্য এবং নিরাপদ দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার দেশের করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রতি সমব্যথী হয়ে যেভাবে অশ্রু বিসর্জন করেছেন তা বিশ্ববিবেককে নাড়া দিচ্ছে। ইতালির রাজধানীর সবচেয়ে বড় হাসপাতালের পরিচালক যখন বিবিসি-সিএনএন-আলজাজিরা প্রভৃতি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং বলেন, বাঁচব কি না জানি না, তবে বেঁচে থাকলে এমন নির্মম অভিজ্ঞতা কোনো দিন ভুলব না- অধিকন্তু একধরনের মানসিক বিকলাঙ্গতা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্নের জবাবে ওই চিকিৎসক জানান, পুরো ইতালির চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে যখন একাধিক মরণাপন্ন রোগী আমাদের সামনে আসছে, যাদের মধ্য থেকে আমরা মাত্র কয়েকজনকে চিকিৎসা দিতে পারছি। বাকিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে হচ্ছে। একজন চিকিৎসকের জীবনে এর চেয়ে বেদনা এবং এর চেয়ে ব্যর্থতার বিষয় হতে পারে না- যখন তাকে দু’জন জীবিত রোগীর মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হয় এভাবে যে, তুমি বাঁচ এবং অন্যজনকে বলতে হয় তুমি মরো!
ইতালির মিলানের প্রধান হাসপাতালের পরিচালক যখন উল্লিখিত কথা বলে অঝোরে কাঁদছিলেন তখন আমাদের দেশের কিছু লোক দাঁত বের করে যেভাবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, নির্ভীকতা, সক্ষমতা এবং কুচ পরোয়া নেই জাতীয় হম্বিতম্বি করছিল, তখন আমার মনে কী হয়েছিল তা যেমন এখানে লিখতে পারব না, তেমনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি টিডিক্কার মা যে ভাষায় খিস্তিখেউর করেছিলেন তাও প্রকাশযোগ্য নয়।
ইতালি ছাড়া ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স করোনার আক্রমণে যেভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তা নাকি তাদের জাতীয় জীবনে এর আগে ঘটেনি। অর্থাৎ দেশ দু’টির পাঁচ হাজার বছরের যুদ্ধ-মহাযুদ্ধ, দাঙ্গা, মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দা ইত্যাদি সব কিছুর ক্ষতিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে করোনার প্রলয়। দেশ দুটো গত ৫০০ বছর ধরে তাদের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ব্যবহার করে সারা দুনিয়া থেকে যে ধনসম্পদ সংগ্রহ করেছিল তা নাকি আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান-সভ্যতা এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের যেসব বিষয়াদি নিয়ে তারা বড়াই করত সেসব দম্ভ আজ ধুলায় মিশে গেছে। ব্রিটেন তাদের রাজপরিবারের সদস্যদের ঐতিহ্যবাহী বাকিংহাম প্যালেস থেকে সরিয়ে করোনা মোকাবেলায় বিশেষভাবে প্রস্তুত করা উইন্ডসর প্রাসাদের কয়েকটি কক্ষে স্থানান্তর করেছে, যা গত ৭০০-৮০০ বছরের ইতিহাসে ব্রিটেনে ঘটেনি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোন রাজা রানী সপরিবারে বাকিংহাম প্রাসাদ ত্যাগ করেননি।
করোনার প্রকোপে ফ্রান্স এতটাই অস্থির হয়ে পড়েছে, যার কারণে দেশটির জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে বারবার জনসম্মুখে এসে জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দিতে হচ্ছে। ফ্রান্সের সুবিখ্যাত বাস্তিল দুর্গের পতনের আগে ফ্রান্সজুড়ে যে হইচই শুরু হয়েছিল তার চেয়েও ভীতিকর পরিস্থিতি এখন ফ্রান্সকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অন্য দিকে, মার্কিন মুলুকের প্রেসিডেন্ট শুরুর দিকে করোনাকে পাত্তা দিতে চাননি। তিনিও বাংলাদেশের নেতা, নেত্রী ও কবিদের মতো বলেছিলেন, কিছু হবে না- আমরাই সেরা। কিন্তু নিজের প্রিয়কন্যা ইভাঙ্কা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। এরপর একের পর এক মার্কিন নগরী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে কয়েকটি নগরীতে সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় প্রচ- চাপের মুখে পড়েন এবং নিজের অতীত কর্ম অর্থাৎ যথাসময়ে আগাম ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
করোনার আক্রমণে ইউরোপ-আমেরিকায় মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং তা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। করোনার রোগীদের মেরে ফেলার জন্য সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে। এ কারণে কিছু শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং কিছু শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। বড় বড় শপিংমল, সুপার শপ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার মুদির দোকান পর্যন্ত খালি হয়ে গেছে অর্থাৎ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সেখানে নেই। যে যার মতো করে মজুদ করেছে। প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজারমূল্যের চেয়ে তিন-চার গুণ অথবা ক্ষেত্রবিশেষে বিশ গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে যা গত পঞ্চাশ বছরে একবারও ঘটেনি- এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও নয়। ক্রেতারা দোকানে গিয়ে পণ্য ক্রয়ের জন্য নিজেরা মারামারি করছে এবং ঘুষাঘুষি করে একে অপরের নাক ফাটিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংক, বীমা, ইন্স্যুরেন্স, বিনোদন, টিভি-মিডিয়া, সিনেমা সব কিছুতে করোনা এমনভাবে আক্রমণ করেছে যার ফলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
উপরিউক্ত অবস্থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মহা মহা দুর্যোগ বলে ঘোষণা করেছে। সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর কোনো দুর্যোগকে মহাদুর্যোগ বলে এ যাবৎকালে আখ্যায়িত করেনি। করোনার প্রভাবে তেলের দাম এতটা নিম্নগামী হয়েছে যেটা গত সত্তর বছরে হয়নি। পৃথিবীর সব শেয়ারবাজার, সব ব্যাংকিং ব্যবস্থা, সব ব্যবসা-বাণিজ্য একসাথে ক্রমাগতভাবে পতনের অতলান্তে ডুবে মরার জন্য ছুটছে এবং সেই দৃশ্য দেখে রাজা-বাদশাহ, আমির-ওমরাহ, ধনী-দরিদ্র, চোর-ডাকাত, মদ্যপ থেকে শুরু করে সাধু সন্ন্যাসী একই ভাষায় কথা বলছে এবং একই সুরে কাঁদছে। ফলে পুরো দুনিয়ার মাশরেক থেকে মাগরেব পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জনপদে যে বিষাদময় ভীতিকর এবং অসহায় অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা মানবজাতির ইতিহাসে এর আগে ঘটেনি। পুরো পৃথিবীর অবস্থা যখন এমনতর তখন আমরা নৃত্যগীতে মশগুল থেকে আতশবাজি করে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করছি এবং সেই আনন্দ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। সুতরাং আমাদের এই চরিত্র নিয়ে ডিএল রায় যদি লেখেন- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না’ক তুমি- সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি... পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি, কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি, গুঞ্জরিয়া আসে অলি, পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে, তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে- তবে আমরা আতশবাজি ছাড়া আর কিইবা করতে পারি!
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য