চ্যালেঞ্জের মুখে এমবিএস
এমবিএস - ছবি : সংগ্রহ
বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। আর তা দেশটিকে কোন দিকে নিয়ে যায় তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
২০২০ সালের গোড়ার দিকে বৈশ্বিক অঙ্গনের বেশ কিছু পরিবর্তন এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করে, যা সৌদি অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আঞ্চলিক ফ্রন্ট, উভয় ক্ষেত্রেই এমবিএসের হাতকে দুর্বল করে দিয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো করোনাভাইরাস হুমকি, যা চীনের উহান প্রদেশে ডিসেম্বর ২০১৯ সালে আবির্ভূত হয়ে খুব দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ধরা হলেও পরে ভাইরাসের সংক্রমণের হার এবং মৃত্যু ও আক্রান্ত সংখ্যা ক্রমবর্ধমান আকার ধারণ করায় তা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুতর উদ্বেগ নিয়ে এসেছে।
বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং জ্বালানি তেলের চাহিদার প্রাণকেন্দ্র চীনে ভাইরাসটির দ্রুত বিস্তার এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য মন্দার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণে তেলের চাহিদা প্রাচ্যের অর্থনীতিগুলোতে বিশেষত চীনে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
অধিকন্তু, চীনের তেলের চাহিদার এই মন্দা সৌদি আরবকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে, কারণ চীন তার অর্ধেক তেল উপসাগরীয় অঞ্চল থেকেই আমদানি করে থাকে। স্বল্পমেয়াদে তেলের চাহিদা পুনরুদ্ধার হওয়ার আশাও করা যাচ্ছে না।
এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক মন্দা সৌদি আরবের ওপর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। তেলের চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে এর দাম ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। আর এতে সৌদি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল। সেখান থেকে ৬০ শতাংশ দাম কমে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ৩০ ডলারে নেমে এসেছে। সৌদি আরবের জাতীয় আয়ের ৯০ শতাংশ তেলের ওপর নির্ভরশীল এবং দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা কেবল তেলের দাম ৮০ থেকে ৯০ ডলারে থাকলেই নিশ্চিত করা সম্ভব। সঙ্গত কারণেই তেলের দামের এই ধস সৌদি আরবের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
আর সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবের মোহাম্মদ বিন নায়েফের মতো সিআইএর পরিচিত মিত্র আবার সামনে চলে আসতে পারেন। এমবিএস এই ঝুঁকিটিকে গ্রেফতার বা বিচারের মাধ্যমে মুছে দিতে চাইছেন বলে মনে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক আবহাওয়ায় বিন সালমানের জন্য এটি এক বিশাল জুয়ার মতো হয়ে দাঁড়াতে পারে। ক্রাউন প্রিন্স এমবিএসকে সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে ট্রাম্পের মতো করে অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন না- সেটিই স্বাভাবিক হতে পারে।
আর যেখানে রাশিয়া, চীন, ইরান এবং তুরস্কের বিপরীতে মার্কিন সেনা আশ্রয়ে সৌদি রাজতন্ত্র অনেকখানি টিকে থাকছে, সেখানে আমেরিকার হিসাব-নিকাশের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ডেভিড হার্স্টের মতে, স্বল্প-দীর্ঘ কেরিয়ারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য বর্তমান কার্যক্রম সবচেয়ে বড় জুয়া খেলা হয়ে যাচ্ছে। আসল সমস্যাটি হলো, বিন সালমান এবং তার পরামর্শদাতারা বোধহয় নিজের ভুলটি অনুধাবন করতে খুব ভুল করে ফেলছেন।
এই ভুলের পরিণতি কত দূর গড়ায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
mrkmmb@gmail.com