কোন পথে মোদির ভারত

সৈয়দ উসামা শিরাজি | Mar 19, 2020 09:34 am
মোদি

মোদি - সংগৃহীত

 

ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের ভঙ্গুর গণতন্ত্রগুলো ভিশনহীন লোকরঞ্জনবাদের সামনে অরক্ষিত এবং তা প্রায়ই তাদের অতিগুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো থেকে ন্যূনতম পর্যায়ের বিষয়গুলোতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়াটা উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশগুলোর জন্য সম্ভবত সবচেয়ে বড় সমস্যা।
টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য উদার অর্থনীতির আদর্শ নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদি ঘৃণা আর পূর্বসংস্কার বিক্রি করতে শুরু করেছেন। ভালো বিপণনকারী হওয়ায় তিনি বেশ ভালোভাবেই ডানপন্থী হিন্দুদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তার ব্যর্থতাগুলোর বোঝার সবই মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন।
আরএসএস পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে হিন্দু রাজ প্রতিষ্ঠা করার তাদের দীর্ঘ দিনের সুপ্ত বাসনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছে।

বিজেপি-আরএসএস আঁতাত পুরো ভারতকে আগুনে ঠেলে দিচ্ছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি লজ্জা আর অবমাননা ছাড়া আর কিছুই আনেনি। নয়া দিল্লিতে আরএসএসের গুন্ডাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলায় অন্তত ৫০ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে স্থানীয় বিজেপি নেতাদের উস্কানিতে হয়েছে এই দাঙ্গা। পুরো ঘটনার সময় দিল্লি পুলিশের ভূমিকা ছিল সত্যিই নিন্দনীয়।
নিরীহ লোকজনকে রক্ষা করার বদলে তারা হামলাকারীদের সুযোগ করে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ও মূলধারার মিডিয়ায় প্রচারিত অনেক ভিডিওতে হামলাকারীদের রক্ষার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙ্গার দৃশ্য পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে।
অধিকন্তু, বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক টাইমেস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে দিল্লি পুলিশ পরিকল্পিতভাবেই বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করেছে এবং হিন্দু দাঙ্গাবাজদের যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে পুলিশকে রাজনীতিকরণের জন্য মোদি সরকারকে অভিযুক্ত করেছে। এই ঘটনাকে হিন্দু বনাম মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ বনাম সংখ্যালঘিষ্ঠ না বলে বরং খোদ দেশের জনগণের ওপর রাষ্ট্র-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদ হিসেবে অভিহিত করা যায়।
আজকের ভারত গান্ধী বা নেহরুর ভারত নয়। প্রথম দিন থেকেই উভয় নেতা বুঝতে পেরেছিলেন যে ভারত কখনো হিন্দু রাষ্ট্র ছিল না এবং হতেও পারবে না। ভারত হলো বৈচিত্র্যের দেশ। সংস্কৃতি, ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার ভিত্তিতে দেশ বিভক্ত।

ফলে কেবল বহুত্ববাদ, সাম্য, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তিতার মাধ্যমেই এক জাতি হিসেবে একীভূত হতে পারে। আর এ কারণেই প্রতিষ্ঠাতা পিতারা সেক্যুলারবাদের ওপর এই জাতির ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান এস্টালিশমেন্ট ভারতীয় সেক্যুলার বাদের মূল অবয়বটিই ধ্বংস করছে, যা জাতীয় একীভূতকরণকে মারাত্মকভাবে জখম করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভারত একটি উদীয়মান শক্তি এবং এর আন্তর্জাতিক অবস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিজেপির অদূরদর্শী নীতির কারণে। পরিবর্তিত বৈশ্বিক ক্ষমতার গতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে যে এশিয়ায় চীনকে সংযত করার জন্য ভারত হলো উদীয়মান আঞ্চলিক শক্তি। এ কারণে ভারতকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য করার জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারত যদি ইতিবাচক আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির অধিকারী না হয়,তবে তা করা সম্ভব নয়।

মোদি-অমিতের গোঁড়ামিপূর্ণ নীতির ফলে পাশ্চাত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জাতিসঙ্ঘে ভারতের বিষয়টি উত্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তৃতীয়ত, ভারতীয় মুসলিমদেরকে প্রান্তিকীকরণ মুসলিমবিশ্বে অস্বস্তির সৃষ্ট হতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলো হলো ভারতের বড় বাণিজ্য অংশীদার। উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে ভারত ৩৫ বিলিয়ন ডলর প্রবাসী আয় পেয়ে থাকে। অধিকন্তু, ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পে সৌদি আরব ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মোদির প্রতি উপসাগরীয় দেশগুলোর বর্তমান আগ্রহের কারণ হলো ব্যবসা। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য তাদেরকে নীরব থাকতে দেবে না। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়িপ এরদোগান ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে ভারতের তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং হত্যাযজ্ঞ থামাকে মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপির মুসলিমবিরোধী নীতি ভারতকে নিঃসঙ্গ করে তুলছে।

উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা ও শান্তি পূর্বশর্ত। রক্ত আর আগুন নিয়ে কোনো দেশ সমৃদ্ধির ফল পেতে পারে না। গত চার বছর ধরে ৫ থেকে ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তা নেমে গেছে ৪.৭ ভাগে। গত ছয় বছরের মধ্যে এই প্রথম এফডিআই ১ ভাগ কমে ৪৪.৩৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে সিএএবিরোধী বিক্ষোভের কারণে ভারতের ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে তিন বিলিয়ন ডলারের। মোদির আমলে ১১ মিলিয়ন ভারতীয় তাদের চাকরি হারিয়েছে। দিল্লিতে কেবল দাঙ্গায় ক্ষতি হয়েছে এক হাজার কোটি রুপির।

আর এতে কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? নিঃসন্দেহে ভারত আর তা হচ্ছে তার নিজের দেশের নেতাদের হাতেই।
মুসলিমদের কোণঠাসার অর্থ হলো ভারতীয়দেরই দমন করঅ্ এখন মুসলিমদের পালা। আগামীকাল কে হবে? দলিত, শিখ, খ্রিস্টান না জৈন?
একীভূতকরণের বদলে দমননিপীড়ন চালানোহ লে বিছিন্নতাবাদের প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এক শ্রেণী, বর্ণ, সংস্কৃতি, ধর্মের ওপর অন্যটির প্রাধান্যের ফলে ব্যবধান বাড়ে, রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল করে দেয়। আর অন্তর্ভুক্তি, সহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা, আইনের শাসন রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি প্রমাণিত হয়েছে, তারা শাসন চালানোর মতো শক্তিশালী নয়। এখনই সময় সুস্থ মস্তিষ্কের লোকজনকে ক্ষমতার করিডোরে নিয়ে আসা এবং কোনো দুর্বল লোক যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় দেশ সপ্তদশ শতকে ফিরে যাবে।

জিভিএস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us