নতুন বাদশাহ কিভাবে হয়?
বাদশাহর সাথে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি : সংগ্রহ
তাত্ত্বিকভাবে, বর্তমান বাদশাহ সালমানের মৃত্যুর পরে অথবা স্বাস্থ্যগত বা অন্য সমস্যার কারণে তিনি তার দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে অতি উচ্চপর্যায়ের রাজপরিবার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটমেন্ট কাউন্সিল (অ্যালিজিয়েন্স কাউন্সিল) নতুন বাদশাহ নির্বাচন করার কথা। সবাই জানেন, আহমদ বিন আবদুল আজিজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাউন্সিল সদস্য, যিনি নতুন বাদশাহ হিসেবে এমবিএসের নির্বাচনের বিরুদ্ধে ছিলেন। আবার এমবিএসের চালু করা ‘মধ্যপন্থী’ ইসলাম নীতিটি সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রের সামাজিক বিনির্মাণ উভয় ক্ষেত্রেই ওলামার ভূমিকা ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
এখনকার মধ্যপন্থী ইসলাম নীতির কারণে ১৭৪৪ সালে প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ বিন সৌদ এবং তৎকালীন ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, তা ভেঙে পড়েছে। এটি ছিল তিন শতাব্দীর সৌদি রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ উপাদানের ভেঙে পড়া সৌদি উলামায়ে কেরামকে বেশ বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
সৌদি অভ্যন্তরীণ নীতির এই পরিবর্তনগুলো ১৯৬৪ সালে বর্তমান সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজের পরবর্তী বাদশাহ সৌদ বিন আবদুল আজিজের ক্ষেত্রে কী হয়েছিল তা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৬০-এর দশক মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এমন একটি সময় ছিল যখন মিসরীয় রাষ্ট্রপতি জামাল আব্দুন নাসেরের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক আরব জাতীয়তাবাদ সৌদি আরবসহ রক্ষণশীল আরব রাজতন্ত্রগুলোর জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমাজতন্ত্রের উত্থানের মুখে এ সময় সৌদ বিন আবদুল আজিজের অদক্ষ রাজনীতির কারণে অস্থিরতা দেখা দিলে আলেমদের সমর্থিত রাজপরিবারের সদস্যরা রাজকীয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজকে সৌদের স্থলে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। বাদশাহ ফয়সাল ঐতিহ্যগত সৌদি আলেম ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগিতা নিয়ে পরিস্থিতিকে বেশ ভালোভাবে সামাল দেন এবং সৌদি রাজতন্ত্রকে এক শক্ত ভিত্তি প্রদান করেছিলেন।
বাদশাহ ফয়সালের ক্ষমতারোহণ সৌদি রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম ঘটনা ছিল, যখন বাদশাহ জীবিত থাকাকালেই রাজপরিবারের অভ্যুত্থানে একজনকে অপসারণ করে তার পরিবর্তে অন্য একজনকে বাদশাহ করা হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বহুলপ্রতীক্ষিত পরিবর্তন করেই ফেলবেন, তা কেউ প্রত্যাশা করছেন না। তবে এর অর্থ এই নয় যে, কোনো কিছুই পরিবর্তিত হবে না। ট্রাম্পের বিদেশী মিত্রদের ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক উন্মোচনের বিষয়ে বাইডেনের ব্যক্তিগত আগ্রহ থাকবে। আর তাদের মধ্যে মোহাম্মদ বিন সালমান হতে পারেন অন্যতম। আমেরিকা সৌদি রাজতন্ত্রের পেছনে থাকতে পারে; তবে নতুন বাদশাহ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্বল্প গ্রহণযোগ্য বিন সালমানকে সমর্থন না-ও করতে পারে।
আর সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন নায়েফের মতো সিআইএর পরিচিত মিত্র আবার সামনে চলে আসতে পারেন। এমবিএস এই ঝুঁকিটিকে গ্রেফতার বা বিচারের মাধ্যমে মুছে দিতে চাইছেন বলে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বিন সালমানের জন্য এটি এক বিশাল জুয়ার মতো হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসকে সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে ট্রাম্পের মতো করে অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন না- সেটিই স্বাভাবিক হতে পারে।
আর যেখানে রাশিয়া, চীন, ইরান এবং তুরস্কের বিপরীতে মার্কিন সেনা আশ্রয়ে সৌদি রাজতন্ত্র অনেকখানি টিকে থাকছে, সেখানে আমেরিকার হিসাব-নিকাশের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ডেভিড হার্স্টের মতে, স্বল্প-দীর্ঘ কেরিয়ারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বর্তমান কার্যক্রম সবচেয়ে বড় জুয়া খেলা হয়ে যাচ্ছে। আসল সমস্যাটি হলো, বিন সালমান এবং তার পরামর্শদাতারা বোধহয় নিজের ভুলটি অনুধাবন করতে খুব ভুল করে ফেলছেন।
এই ভুলের পরিণতি কত দূর গড়ায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
mrkmmb@gmail.com