সালমান-উত্তর যুগের জন্য প্রস্তুতি?

মাসুম খলিলী | Mar 19, 2020 06:01 pm
সালমান-উত্তর যুগের জন্য প্রস্তুতি?

সালমান-উত্তর যুগের জন্য প্রস্তুতি? - ছবি : সংগ্রহ

 

শুক্রবারের গ্রেফতার মূলত বর্তমান বাদশাহ সালমানের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগকে আবার সামনে নিয়ে এসেছে। তার অবনতিশীল স্বাস্থ্য এবং বয়স নিয়ে উদ্বেগ সময়ের সাথে আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, সালমান-উত্তর সিংহাসনে আরোহণের ‘খেলা’ সম্ভবত শুরু হয়ে গেছে।

সৌদি সংবিধানের ৫ নাম্বার অনুচ্ছেদটি সৌদি শাসনের কাঠামোকে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাদশাহ আবদুল আজিজের ছেলেদের সৌদি সিংহাসনের ব্যাপারে প্রাথমিক অধিকার রয়েছে। মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) ক্রাউন প্রিন্স নিযুক্ত করা হলেও সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের অধীনে আবদুল আজিজের জীবিত ছেলে আহমদ বিন আবদুল আজিজ আইনিভাবে সিংহাসনের দাবি করতে পারেন বলেই মনে হয়।

সাম্প্রতিক গ্রেফতারের দ্বিতীয় দিকটি হলো, সৌদি অভ্যন্তরীণ নীতিতে আমূল পরিবর্তনে নেতৃত্বদানকারী মোহাম্মদ বিন সালমান রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজপরিবারে যে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছিল, তা সম্ভবত বিপর্যস্ত করে তুলেছেন আর এটি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে একটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও এটি রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভারসাম্যের রাজনীতির ভিত্তিতে তৈরি। এই ভারসাম্য নীতি অনুসারে, সমস্ত ক্ষমতা বাদশাহর হাতে পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত নয়। গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং সেনাবাহিনী কমান্ড, গভর্নরশিপ, মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী পদে নিযুক্তি প্রভৃতি সৌদি বাদশাহ এবং পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে।

সৌদি ব্যবস্থাটিকে মূলত এক সময় ব্যক্তি রাজতন্ত্রের বিপরীতে বংশীয় গণতন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করা হতো। রাজবংশের ১০ হাজারেরও বেশি সদস্য সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রভাবশালী হওয়ার জন্য লড়াই করেন। তারা গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতো আবদুল আজিজের বিভিন্ন স্ত্রীর সন্তানের ভিত্তিতে ৩৪টি শাখায় বিভক্ত।

এই ব্যবস্থায়, রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ছাড় এবং জোটের মাধ্যমে সম্ভাব্য সঙ্কটময় পরিস্থিতি সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হতো। অন্য দিকে সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত আলেম-ওলামা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বদাই প্রভাবশালী ছিলেন।

২০১৫ সালে তদানীন্তন বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর সাথে সাথে সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমবিএসের ক্রমবর্ধমান শক্তি এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করে যার, ফলে সৌদি শাসনব্যবস্থার দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাদ পড়ে যায়। এর একটি হলো, রাজপরিবারের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ আর দ্বিতীয়টি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ওলামা প্রভাব।

সালমান বিন আবদুল আজিজের কাছ থেকে এমবিএসের হাতের ক্ষমতার ‘মসৃণ পরিবর্তন’ নিশ্চিত করার জন্য, আল ওয়ালিদ বিন তালাল, মুতাব বিন আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং তাদের সমর্থিত সিংহাসনের পক্ষে শক্তিশালী- এমন অনেক শক্তিশালী রাজপরিবার সদস্যকে এর আগে গ্রেফতারের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে ভয় দেখানো হয়েছিল। এর ফলে এমবিএসের হাতে ক্ষমতার একচেটিয়াকরণ ঘটে আর দেশে অতীতে রাজপরিবারের যে আন্তঃভারসাম্য ছিল তা আর বজায় থাকেনি।

mrkmmb@gmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us